Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশী ঋণের হিসাব-নিকাশের সহায়তায় চালু হলো এইমস

প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : আগে বেসরকারি ও এনজিওদের মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল অর্থ বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে এলেও এর কোনো হিসাব রাখা হতো না। শুধু সরকারিভাবে যে সহায়তা আসত, সেটির হিসাব রাখা হতো। কিন্তু বদলে গেছে হিসাব-নিকাশের চিত্র। চালু হয়েছে এইড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এইমস)।
দেশীয় লোকবলের মাধ্যমে তৈরি এই এইমস সফটওয়্যারটি সম্প্রতি চালু করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ফলে বাংলাদেশে আসা বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ ও ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য ও উপাত্তসমূহ এইমস ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘দিনে দিনে আমাদের কাজের পরিধি বাড়ছে। এই উইংয়ের আওতায় এইমস রয়েছে। ফলে ইআরডির সক্ষমতা অর্জন করতেই একটি নতুন উইং তৈরি করা হয়েছে। বৈদেশিক অর্থ ব্যবস্থাপনা (এইমসের মাধ্যমে) পলিসির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।’
ইআরডি সূত্র জানায়, বিভিন্ন দাতা সংস্থা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা, খাত বা অঞ্চল অনুযায়ী বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পসমূহের প্রতিশ্রুতি ও ছাড় করা অর্থের পরিমাণ এইমসের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহ উভয়ই এই সিস্টেমের মাধ্যমে লাভবান হবে। এমইস দেখভাল ও শক্তিশালী মনিটরিংয়ের জন্য যুক্ত করা হয়েছে ইআরডির নতুন উইংয়ের সঙ্গে।
বিশ্বব্যাংক মনে করছে, এর ফলে শুধু স্বচ্ছতাই নয়, নিশ্চিত হবে জবাবদিহিতাও।
ইআরডির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল এইড ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভ’-এর সদস্য বাংলাদেশ। তা ছাড়া এ সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন। বাংলাদেশ ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ এ সংগঠনের সদস্যপদ লাভ করে। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সে কারণেই সারাবিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে যে সহায়তা আসে তার স্বচ্ছতার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হচ্ছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতেই এইমস তৈরি করা হয়েছে।’
এইমস চালু হওয়ায় এখন থেকে দাতাদের দেওয়া সকল সহায়তার আর্থিক তথ্য থাকবে সরকারের হাতে। এ জন্য ইতোমধ্যেই এ সফটওয়্যার উদ্বোধন করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। বিভিন্ন দাতা সংস্থা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা, খাত বা অঞ্চল অনুযায়ী বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পসমূহের প্রতিশ্রুতি ও ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ এইমসের মাধ্যমে জানা যাবে। বাংলাদেশ সরকার ও দাতা সংস্থাসমূহ উভয়ই এই সিস্টেমের মাধ্যমে লাভবান হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে বিভিন্ন ধরনের এইমস সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ হচ্ছে খুবই স্বল্পসংখ্যক দেশগুলোর একটি যারা নিজেরাই তাদের দেশীয় লোকবলের মাধ্যমে এই এইমস সফটওয়্যারটি তৈরি করতে পেরেছে।
সফটওয়্যারটি খুবই সুলভ, টেকসই ও সহজে সংস্কারযোগ্য। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ‘স্ট্রেংদেনিং ক্যাপাসিটি ফর এইড ইফেকটিভনেস ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় এই সফটওয়্যারটি তৈরি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার স্বার্থে ‘ইন্টারন্যাশনাল এইড ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভ’-এর কোডিং অনুসরণ করে এই সফটওয়্যারটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দাতা সংস্থাসমূহ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা ও মতবিনিময় করেই এই সফটওয়্যারটি নির্মাণ করা হয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, এইমস এ তথ্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশে কর্মরত যেকোনো দ্বি-পাক্ষিক বা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাকে এইমসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সে লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ দাতা সংস্থা এইমস এ রেজিস্ট্রেশন করেছে। বাকিদের এইমসের সঙ্গে যুক্ত হতে এর আগে একবার চিঠি পাঠিয়েছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সংস্থাটি আশা করছে শীঘ্রই সকল উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ এই সিস্টেমের আওতায় আসবে। যারা যুক্ত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), ইউএনডিপি, ইউএসএইড, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ডিএফআইডি ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যেই এইমস এ তথ্য সরবরাহ শুরু হয়েছে। ইআরডি আশা করছে বাকি উন্নয়ন-সহযোগীরা শীঘ্রই এইমস এ তথ্য প্রদানের কাজ শুরু করবে।
ইআরডি বলছে, এইমস চালু হলে বৈদেশিক সহযোগিতার সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিশেষত বৈদেশিক সহায়তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং এর স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তা ছাড়া আগামীতে দেশের জাতীয় বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহে এটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি দাত সংস্থাগুলোর উন্নয়ন সহযোগিতার প্রক্রিয়াকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে।
এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘কিছু এইড আছে যেগুলো কোনো হিসাবেই আসে না। সেগুলো হলে ডাইরেক্ট প্রজেক্ট এইড (ডিপিএ)। এ সহায়তা সরাসরি প্রকল্পের অধীনে দেওয়া হয়ে থাকে। সেগুলোর বিষয়ে কেউ জানতেই পারে না। এখন আর সেটি থাকবে না।
তা ছাড়া এইমস চালু হওয়ার ফলে উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যেও সমন্বয় আসবে। অর্থাৎ কোনো ডোনার কোনো খাতে কোথায় অর্থায়ন করছে, তা জানা থাকলে ডুপ্লিকেশন হবে না। সবাই এক জায়গা থেকে তথ্য পাবে। অন্যদিকে বর্তমানে এক মাসের ফরেন এইডের হিসাব পেতে দেখা যায় দীর্ঘ সময় লাগে। এই সফটওয়্যার চালু হওয়ায় তথ্যের দ্রুত প্রাপ্তিও নিশ্চিত হবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদেশী ঋণের হিসাব-নিকাশের সহায়তায় চালু হলো এইমস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ