Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ৮ মার্চ, ২০১৭

অর্থনীতিতে বাড়ছে নারীর অবদান
হাসান সোহেল : আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘নারী-পুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রা, বদলে যাবে বিশ্ব কর্মে নতুন মাত্রা’। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও  বৈষম্য সত্তে¡ও দেশের অর্থনীতিতে নারীদের অবদান বাড়ছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটিও প্রসার হচ্ছে। দেশের বিশাল নারী জনগোষ্ঠীকে বেকার রেখে দেশকে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই বলছেন বিশিষ্টজনেরা। এ জন্য পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের  সকলকে নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।
শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে নারীকর্মীদের বেতন-ভাতার বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি নারীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান করা হয়েছে গত এক দশকে। এর ফলে জিডিপিতে তাদের অবদানও বেড়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটিতে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ২৫ হাজার টাকার একটি বিশেষ ভাতাও চালু করা হয়েছে। এছাড়া রফতানিমুখী পোশাককর্মী এবং গৃহকর্মীদের জন্য শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের বিশেষ আর্থিক সহায়তাও দেয়া হচ্ছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বিলসের কর্মসূচি কর্মকর্তা কোহিনূর মাহমুদ বলেন, ২০১৩ সালের বাংলাদেশ লেবার ফোর্স সার্ভে অনুযায়ী, দেশে ৫ কোটি ৮১ লাখ কর্মী বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত রয়েছেন, যার এক কোটি ৬৮ লাখই নারীকর্মী। এর মধ্যে দেশের বৃহৎ রফতানি খাত পোশাক শিল্পেই কর্মরত আছেন প্রায় ৫০ লাখ নারীকর্মী।
সম্প্রতি বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) ও নারী  মৈত্রী নারী কৃষকদের উপার্জন এবং অর্থনীতিতে তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই বলে জানিয়েছে। অথচ গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীরা ৫৩ শতাংশ অবদান রাখছে, যেখানে পুরুষের অবদান ৪৭ শতাংশ বলে উল্লেখ করেন তারা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ফেলো ড. এম আসাদুজ্জামান পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, কৃষি উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে ৬৮ শতাংশ নারী শ্রমশক্তিতে জড়িত থাকলেও নারী কৃষি শ্রমিকের প্রতি মজুরি  বৈষম্য এখনো অব্যাহত। ভূমিতেও নারীর সমঅধিকার নেই। বাজারে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রেও নারীদের প্রতিবন্ধকতা আছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে ১৬০ দেশে প্রায় ৯০ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরে ২৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২১৩ জন নারী কর্মী। পুরুষদের তুলনায় বর্তমানে নারীদের বিদেশে চাকরির হার অনেক বেড়েছে।
অর্থনীতিতে নারীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে কোহিনুর বলেন, দেশে বর্তমানে বিশ লাখ গৃহকর্মী রয়েছেন। এদের অধিকাংশই নারী, যাদের জন্য এখনো বেতন-ভাতা নিয়ম চালু হয়নি। অধিকাংশ গৃহকর্মীই চুক্তিভিক্তিক কাজে নিয়োজিত।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এক লাখ ১০ হাজারের বেশি নারীকর্মী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। গত বছর সবচেয়ে বেশি নারীকর্মী গেছেন সউদী আরবে। এই সংখ্যা ৬২ হাজার ৯১৬। এ ছাড়া ২০ হাজার ৭৬৩ জন জর্ডানে, ওমান ১১ হাজার ৮৭৫, কাতার ৫ হাজার ৭৩, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৪ হাজার ৭৪৫ এবং লেবাননে ২ হাজার ৩১৬ জন নারীকর্মী গেছেন। এখন আর নারী কর্মীদের বিদেশে যেতে কোনো খরচ নেই। বিদেশের নিয়োগকর্তারাই তাদের খরচ বহন করছেন। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫৬ জন নারী বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নের মডেল। কিন্তু এখনও বাংলাদেশে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। তাই শুধু সরকারই নয়, নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য নিরসনে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহŸান জানান তিনি। একই সঙ্গে পরিবার থেকেই নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব, প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা বিশ্বের সকল নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে র‌্যালি, আলোচনা সভা, মানববন্ধন, সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।  
প্রেক্ষাপট
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ এই দিনটির শুরু। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুঁচ কারখানার নারী শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। আন্দোলন করার অপরাধে গ্রেফতার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। তিন বছর পর ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে  পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এর পর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দুই বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বাণী
প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেছেন, বর্তমান সরকার নারী-পুরুষের সমতা আনয়নে নারী শিক্ষার বিস্তার, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। দেশ গড়ার সকল কাজে নারীরা তাই আজ পুরুষের সহযোদ্ধা হিসেবে অবদান রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, বিচার, প্রশাসন, ক‚টনীতি, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সর্বক্ষেত্রে নারীর সফল ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা এখন যথেষ্ট দৃশ্যমান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে কর্মক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় উন্নয়নের মূল ধারায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহŸান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন আমরা সকলে মিলে কর্মক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় উন্নয়নের মূল ধারায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
কর্মসূচি
আজ সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৭’-এর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ী শ্রেষ্ঠ পাঁচজন জয়িতাকে পুরস্কার প্রদান করা হবে। বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের মাধ্যমে দিবসটি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি দিবসটি উপলক্ষে  বেলা ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘কর্র্মে-অর্থনীতিতে নারীর সমঅধিকার সমতাভিত্তিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার’ এই ¯েøাগানকে সামনে রেখে সমাবেশের আয়োজন করেছে।  আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে (নিচতলা) নারী গৃহশ্রমিক সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ‘আমরাই পারি’ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কর্মসূচির মধ্যে ছিল রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আঁধার ভাঙার বিশেষ আয়োজন। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট আজ সকাল ১০টায় ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমে নারী’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করেছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সকাল সাড়ে ১০টায় বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করেছে।
ওমেন লিডারশিপ সামিটে নারীদের সম্মাননা
১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আয়োজনে অংশ নিচ্ছে। এ বছর বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ‘ইন্সপাইরিং ওমেন অ্যাওয়ার্ড’ দিয়ে সফল নারীদের সম্মাননা জানাবে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। সফল নারীদের তিন ক্যাটাগরির অ্যাওয়ার্ডগুলো হচ্ছেÑ ‘ইন্সপাইরিং ফিমেল স্টার্ট-আপ’, ‘ইন্সপাইরিং ফিমেল এন্ট্রাপ্রেনার’ এবং ‘লিডারস অব টুমরো’। ঢাকায় হোটেল লা মেরিডিয়ানে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের আয়োজনে এই অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে। অনুষ্ঠানের আয়োজক হিসেবে থাকছে ‘ওমেন ইন লিডারশিপ’ (ডবিøউআইএল)। এদিকে নারীর প্রতি সহিংসতার অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে ‘অ্যাম্বাসাডার্স ফর চেঞ্জ’ শীর্ষক যৌথ উপ-সম্পাদকীয় লিখেছেন অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ব্রæনাই, কানাডা, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, শ্রীলংকা, সুইডেন, যুক্তরাজ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনরারা। এছাড়াও রয়েছেন ইউএসআইডি বাংলাদেশের মিশন ডিরেক্টর, ইউএন উইমেনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউএনএফপিএ’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং ডবিøউএফপি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারী দিবস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ