Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়ায় তামাক চাষের ভয়াবহ বিস্তার

| প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া : তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করতে সরকারের কোন পদক্ষেপই কাজে আসছে না। দেশী-বিদেশী তামাক কোম্পানীগুলোর নানা সুবিধার প্রলোভনে কুষ্টিয়ার দিগন্ত জুড়ে শুধু তামাক আর তামাক। কৃষি বিভাগের হিসাবে জেলায় তামাক চাষ কমলেও মাঠের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। জেলার অতি উর্বর কৃষি অঞ্চলখ্যাত মিরপুর ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে রবি মৌসুমে সিংহভাগই গ্রাস করেছে তামাক। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আবাদযোগ্য অতি উর্বর কৃষি ভূমির জেলা কুষ্টিয়ার তিন উপজেলার ৮০ ভাগ জমি এখন তামাক চাষের কবলে। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, তামাক কোম্পানীগুলোর নানা প্রলোভন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বহীনতায় দিন দিন তামাকের আবাদ বাড়ছে বলে মনে করছে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর কুষ্টিয়ায় তামাকের আবাদ হয়েছে ১৩১৫০ হেক্টর জমিতে। গত অর্থ বছরে জেলায় তামাকের আবাদ হয়েছিল ১৩৬৫০ হেক্টর জমিতে। সরকারী হিসাবে এক বছরে কুষ্টিয়ায় ৫০০ হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ কমেছে। তবে কৃষি বিভাগের এই তথ্যের সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেছে জেলার তামাক বিরোধী সংগঠন ও এনজিও সংস্থাগুলো। তাদের মতে, কৃষি বিভাগ যে তথ্য দিয়েছে সেটি তাদের ঘরে বসে তৈরী করা পরিসংখ্যান। মাঠে গেলে কৃষি বিভাগের তথ্যের সাথে বাস্তবের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কুষ্টিয়ার তামাক বিরোধী সংগঠন সাফ’র নির্বাহী পরিচালক মীর আব্দুর রাজ্জাক জানান, কুষ্টিয়া জেলার তিনটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে অন্ততপক্ষে ৪২ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে চাষীরা তামাক চাষ করছেন। তামাক আবাদ কমেছে বলে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেটি সঠিক না। একজন চাষী তামাক চাষে নিরুৎসাহিত হলে নতুন দুইজন চাষী তামাক আবাদ শুরু করেছেন।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, তামাক চাষে বিএটিবি, গেøাবাল টোবাকো, ঢাকা টোবাকো, নাসির টোবাকোর মতো দেশী-বিদেশী তামাক কোম্পানীগুলোর তৎপরতার মধ্যেও রবি মৌসুমে তামাকের বিকল্প অধিক মুনাফার ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলার মোট আবাদি ৩০ হাজার হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবে দৌলতপুর উপজেলায় কেবলমাত্র নাসির টোবাকো কোম্পানীই চলতি মৌসুমে সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কোম্পানীর এক মাঠকর্মী। তিনি আরও বলেন, নাসির টোবাকো ছাড়াও এখানে বিএটিবি, গেøাবাল টোবাকো ও ঢাকা টোবাকোর কার্ডধারী চাষীও রয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে কি পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে সেই চিত্র কেউই স্বীকার করছেন না। এখানে কোম্পানীগুলো তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেন। আর সরকারী কর্মকর্তারাও বলছেন না, কারণ তাদের দায়িত্বহীনতার গোমর ফাঁস হয়ে যাবে।
মিরপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, শুধুমাত্র মিরপুর উপজেলাতেই ২৪ হাজার ৩০ হেক্টর আবাদি কৃষি জমির মধ্যে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে তামাক চাষ হয়েছে। এসব জমিতে তামাক চাষ না করে চলতি মৌসুমে আবাদযোগ্য খাদ্যশস্য উৎপাদন করলে গম, মসুর, ছোলা, মটর, ভুট্টা, সরিষা ও অন্যান্য তেলবীজসহ সব ফসল মিলে প্রায় আড়াই হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য অতিরিক্ত উৎপাদন সম্ভব হতো।
মিরপুর কৃষি অফিসের এই তথ্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের চাষী কল্যাণ সমিতির এক নেতা জানান, মিরপুর উপজেলায় প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে চাষীরা তামাক চাষ করছেন। উপায় কি ? চাষীরা পরিশ্রম করে যা উৎপাদন করে তারই ন্যায্যমূল্য পায় না। তবুও এই মৌসুমে তামাক চাষ করে কিছু নগদ টাকা হাতে পায় চাষীরা।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা খাতুন বলেন, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষে কোম্পানীগুলোর লোভনীয় প্রস্তাবে আকৃষ্ট হয়ে চাষিরা তামাক চাষ চক্রে আটকে থাকছে। সরেজমিনে আমরা কৃষকদের যোগ-বিয়োগ করে দেখিয়ে দিয়েছি। তামাক চাষের তুলনায় অন্যান্য বিকল্প ফসল উৎপাদন অধিক লাভজনক। পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা উন্নতি হলেও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে এখনও আসেনি।
তামাক প্রবণ এলাকায় কোন খামারী যদি নিজ উদ্যোগে সফলতার সাথে লাভজনক ভাবে মাছ চাষসহ বহুমুখী খামার গড়ে তুলতে চায়, তাহলে তাদের যে কোন ধরনের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া এবং আদর্শ মডেল হিসেবে উৎসাহিত করতে পুরস্কারের ব্যবস্থাও নেয়া হবে বলে জানালেন কুষ্টিয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাজদার রহমান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুষ্টিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ