Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনুপ্রেরণার নাম গল

| প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : গল স্টেডিয়াম ঘেঁষে ষোড়শ শতকে নির্মিত ডাচ দুর্গ দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। এই স্টেডিয়ামে টেস্ট মানেই স্বাগতিকদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রেরণা। ২৮ টেস্টে ১৬ জয়ের বিপরীতে হারের সংখ্যা মাত্র ছয়টি। অথচ, এই গলে চার বছর পর ফিরতি টেস্ট খেলতে আসা বাংলাদেশ দলকে এখন একটু বেশিই সমীহ করতে হচ্ছে স্বাগতিকদের। গল এ টেস্টে সর্বোচ্চ স্কোরের (৬৩৮) মালিক বাংলাদেশ, গলে যে কোনো উইকেট জুটিতে আশরাফুল-মুশফিকুরের (পঞ্চম জুটি) ২৬৭ এখনো সবার উপরে! প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি উদযাপন করেছেন মুশফিক এই ভেন্যুতেই, শ্রীলঙ্কার ৫৭০/৪ চেজ করে লিড নিয়ে গর্বের ড্র’ অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের এই মাঠেই। শ্রীলঙ্কার মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম কোনো টেস্ট ড্র’র আনন্দ উদযাপনের চতুর্থ বর্ষপূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে এই ভেন্যুটিই দিচ্ছে বাংলাদেশ দলকে প্রেরণা। এই প্রেরণা থেকেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে গল টেস্টে অবতীর্ণ হতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিক- ‘অতীতে যদি ভালো কিছু থাকে, তা অবশ্যই অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। সাঙ্গাকারা, ম্যাথুউজ ওদের দলে থাকার পরও আমরা যে দলগত সাফল্য করেছিলাম তা সত্যিই ভালো দিক ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ১২ টেস্টের সব ক’টিতেই হার, সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অন্য বাংলাদেশের আবির্ভাব চার বছর আগে, গল টেস্ট দিয়ে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ চার টেস্টের দুইটিতে গর্বের ড্র’ এবং দুইটিই শ্রীলঙ্কার রান পাহাড় তাড়া করে সাঙ্গাকারা, ম্যাথুউজদের সঙ্গে লড়ে- এটাও যে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে বাংলাদেশ দলকে।
সাঙ্গাকারাকে এক পাশে রেখে, অন্যপাশে পুরো দলকে রেখেও টেস্ট খেলার সমষ্টি ছাড়িয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ চার বছর আগে! এমনকি সাঙ্গাকারার সে সময়ের টেস্ট রান পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের সকল ক্রিকেটারের সমষ্টির উপরে ছিল। অথচ চার বছর পর দৃশ্যপটে পরিবর্তন। টেস্ট খেলার সুযোগ অন্যদের চেয়ে কম পেয়েও বাংলাদেশের বর্তমান দলটির ব্যাটিং অভিজ্ঞতা বিচারে শ্রীলঙ্কার উপরে। বাংলাদেশের বর্তমান দলটিতে যেখানে টেস্টে তিন হাজারি ক্লাবে আছেন তামীম, সাকিব, মুশফিক, সেখানে শ্রীলঙ্কা দলে একজন (চান্দিমাল) শুধু পেয়েছেন দুই হাজারি ক্লাবের সদস্যপদ! পরপর তিন লিজেন্ডারি সাঙ্গাকারা, মাহেলা এবং দিলশানের অবসরজনিত শূন্যতায় যখন দলটি নির্ভর হয়ে উঠেছে হেরাথ, ম্যাথুউজের উপর, তখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজকে সামনে রেখে হ্যামেস্ট্রিংয়ের ইনজুরিতে ম্যাথুউজের ছিটকে পড়ার খবরও বাংলাদেশকে করেছে উজ্জীবিত।
চার বছর আগে বাংলাদেশ গল টেস্ট ড্র করেছে সাকিব, তামীমকে ছাড়াই। সাকিবের অনুপস্থিতিতে গলে টেস্ট অভিষেকে মুমিনুলের সেঞ্চুরিতে জাত চেনানো শুরু, টানা ১১ ম্যাচে ফিফটিতে গম্ভীর- শেভাগকে ছুঁয়ে যৌথভাবে টানা ফিফটিতে দ্বিতীয় সর্বাধিক ফিফটির রেকর্ড মুুমিনুলকে করেছে অনেক পরিণত ব্যাটসম্যান। চার বছর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলে খেলেছে যে একাদশ, সেই একাদশে মাত্র তিনজন (মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মুমিনুল) আছেন বর্তমান দলটিতে। সেখানে শ্রীলঙ্কা দলে আছেন সেই টেস্টের দুইজন (হেরাথ, চান্দিমাল)। সে কারণেই অভিজ্ঞতার মাপকাঠি বিবেচনায় এনে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে বরং গলে ফিরতি টেস্টকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন কিপিং গøাভস খুলে ফেলা মুশফিক- ‘ওদের দলে অনেকগুলো পরিবর্তন আছে। অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার দলে নেই। আমাদের দলে অনেকেই যে শেষ দলে এসেছিলাম। তবে আমি বারবার বলছি, ওদের অ্যাটাক পুরোপুরি চেঞ্জ। আমাদের জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে।’
চার বছর আগে গল টেস্টে চান্দিমাল উদযাপন করেছিলেন অভিষেক সেঞ্চুরি, সেই চান্দিমাল এখন অনেক পরিণত। গুনারতেœ নামক ভয়ঙ্কর এক ব্যাটসম্যানের উত্থানপর্ব তো সবারই জানা। নিজেদের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে গত বছর টেস্টে হোয়াইট ওয়াশের (৩-০) লজ্জা দিতে পারার সুখস্মৃতিও থাকছে তাদের সঙ্গে। হোমে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলার অতীত যাদের, তাদের বিপক্ষে তাই সতর্কভাবে পা ফেলার কথাই ভাবছেন মুশফিক- ওরা অস্ট্রেলিয়ার মতো চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে ৩-০ যেটা জিতেছে এবং এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’
২০১৩ এর বাংলাদেশ দলের সঙ্গে বর্তমান দলটির লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন ইতোমধ্যে জেনে গেছে বিশ্ব। আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান মুস্তাফিজুরের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তার পার্টনার, অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ সম্প্রতি ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর বর্ষসেরা ডেব্যুটেন্ট ক্রিকেটারের পুরস্কারে হয়েছেন ভুষিত। বাংলাদেশ এই প্রথম একসঙ্গে দুই বিস্ময়কে পাচ্ছে। এই জুটিকেই গল টেস্টে স্বাগতিকদের ভয় ধরিয়ে দেয়ার আদর্শ অস্ত্র মনে করছেন মুশফিক- ‘এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বিশাল অ্যাডভানটেজ। আমাদের দলে কোয়ালিটি স্পিনার সাকিব, মিরাজ ছিল, সঙ্গে মুস্তাফিজ ফিট হয়ে উঠেছে। এটা আমাদের জন্য বড় একটা প্লাস পয়েন্ট। এ উইকেটে তাদের বোলিং বৈচিত্র অবশ্যই শ্রীলঙ্কাকে ভোগাবে। কারণ, শ্রীলঙ্কা দলের অনেক খেলোয়াড়ই মুস্তাফিজকে এর আগে খেলেনি। তাসকিন, রুবেল, মিরাজ, সাকিব, যারাই আছে তাদের খেলতে কষ্ট হবে।’
উইকেটে ঘাস না রাখায় একটু ভাবনায় পড়েছেন মুশফিক। তাই ভেবে-চিন্তে একাদশ সাজাতে চান তিনি। তবে ২০ মাস পর টেস্টে ফিরছেন লিটন, ফিরছেন কিপার হিসেবে- তা আগেভাগেই বলে দেয়া যায়। দুই পেসার নিয়ে খেললে সেই দুইজন হবেন মুস্তাফিজ, তাসকিন, তাতে দ্বিতীয় বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে খেলার সুযোগ থাকবে তাইজুলের। কিপিং গ্লাভস খুলে নতুন পরিচয়ে চার নম্বরে মুশফিকুরকে দেখা যাবে এই টেস্টে। প্রেরণার এই সিরিজে বাংলাদেশের ভয় গলের অসহনীয় তাপমাত্রা, সঙ্গে ম্যাচের প্রথম এবং শেষ দিনে বৃষ্টির পূর্বাভাস!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ