Inqilab Logo

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী নওগাঁর হাফিজ

প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : লেখাপড়া করে দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে সরকারি-বেসরকারি চাকরির দ্বারে দ্বারে না ঘুরে স্ট্রবেরি চাষ করে ভাগ্যের চাকা বদলে নিয়েছেন নওগাঁর মাহবুবুর রহমান হাফিজ। তিনি কোমাইগাড়ী মহল্লার চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মঈনুদ্দীনের ছেলে। সূত্রে জানা গেছে, মাহবুবুর রহমান ১৯৮৪ সালে হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে ৩০ পারার হাফেজ হয়ে বের হন, ১৯৯৮ সালে বগুড়া জামিল মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস পাস করে কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজে ভর্তি হয়ে ২০০২ সালে মাস্টার্স পাস করেন। পড়াশুনা শেষ করে বেসরকারি ফুড বেভারেজে চাকরি শুরু করলে পরিবারের কারণে তা ছেড়ে দিয়ে আসতে হয়েছে বাড়িতে। চাকরি না করে কিভাবে টাকা উপার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায় সে নিয়ে চিন্তা করতে করতে স্ট্রবেরি চাষের উদ্যোগ নেন। ২০০৮ সালে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সামনে তাদের নিজস্ব ৫ কাঠা জমিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ড. অধ্যাপক মঞ্জুর হোসেনের আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। বেশ ভালো ফলাফল পান তিনি। ২০০৯ সালে ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ব্যাণিজ্যিক ভিত্তিতে স্ট্রবেরি চাষ করলে ওই বছর খরচ বাদ দিয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আয় করেন। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১০ ও ২০১১ সালে সালে ৩ বিঘা জমিতে সাড়ে ৮ লাখ টাকা আয় করেন। ২০১২ সালে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে চাষ শুরু করলে সে বছর আবহাওয়ার কারণে ক্ষতি হয়ে ভালো করতে পারেনি। তারপরেও তিনি থেমে যাননি। ২০১৩ সালে ৩ বিঘা লিজ নিয়ে তিনি বছর খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় করেন। ২০১৪ সালে ৫ বিঘা জমিতে প্রায় ৭ লাখ টাকা আয় করেন সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে। ২০১৫ সালে ৫ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করলে খুব ভালো হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হরতাল-অবরোধ-অসহযোগের কারণে সময়মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম পৌঁছতে না পারার কারণে খুব বেশি টাকা মুনাফা অর্জন করতে পারেননি। লক্ষাধিক টাকা লাভ পেয়েছেন। তারপরও তিনি থেমে থাকেনি এ বছর শালুকা মৌজায় ৫ বিঘা জমি ৪৫ হাজার টাকায় বাৎসরিক লিজ নিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে স্ট্রবেরি বিক্রি করতে শুরু করেছেন। শুরুতে দাম প্রতি মণ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পেয়ে বর্তমানে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। স্ট্রবেরি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে পাঠিয়ে দেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে দামও ভালো পাবেন বলে আশা করছেন তিনি। প্রতিদিন তিনি এবং ৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত তার হাতে অর্ধ শতাধিক বেকার যুবক এই স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। শুধু তাই নয় বগুড়া জেলার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের পাশে পীরগাছা গ্রামের রেজাউল হক বেকার ছিলেন। তিনি মাহবুবের কাছে আসলে তার পরামর্শে তার কাছ থেকে চারা নিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতা পেয়ে ওই গ্রামের সবলোকই স্ট্রবেরি চাষ শুরু করে বর্তমানে ওই গ্রামের দেড় শতাধিক বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়। এখন ওই গ্রাম স্ট্রবেরি গ্রাম নামে পরিচিতি মানুষের কাছে। স্ট্রবেরি চাষের পাশাপাশি চারা বিক্রি করে বছরে ভালো টাকা আয় করেন তিনি। তার অভিযোগ, কৃষি অফিস তাকে কোন রকম সাহায্য বা কোন পরামর্শ দেয় না। তাদেরকে ডেকেও কোন সাড়া পাওয়া যায় না। তবে যা কিছুই করেছি নিজ পরিশ্রমে সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত কোন সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। পেলে আরও ব্যাপকভাবে চাষ করতে পরতাম বলে জানান তিনি। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে দেখতে আসেন তার স্ট্রবেরির বাগান। পরামর্শ নিয়ে অনেকে স্ট্রবেরি শুরু করেন। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে চাষ করবেন। এছাড়াও তিনি স্ট্রবেরির পাশাপাশি পরীক্ষামূলক ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছেন। অল্প দিনের মধ্যে ব্যাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করবেন বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে নওগাঁ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মুজিবর রহমান জানান, নওগাঁ সদর উপজেলা অর্ধ শতাধিক বিঘায় বেকার যুবকরা স্ট্রবেরি চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছে। দিন দিন এ স্ট্রবেরি চাষে যুবকরা এগিয়ে আসছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে এই চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী নওগাঁর হাফিজ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ