Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফের জোরদার হচ্ছে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা

| প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দক্ষিণ এশিয়ায় আবারও জোরদার হয়ে উঠেছে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা। ভারত ও পাকিস্তানের দফায় দফায় পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং পরস্পরের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় সম্ভাব্য সেই সংঘর্ষেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাক-ভারতের পরমাণু যুদ্ধপ্রস্তুতি সম্পর্কে সম্প্রতি বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে ওয়ার্ল্ড সোশালিস্ট ওয়েবসাইট। এক বিস্তারিত নিবন্ধে জানা যায়, কাশ্মিরের উরি সেনাঘাঁটিতে ভারতীয় বাহিনীর ওপর জঙ্গি হামলার পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধ থেকেই ভারত মরিয়া হয়ে বিদেশ থেকে অস্ত্র কিনছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়া, ইসরাইল ও ফ্রান্সের কাছ থেকে ভারত জরুরি ভিত্তিতে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমরাস্ত্র কিনেছে। এসব সমরাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে গোলাবারুদ, হেলিকপ্টার ইঞ্জিন, যুদ্ধবিমানের খুচরা সরঞ্জাম, ট্যাংকবিধ্বংসী রকেট, ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি। এসব গোলাবারুদ ও খুচরা যন্ত্রাংশ পেলে ভারতকে তীব্র যুদ্ধ চালানোর ক্ষমতা অন্তত ১০ দিন বাড়বে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সোশালিস্ট ওয়েবসাইটের পরিভাষায়, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) গত সেপ্টেম্বরে ওই হামলার পর থেকে ইসলামাবাদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। গত মাসের শুরুর দিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সংসদে এক বিবৃতিতে জানান, ‘শান্তি না আসা পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। যুদ্ধপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভারত গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের কয়েক দফা পরীক্ষা চালায়। ডিসেম্বরের শেষ দিকে চালানো অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা ভারতের পরমাণু হামলার সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। জানুয়ারিতে অগ্নি-৪’র সফল পরীক্ষা চালানো হয়। পাকিস্তানের যে কোনো শহরে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র। গত বছর ভারত তার ‘পরমাণু ত্রয়ী’ সক্ষমতার ঘোষণা দেয়। যার অর্থ হলোথ ভূমি, আকাশ ও সাগর, তিন জায়গা থেকেই পারমাণবিক হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন। গত বছর আগস্টে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম আইএনএস অরিহন্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হয়। একই বছর দেশটি সাবমেরিন থেকে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণেও সফল হয়। ভারতের আরেকটি পরমাণু ডুবোজাহাজ বর্তমানে সাগরে পরীক্ষাধীন। আরও দু’টির নির্মাণকাজ চলছে। দেশটির এই রণপ্রস্তুতির জবাবে পাকিস্তানও পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম বাবর-৩ এবং আবাবিল ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। জানুয়ারি মাসের শুরুতে পাকিস্তান ঘোষণা করে, তারা ভারত মহাসাগরের কোনো এক জায়গা থেকে সাফল্যের সঙ্গে বাবর-৩ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। ডুবোজাহাজ থেকে এই অস্ত্র শত্রæর চোখ ফাঁকি দিয়ে ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার মধ্যে জল বা স্থলের যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মতে, বাবর-৩’র পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণটি ছিল প্রতিবেশী দেশের পরমাণু কৌশল ও উদ্ধত ভাবভঙ্গির একটি জবাব। এই উৎক্ষেপণের ফলে ইসলামাবাদের দ্বিতীয় আঘাত হানার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অর্থ হলো, কখনো পরমাণু হামলায় পাকিস্তানের শহরগুলো ধ্বংস হয়ে গেলেও পাল্টা আঘাত হানার ক্ষমতা দেশটির হাতে থাকবে। গত ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তান ঘোষণা করে, তারা এই প্রথম সাফল্যের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম মাঝারি পাল্লার আবাবিল ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি একাধিক পরমাণু ওয়্যারহেড বহনের উপযোগী করে তৈরি। পাক সেনাবাহিনী জানায়, শত্রæর রাডার ফাঁকি দিয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্র একইসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। ভারতের সেনাপ্রধান হিসেবে বিপিন রাওয়াতের নিযুক্তি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই পাকিস্তান সীমান্তের কাছে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় ট্যাংক মোতায়েনের খবর প্রকাশ পায়। জেনিস ডিফেন্স উইকলি’র এক খবরে বলা হয়, রাজস্থান ও পাঞ্জাবে পাকিস্তান সীমান্তের কাছে ভারত অতিরিক্ত ৪৬০টি রাশিয়ার তৈরি উন্নত সংস্করণের মেইন ব্যাটল ট্যাংক মোতায়েন করবে। ইতোমধ্যে সেখানে ৮০০ থেকে ১২০০ ট্যাংক মোতায়েন করে রেখেছে ভারত। লন্ডনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায় পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তারা বলেন, ভারত হামলা চালানোর চেষ্টা করলে পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। পাকিস্তান যুক্তি দেখিয়ে বলে, ভারতের সক্ষমতার বিরুদ্ধে অপেক্ষাকৃত ছোট দেশ হিসেবে পাকিস্তানের পক্ষে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার ছাড়া আর কোনো পথ নেই। সব মিলিয়ে তপ্ত বারুদের ওপর অবস্থান করছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ পাকিস্তান ও ভারত। বড় রকমের বিপর্যয়ের জন্য সামান্য স্ফুলিঙ্গে ছোঁয়াই যথেষ্ট। সাউথ এশিয়া মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ