Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাজিদের মাছধরা

| প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মু হা ম্ম দ তা রি ক জা মি ল : ফাল্গুন মাস থেকেই বিলের পানি কমতে শুরু করে। তাই বিলে মাছ ধরার ধুম পড়েছে। ঠিক এই সময়টির অপেক্ষায়ই থাকে সাজিদ। মাছ ধরতে দারুণ আনন্দ ওর।
যদিও মাছ তেমন একটা খায় না। বিলে ছোট একটি খাদ আছে ওর। জায়গাটা বাবার হলেও যেহেতু সে নিজেই খাদ খনন করেছে তাই এটি তার। কিন্তু মাছ বাবাকেই দেয়। মায়ের হাতে রান্না করা মাছগুলি সবাই মিলে খায়। ছোট ছোট ছেলেদের এমন দাবিকে বাবাদের বেশ বিনোদন দেয়।
বিলের পানি কমে এসেছে। সবাই যার যার খাদ সেচে মাছ ধরছে। সুতরাং সাজিদ বাদ যাবে ক্যান? শুক্রবার দিন সে তার খাদ সেচবে। এজন্য ফুফাতো ভাই নাসিরকে আসতে বলল।
তার আগে বৃহস্পতিবার দিন বিকেলে খাদের পাড়ে গিয়ে, খাদে কুড়া-ভুসিও দিয়ে এসেছে।
যেন খাবারের লোভে অনেক মাছ তার খাদে ঢুকে।
রাত যেন ফুরায় না। সেচার সরঞ্জামাদি তৈরি আছে। রাতে একবার স্বপ্ন দেখে চেঁচিয়ে উঠেছে বোয়াল বোয়াল বলে। ছেলের কীর্তি দেখে বাবা-মা মিটিমিটি হাসে। ফজরের আযান হলে লাফিয়ে উঠলো ঘুম থেকে। নাসিরকে নিয়ে নামাজ পড়লো।
দোয়া করল ‘হে আল্লাহ আমার খাদে অনেক মাছ পাই যেন’ কখন ফেরা হবে কে জানে? তাই পান্তাভাত খেয়ে সরঞ্জামাদি নিয়ে বিলে মেলা করল।
হাসি-খুশি, চিল্লা-পাল্লা করতে করতে খাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ওরা চলে এসেছে খাদের পাড়ে। বেশি কথা বলা যাবে না।, শব্দের আওয়াজে চতুর মাছগুলো বেড়িয়ে যেতে পারে। আস্তে আস্তে খাদের মুখটা বেঁধে ফেলল। বাঁশের
খুঁটি গেড়ে টিন ফেলে দিল।
টিনের পিছনে প্যাক দিয়ে আটকিয়ে দিল। যাতে পানির প্রচÐ চাপে বাধ ভেঙে না যায়। এবার খাদের এককোণে দাঁড়িয়ে দুজনে সমান তালে সেঁওতি চালাতে লাগলো।
পূব আকাশে সূর্যের ঝলক দিচ্ছে। আলোকরশি ছড়িয়ে পরছে প্রকৃতিতে। পাখিরা জেগে উঠেছে কিচিরমিচির শব্দে। রাতভর নীড়ে থাকা ক্ষুধার্ত বকেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসছে বিলে। মাছরাঙা গাছের ডালে ওঁৎ পেতে বসে আছে মাছ ধরবে বলে। অল্প পানিতে নাও চালানো দায় বলে, হাটু সমান পানি ভেঙে মাছ ধরতে নেমেছে জেলেরা। রাতভর খোয়ারে আবদ্ধ থাকা হাঁসগুলো খাবার অন্বেষণে ছুটে এসেছে বিলে।
আলোর ছোঁয়ায় গুটিয়ে থাকা প্রকৃতি মেলে ধরতে শুরু করেছে নিজেকে। বসন্তের হালকা বাতাসের ছোঁয়ায় সবুজ ফসলের মাঠে পদ্মার উত্তাল তরঙ্গের ন্যায় দোলছে। ফসলের সাথে খাপ খাইয়ে সাজিদ-নাসিরও সেঁওতি উঠাছে -নামাচ্ছে।
আস্তে আস্তে পানি কমছে আর মাছেরা নড়াচড়া করছে। মাছ দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে মাঝে মাঝে ‘বোয়াল, বোয়াল’ বলে চিল্লিয়ে উঠছে।
তাদের চিল্লানে বিলের মানুষ এসে তাদের খাদ পাড় ভিড় জমাচ্ছে।
পানি সেচা শেষ। খাদ শুকিয়ে গেছে। মাছ ছোটাছুটি করছে। বড় একটি পাতিল নিয়ে মাছ ধরতে নেমে গেছে। আনন্দে বাকবাকুম। অত মাছ? বাপের জীবনেও দেহে নাই।
অপ্রত্যাশিত সাফল্য। মাছ দেখে কে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে চায়? অনেকেই নামতে চাচ্ছে মাছ ধরতে। কিন্তু সাজিদ কাউকে নামতে দিবে না। পুরো ডেগ মাছে ভরে গেছে। মাছ রাখার বাসন আনতে হবে। কিন্তু পাতিল আনতে গেলে, অন্যরা নেমে মাছ ধরে ফেলবে।
শেষে বাধ্য হয়ে সেই গেল। নাসিরকে বলে গেল কাউকে নামতে দিবি না। কিছু দূর যেতে ‘বোয়াল, বোয়াল’ বলে রব উঠল। দূর থেকে চিৎকার দিয়ে বলল ‘নাসির কাউকে
নামতে দিবি না’।
বাড়িতে এসে চিল্লায়া বলল, আম্মা বড় পাতিল দাও, অনেক মাছ। ডেক আনতে আনতে কয়েকবার চিল্লায় উঠলো। ডেক নিয়ে যথা সম্ভব তাড়াতাড়ি ফিরে এলো।
কয়েকজন নামতে চাইছিল, বলল নাসির।
নামছি? না আমি কোনো মতেই নামতে দেই নাই।
খাদে থাকা ডালপালা সরাতেই। বড়বড় মাছগুলো ছুটাছুটি করতে লাগল। একটা মাটি সাপও বের হলো। মাছ খেয়ে অনেক মোটা হয়েছে সাপটা। সাজিদ ভয় পেল। কিন্তু নাসির ভয় পাইনি। সাপের লেজ ধরে দুই ঘুরান দিয়ে ছুড়ে মারল। ওর সাহস দেখে সাজিদ অবাক হলো।
বোয়াল মাছটা বেড়িয়ে আসতেই হই-রই রবে মুখরিত হয়ে উঠলো পুরো বিল।
অনেক মাছ পেয়েছে। বোয়াল, শৈল, শিং, মাগুর, কই, টাকি, পুঁটি, টেংরাসহ নানা জাতের গোড়া মাছ। সবার জন্য মাছ ধরা উন্মুক্ত করে, ডেগ মাথায় করে বাড়ির দিকে রওনা হল। বিলের হই-চই শুনে পাড়ার মহিলারা বিলপাড়ে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওদের আসতে দেখে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল মাছ দেখবে বলে। মাছ দেখে সবাই অবাক। এত ছোট ছোট ছেলেরা এত মাছ পেয়েছে? পাড়াজুড়ে একটাই আলোচনা। এত মাছ পেল কিভাবে?
জুমার আযান হলে উভয়েই গোসল সেরে মসজিদ পানে ছুটে চলল। সিজদায় নত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো।
নিজেরাও কিছু মাছ খেল। প্রতিবেশী -আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতেও মাছ পাঠালো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন