নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী, গল (শ্রীলঙ্কা) থেকে : মাত্র ১৬ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক, তাও আবার লর্ডসে! অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নিয়মিত উইকেট কিপার মুশফিকুরকে ব্যাটসম্যান পরিচয়ে অভিষেকের সিদ্ধান্তে ছিল চমক। ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন ডেভ হোয়াটমোর ইংল্যান্ড সফরে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি দেখে। দলে যখন সময়ের সেরা উইকেট কিপার খালেদ মাসুদ পাইলট আছেন, তখন ব্যাটসম্যান পরিচয় ছাড়া টেস্ট অভিষেকের অন্য কোন উপায় সে সময়ে খুঁজে পাননি কোচ হোয়াটমোর। লর্ডসে অভিষেকটা ছিল অনুজ্জ্বলÑ১৯ ও ৩, দশ মাস পর নিজের মাঠ বগুড়া টেস্টে শ্রীলংকার বিপক্ষে ২ ও ০! একাদশে ২ উইকেট কিপার রেখে লাভ নেই, তার চেয়ে বরং ব্যাটসম্যান কিপারের দরকারটা বেশিÑনির্বাচকদের এই আইডিয়ায় ১৫ মাস পর খালেদ মাসুদ পাইলটকে ছেঁটে ফেলে দ্বিতীয় দফায় মুশফিকুরকে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দিয়ে আর ব্যর্থ হননি সে সময়ের নির্বাচকরা। ২০০৭ সালে শ্রীলংকা সফরে পি.সারায় ২৩৫ মিনিটে ৮০ রানের ইনিংসটাই মুশফিকুরকে টেস্টে করেছে অপরিহার্য। সেই থেকে টানা ৪৪ ম্যাচে করেছেন কিপিং। টেস্টে খালেদ মাসুদ পাইলটের ৪৪ ম্যাচে ৮৭ ডিসমিসালের রেকর্ড ছাড়িয়ে মুশফিকুরের ডিসমিসালের সংখ্যা ৯৫। ইনিংসে ২ বার ৫টি করে ডিসমিসালের রেকর্ডও আছে বগুড়ার এই ছেলেটির। অথচ এক দশক আগে যে শ্রীলংকা সফরটি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্টÑ১০ বছর পর সেই শ্রীলংকায় খুলে ফেলে শুধুই টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে হচ্ছে মুশফিকুরকে। ৪ বছর আগে যেই গল এ প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরিতে চিনিয়েছেন নিজেকে, সেই গল এ ফিরতি ম্যাচে আর কিপার ব্যাটসম্যান নন মুশফিক! হায়দারাবাদ টেস্টে রিদ্ধিমান সাহার স্ট্যাম্পিং মিস করে বিসিবির রোষানলে এতটাই পড়েছেন যে, টেস্টে কিপিং পরিচয়টা অতীত হতে বসেছে বাংলাদেশ অধিনায়কের।
ক্যারিয়ারের প্রথম ২ টেস্টে উইকেট কিপার পরিচয় ছিল না তার। অধিনায়ক, ব্যাটসম্যানের সঙ্গে কিপিংÑএক সঙ্গে তিন দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করতে পারছেন না বলে ২০১৫ সালে বিসিবির পক্ষ থেকে মুশফিকুরকে দেয়া হয়েছিল আলটিমেটাম। হয় কিপিং, নয় ক্যাপ্টেনসিÑবিসিবির এই কঠোর আলটিমেটামে সে বছর ভারতের বিপক্ষে ফতুল্লা টেস্ট, দ.আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম এবং ঢাকা টেস্টে অনোন্যপায় হয়ে লিটনের হাতে তুলে দিতে হয়েছে কিপিং গ্লাভস। এর বাইরে প্লেয়ার্স লিস্টে কিপার পরিচয় থেকে ২টি টেস্টে পারেননি কিপিং করতেÑ ২ বারই ইনজুরিতে পরতে পারেননি কিপিং গ্লাভস। ২০১৫ সালে খুলনা টেস্টে তার বদলে দু’জন করেছেন কিপিং, প্রথমে মাহামুদুল্লাহ, পরে ইমরুল কায়েস। নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়েলিংটন টেস্টে আঙুলে এতোটাই চোট পেয়েছিলেন যে, ইমরুল কায়েসের হাতে তুলে দিতে হয়েছে কিপিং গ্লাভস। বদলি উইকেট কিপার হিসেবে ৫টি ডিসমিসালে রেকর্ডটাও করে ফেলেছেন ইমরুল। হায়দারাবাদ টেস্টে মুশফিকুরের কিপিং ব্যর্থতার রেশটা পড়েছে গল টেস্টে, সেই লিটনের হাতেই দ্বিতীয় দফায় তুলে দিতে হচ্ছে কিপিং গ্লাভস মুশফিকুরকে।
গত বছর এশিয়া কাপ টি-২০তে ২ ম্যাচে কিপিং গ্লাভস খুলে রাখতে হয়েছে মুশফিকুরকে। তা নিয়ে ওঠেনি কথা। এবার বিসিবির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতিটা ভিন্ন। হায়দারাবাদ টেস্টে লড়াকু সেঞ্চুরিতে হাততালি পাওয়ার পরিবর্তে এক স্ট্যাম্পিং মিসে খলনায়ক মুশফিক। হাত থেকে কিপিং গ্লাভস খুলে ফেলতে যে হচ্ছে ইচ্ছের বিরুদ্ধে, এবং তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে, গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকুরের কথায় করা গেছে তা আন্দাজÑ‘সিদ্ধান্তটি টিম ম্যানেজমেন্টের। কখনো এ ধরনের সিদ্ধান্ত পক্ষে আসে, কখনো আসে না প্যাড গ্লাভসের সঙ্গে আগে থাকতাম। এখন এগুলো ছাড়া থাকতে হচ্ছে। অবশ্যই ভিন্ন অনুভূতি হবে।’
উইকেট কিপিংয়ের কারণে ক্যাপ্টেনসি করাটা হতো সহজ, নতুন পরিচয়ে মুশফিকুরের কাজটা কঠিন হতে পারে, মানিয়ে নিতে লাগবে সময়, এমনটাই মনে করছেন বাংলাদেশ অধিনায়কÑ‘কিপিং সব সময় আমাকে হেল্প করত, আগে অনেকবার বলেছি তা। উইকেটে কি ধরনের আচরণ করছে, উইকেটের পেছনে থেকে তা বলতে পারতাম। আমার নিজের ব্যাটিংয়েও অনেক সাহায্য করতো তা। এবার একটু খারাপ লাগবে।’
উইকেট কিপিং ছেড়ে দিয়ে ব্যাটিংয়ে পাচ্ছেন প্রমোশন মুশফিক। এ সিদ্ধান্তটাও টিম ম্যানেজমেন্টের। বাংলাদেশের সময়ের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যানকে ৬ নম্বর থেকে উপরে উঠে ৪ নম্বরে ব্যাটিং করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন মুশফিকÑ‘দলের জন্য যা করা দরকার,তা করব। কিপিং, ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং যেটাই করি না কেন অবশ্যই আমাকে অবদান রাখতে হবে। ভালো করতে হবে। আমি অনেক খুুশি। উপরে খেললে যতটা সম্ভব অবদান রাখা যায়, সে চেষ্টাই করব।’
টেস্টে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ডিসমিসালের সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে খেতে হলো ধাক্কা। নার্ভাস নাইনটিজে গেলেন আটকে। তাও আবার বাংলাদেশের ৯৯তম ম্যাচে এসে! একটা মাইলস্টোন থেকে তো বঞ্চিত করা হলো মুশফিকুরকে। আফসোসটা তাইÑ ইস, আর মাত্র ৫টি ডিসমিসাল!
টেস্টে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা
ম্যাচ জয় হার ড্র
বাংলাদেশ ১৬ ০ ১৪ ২
শ্রীলঙ্কা ১৬ ১৪ ০ ২
সর্বোচ্চ ম্যাচ
বাংলাদেশ : মোহাম্মদ আশরাফুল, ১৩
শ্রীলঙ্কা : কুমার সাঙ্গাকারা, ১৫
অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচ
বাংলাদেশ : মোহাম্মদ আশরাফুল, ৫
শ্রীলঙ্কা : মাহেলা জয়াবর্ধনে, ৭
সর্বোচ্চ দলীয়
বাংলাদেশ : ৬৩৮/১০, গল ২০১৩
শ্রীলঙ্কা : ৭৩০/৬ ডি, ঢাকা ২০১৪
সর্বনিম্ন দলীয়
বাংলাদেশ : ৬২/১০, কলম্বো ২০০৭
শ্রীলঙ্কা : ২৯৩/১০, ঢাকা ২০০৮
বড় জয়
বাংলাদেশ : একটিও জয় নেই
শ্রীলঙ্কা : ইনিংস ও ২৪৮ রানে
সর্বাধিক রান
বাংলাদেশ: মোহাম্মদ আশরাফুল, ১৩ ম্যাচে ১০৯০
শ্রীলঙ্কা : কুমার সাঙ্গাকারা, ১৫ ম্যাচে ১৮১৬
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত
বাংলাদেশ : মুশফিকুর রহিম ২০০, গল ২০১৩
শ্রীলঙ্কা : কুমার সাঙ্গাকারা ৩১৯, চট্টগ্রাম ২০১৪
সর্বাধিক সেঞ্চুরি
বাংলাদেশ : মোহাম্মদ আশরাফুল, ১৩ ম্যাচে পাঁচটি
শ্রীলঙ্কা : কুমার সাঙ্গাকারা, ১৫ ম্যাচে সাতটি
সর্বাধিক ফিফটি বা ততোধিক
বাংলাদেশ : মোহাম্মদ আশরাফুল, ১৩ ম্যাচে ছয়টি
শ্রীলঙ্কা : কুমার সাঙ্গাকারা, ১৫ ম্যাচে ১৪টি
সেরা পার্টনারশিপ
বাংলাদেশ : আশরাফুল-মুশফিক ২৬৭ (পঞ্চম), গল ২০১৩
শ্রীলঙ্কা : সাঙ্গাকারা-মাহেলা ৩১১ (তৃতীয়), ক্যান্ডি ২০০৭
সর্বাধিক উইকেট
বাংলাদেশ : শাহাদাত হোসেন, ১০ ম্যাচে ২৪টি
শ্রীলঙ্কা : মুত্তিয়া মুরালিধরন, ১১ ম্যাচে ৮৯টি
ম্যাচে সেরা বোলিং
বাংলাদেশ : সাকিব আল হাসান, ২০৪/৬
শ্রীলঙ্কা : মুত্তিয়া মুরালিধরন, ১২/৮২
সর্বাধিক ৫ উইকেট
বাংলাদেশ : সাকিব আল হাসান, পাঁচ ম্যাচে দুইবার
শ্রীলঙ্কা : মুত্তিয়া মুরালিধরন, ১১ ম্যাচে ১১বার
সর্বাধিক ক্যাচ
বাংলাদেশ : শাহরিয়ার নাফীস, সাত ম্যাচে আটটি
শ্রীলঙ্কা : মাহেলা জয়াবর্ধনে, ১৩ ম্যাচে ১৭টি
সর্বাধিক ডিসমিসাল
বাংলাদেশ : খালেদ মাসুদ পাইলট, আট ম্যাচে ১৫টি
শ্রীলঙ্কা : প্রসন্ন জয়াবর্ধনে, সাত ম্যাচে ২৯টি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।