মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : রাশিয়ার গ্রামগুলো দিনদিন শূন্য হয়ে যাচ্ছে। নাগরিক সুবিধা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়ার জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে গ্রামের অধিবাসীরা। এটা প্রায় সমস্ত উন্নত দেশেরই চিত্র। কিন্তু, রাশিয়ায় যা হচ্ছে সেটা প্রায় হুমকিস্বরূপ। কারণ, রাশিয়ায় এমনিতেই জনসংখ্যা কম। বিশাল দেশ রাশিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ১৪ কোটি ৫০ লাখ। সেখানে অধিকাংশ জনসংখ্যাই শহরের বাসিন্দা। মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গের উন্নত শহরগুলোতেই বাস করেন এক-তৃতীয়াংশ জনগণ। আর গ্রামগুলো দিন দিন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এমন অনেক গ্রাম আছে যে গ্রামে কোনো জনবসতি নেই। মানুষের পদচিহ্ন উঠে গেছে বহু আগে। সম্প্রতি রাশিয়ার লিজা জাকোভা এবং দিমা জারোভ এ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছে। তারা উভয়েই ফটোগ্রাফার এবং তথ্যচিত্রনির্মাতা। তাহলে দেখা যাক তাদের ক্যামেরা ও কলমে কী উঠে এসেছে। ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে রাশিয়ার কস্ট্রোমা প্রদেশ থেকে প্রায় ২০০ গ্রাম সম্পূর্ণ খালি হয়ে গেছে। মস্কোর উত্তরাঞ্চলের এ বনাঞ্চল ঘেরা প্রদেশটি এখন প্রায় মরুভ‚মির মতো জনবসতিহীন। ২৩ হাজার স্কয়ার মাইলের বিশাল এ অঞ্চলে বাস করে মাত্র ৬ লাখ ৬৬ হাজার মানুষ। এক-তৃতীয়াংশ গ্রামই এখন সম্পূর্ণ খালি। মৃত এই গ্রামগুলো এখন রাশিয়ার জাতিগত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নি¤œ জীবনযাত্রার মান, কাজের অভাব, নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে গ্রামের অধিবাসীরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আর আজ প্রায় রাশিয়ার ২০ হাজার গ্রাম এভাবে শূন্য হয়ে পড়েছে। লিজা ও দিমা থাকেন রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে। তারা বলছেন, শহরে থাকার ফলে তারা আসলে গ্রামগুলো সম্পর্কে খুব কমই জানি। যখন আমরা কস্ট্রোমা প্রদেশের গ্রামগুলো সম্পর্কে জানলাম তখন আমরা খুবই বিস্মিত হলাম যে ওখানে অনেক গ্রামে মাত্র একটি পরিবার কিংবা একজন মাত্র লোক বাস করে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাবো। বেশিরভাগ পথটাই আমাদের হেঁটে যেতে হলো। অনেক গ্রামে কোনো ফোন নেটওয়ার্ক নাই। তাই সেখানের কোনো অধিবাসীর সঙ্গে দেখা করার জন্য শুধুমাত্র ভাগ্যের উপর নির্ভর করতে হলো। জুলাই মাসে যখন আমরা লীচার সঙ্গে দেখা করতে চাইলাম তিনি বাড়িতে ছিলেন না। আমরা আগস্টে আবার গেলাম তার সঙ্গে দেখা করতে। তার খালি বাড়িটিতে সারারাত থাকলাম তার দেখা পাওয়ার জন্য। পরদিন তিনি আসলেন। ছবি তোলার জন্য এমন অনেকের বাড়িতে আমরা এক সপ্তাহও থেকেছি। এটা আমাদের বিস্মিত করেছে যে তাদের জীবনমান উন্নয়নের করার জন্য রাশিয়ার সরকারের কোনো মাথাব্যথাই নাই। যেসব মানুষের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছে তারা খুব কঠিন প্ররিশ্রমী, বন্ধুত্বপরায়ণ এবং খুবই সাধারণ। তারা আমাদের পরম আত্মীয়র মতো বাড়িতে নিয়ে গেছে, খাইয়েছে, তাদের জীবনের গল্প করেছে। এখানে তাদের কয়েকজনের জীবনের গল্প তুলে ধরা হলো। লীচা বাস করেন স্পাইরডোভো গ্রামে। এক সময় খনিজশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি বললেন, আমি মানুষের কাছ থেকে একটু দূরে থাকতেই পছন্দ করি। তাই এখানে একা একা আছি। আমার যখন ২০ বছর বয়স তখন আমি এখানে আসি। আমি এখন সরকারের কাছ থেকে সামান্য কিছু পেনশন পাই। তাই আমার জন্য যথেষ্ট। পান ভোজন ছাড়া আর আর কিছু করার নেই। নিজের মতো থাকি। ইচ্ছে হলে মাশরুম তুলি, মাছ ধরি। বেশ আছি। আমি জানি না অন্যরা কেন এ জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। লীচার মতোই এলিয়াকোভা গ্রামের একলা অধিবাসী সাসা ইভানভ। পাশের শহরেই তার বাবা, মা আর প্রাক্তন স্ত্রী থাকেন। শীতকালে তিনি শহরে গিয়ে একটি স্কুলে পড়ান, আর গরম কালটা এই গ্রামের বাড়িতে এসে কাটিয়ে দেন। বাড়িটি বানিয়েছিল তার বাবা। এখন সেটা ভেঙে পড়ছে। প্রয়োজনে তিনি মাঝে মাঝে কিছুটা সারিয়ে নেন। তিনি বলেন, অলস-অবসর সময় কাটানোর জন্য এর চাইতে ভালো পরিবেশ আসলে আর হয় না। আমি আসলে শহর একেবারেই পছন্দ করি না। খুব প্রয়োজনে শহরে যাই। কিন্তু, এখানে এই নিরিবিলি কাটিয়ে দিতেই আমার বেশ ভালো লাগে। অসোরিনো গ্রামে থাকে একটি কৃষক পরিবার। অ্যালেক্স সেরনোভ আর তার স্ত্রী জোয়া। তাদের প্রায় ৫০ একর জমি। গরু, শূকর, ভেড়া, মুরগি সবই আছে তাদের। প্রতিটি মুহূর্তই যায় তাদের ব্যস্ততায়। অবসর সময়টুকু তারা টিভি দেখে আর পত্রিকা পড়ে কাটিয়ে দেন। গরমকালে তাদের ছেলে আসে তার পরিবার ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে। তখন নাতিনাতনীদের সান্নিধ্যে তাদের চমৎকার কিছু দিন যায়। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। খুব অল্প কিছু মানুষের জীবনযাত্রা। যারা আছে ভালোই আছে। কিন্তু, যারা চলে যাচ্ছে তারা হয়তো আর কোনোদিনও ফিরে আসবে না এইসব গ্রামে। হয়তো এই গ্রামগুলো একদিন পরিণত হবে ভ‚তরে পল্লীতে। উড়াল প্রদেশে এমন এক নির্জন গ্রাম খুঁজে পাওয়া গেল যার ১০০ মাইলের মধ্যে মাত্র ১২ জন লোক বাস করে। সূত্র : রোডস এন্ড কিংডমস ও ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।