Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তুলতুলির অ আ

| প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

র হি মা   আ ক্তা র   মৌ : শহরের বাড়ির বাচ্চাদের বয়স ৪ হতে না হতেই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। কেউ কেউ তারও আগে দেয়। প্লে, নার্সারি, কেজি তারপর ওয়ানে মানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ইদানীং গ্রামেও এমন দেখা যায়, স্কুলমুখী হচ্ছে আমাদের শিশুরা, এটা অনেক পজেটিভ দিক। তুলতুলি এদের কারোই মাঝে পড়ে না, ও গ্রামে থাকলে হয়তো দুটো বই নিয়ে স্কুলে যেতো, ও শহরের শিশু হলে হয়তো এতদিনে নার্সারি কিংবা কেজি ক্লাস পাস করে ছোট ওয়ানে পড়তো। এসবের কিছুই এখনো জোটেনি ওর ভাগ্যে।
তুলতুলির নানা নানী প্রথমে কাজের সন্ধানে শহরে আসে। সেভাবে ওর বাবা শহরে দারোয়ানের কাজ পেয়েছে বলে তুলতুলির মা ওদের ৩ ভাই বোনকে নিয়ে শহরে আসে বছর দেড় আগে। ওর নানী হালিমা নীলাঞ্জনাদের বাসায় ছুটা বুয়ার কাজ করে। তুলতুলি কখনো নানীর সাথে কখনো পরে নীলাঞ্জনাদের বাসায় আসে। আসলেই টিভি অন থাকলে সোফায় বসে টিভি দেখে, অবশ্য টিভি অফ থাকলে ওর নানী হালিমার পিছে পিছে ঘুরে। হালিমা মাঝে মাঝেই বলে,,,,
আচ্ছা তুই এহানে কি করিস, যা ঘরে যা, ছুডু বাইডারে তো কোলে রাখতে হারিস।
কথা শুনে তুলতুলি অন্য রুমে চলে যায়।
তুলতুলিকে দেখলেই নীলাঞ্জনার মনে পড়ে মেয়েদের এই বয়সের কথা, রিতু আর মিতু এই বয়সে স্কুলে পড়তো, অথচ
তুলতুলি ঘুরে ফিরে সময় কাটায়।
-- হালিমা, ও হালিমা একটু শুনতো। তোমার নাতনি তুলতুলির তো লেখাপড়ার সময় যাচ্ছে। ওকে স্কুলে দিবে না।
-- আফা দেয়ার কতা তো ভাবছি কিন্তু কই যে দিমু।
-- আশেপাশের স্কুলে খবর নাও, আমিও দেখি কিছু করা যায় কিনা।
-- তাইলে তো ভালোই হয় আফা, আফনে চাইলেই হারবেন।
নীলাঞ্জনা খোঁজ নেয়, আশেপাশে কয়েকটা কিন্ডারগার্ডেন স্কুল আছে কিন্তু সেগুলোতে ভর্তি হতে অনেক টাকা লাগে, মাসে মাসে বেতন ও অনেক যা তুলতুলির বাবা মা বা নানীর পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়।
আর প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করতেও পরীক্ষা লটারি আরো কত কি? সব চেয়ে বড় কথা কিছু লেখা-পড়া তাকে জানতেই হয় কিন্তু তুলতুলি তো কিচ্ছুই জানে না।
হালিমা কাজে আসে নীলাঞ্জনা বলে,,,,,
-- হালিমা এক কাজ করো তুলতুলিকে আগে ঘরে কিছু কিছু অক্ষর শিখিয়ে তারপর স্কুলে দেয়ার কথা ভাবতে হবে। এই বয়সী অন্য বাচ্চারা কিন্তু স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, ইংরেজি বর্ণ আর গণনা করতে পারে, ও তো এগুলো পারে না।
-- হ আফা ঠিক কইছেন, ওর মায় লিখতে কয়, তয় তুলতুলি বসে না।
-- শুনো হালিমা, ওকে এখানেই নিয়ে এসো। আমিই পড়াবো, কিছু কিছু ঘরেই শিখাইতে হবে, না হয় কোথাও ভর্তি করানো যাবে না।
পরদিন সকালে তুলতুলি নানীর সাথে বাসায় আসে, নীলাঞ্জনা ডেকে নেয় পাশে।
একটা কাগজে অ আ লিখে দেয়, বলে,,,,,
-- তুলতুলি পেন্সিলটা হাতে নে, এই অক্ষরের উপর দিয়ে হাত ঘুরা।
তুলতুলির হাতের উপর দিয়ে পেন্সিলটা ধরে নীলাঞ্জনা, হাত ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অ আ লিখে। দুই তিন বার ঘুরিয়ে দেয়ার পর তুলতুলি নিজেই ঘুরাতে থাকে। অনেকক্ষণ ধরে ঘুরানোর পর নীলাঞ্জনা বলে,,,,,
-- তুলতুলি তুমি এবার নিজেই এমন একটা লিখো।
অনেক ভয়ে ভয়ে তুলতুলি লিখতে চেষ্টা করলো। একটা অ লিখেছে, ভালোই পেরেছে লিখতে।
-- তুলতুলি এবার এইটার মতো একটা লিখো।
-- আফা আফা এডাতো ওই ডার মতোই।
-- ঠিক বলেছিস, শুধু একটা দাগ বেশি।
-- হ আফা, এডা বড় আর ঐ ডা ছুডু।
হা হা হা,,,,,,,
নীলাঞ্জনা অ আর আ এর নাম বলে দিয়েছে, মনে রাখতে বলছে। খাতার মাঝে ই আর ঈ লিখে দিয়ে বলল,,,,,
-- এবার এগুলোর উপর দিয়ে হাত ঘুরাও।
অনেকটা মনের আনন্দেই তুলতুলি লিখতে থাকে। চারটা শেখার পর বলে,,,,
-- আফা আইজ আর হারুম না, হাত বেতা হইছে।
খাতার মাঝে উ আর ঊ লিখে দেয় নীলাঞ্জনা। বাসায় গিয়ে দুপুরের পর এগুলো লিখতে বলে।
-- কাল সকালে যখন আসবে, এগুলো নিয়ে এসো। তখন কিন্তু নিজে নিজেই লিখবে আর মুখে মুখে বলবে।
হাসতে হাসতে চলে যায় তুলতুলি। এইভাবে কয়েকদিন নীলাঞ্জনা ওকে বর্ণ লেখা শিখায়। কোনদিন বাংলা বর্ণ কোন দিন ইংরেজি আবার কোন দিন ১,২,৩, শিখায়। পড়ায় তুলতুলির ভালোই মন আছে, অথচ হালিমা বলে ও নাকি পড়তেই চায়না। আসলে বিষয়টা হলো পড়াতেও জানতে হয়।
এর মাঝে স্বরবর্ণ সব শেখা হয়েছে ব্যঞ্জনবর্ণ ক বর্গ, চ বর্গ, ট বর্গ শেখা হয়েছে। অন্যদিকে ইংরেজিগুলো প্রায় অর্ধেক শিখেছে। ১, ২, ৩, ৪ শিখেছে ২৫/২৬ পর্যন্ত। ১,২,৩ লিখতে গিয়ে তুলতুলি বলে,,,
-- আফা আফা এগুলি লিখতে তো অনেক সোজা কিন্তু কইতে কষ্ট হয় বেশি।
-- তা তো একটু হবেই, আস্তে আস্তে সব শিখে যাবে তুমি।
এর মাঝে খবর আসে তুলতুলির বাবার চাকরি চলে গেছে, ওদের গ্রামে যেতে হবে। সবার মন খারাপ সাথে নীলাঞ্জনার ও, কিন্তু করার কিচ্ছুই নেই, যেতে তো হবেই।
নীলাঞ্জনার ছোট ভাই অয়ন ব্যাংকে চাকরি করে। একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে অনেকগুলো সাদা পেইজ নিয়ে আসে, যেগুলোর একপাশ ব্যবহার করা। অয়ন এগুলো এনে বোনকে দিয়ে বলে,,,,,
-- আপা এগুলোতে লিখতে পারবে রিতু মিতু। দেখলাম অফিসের অন্যরা এই কাজের জন্যে নিয়ে যায়, তাই নিয়ে এলাম।
পেইজগুলোতে লিখতো রিতু, মিতু। সেই থেকে এমন অনেক পেইজ নিয়ে আসতো অয়ন।  তুলতুলি যাওয়ার আগের দিন নীলাঞ্জনা অনেকগুলো পেইজে সব বর্ণগুলো লিখে দেয়, বলে,,,,,
-- বাড়িতে গিয়ে এগুলো লিখবে। এগুলো সব লিখতে পড়তে পারলেই দেখো স্কুলে তোমায় ভর্তি করিয়ে নিবে।
সবগুলো কাগজ নিয়ে তুলতুলি চলে যায়, যাওয়ার সময় বারবার পেছন ফিরে চায়। নীলাঞ্জনার করার কিছুই ছিলো না। শুধু বলল,,,,,
-- ভালো করে পড়িস তুলতুলি, দেখবি তুই অনেক ভালো করবি।



 

Show all comments
  • আনিসুর রহমান খান ৬ মার্চ, ২০১৭, ২:২৪ পিএম says : 0
    রহিমা আক্তার মৌ 'র শিশুতোষ গল্পটি পড়েছি। একটি শিক্ষামূলক গল্প। এরকম. ভাবে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ যদি তুলতুলিদের পাশে থাকে তাহলে শিক্ষার সংকট থাকবে না। গল্পকার সুন্দর সহজ সরল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন তার গল্পের বয়ন বিন্যাস। গল্পের প্লট এমনই হওয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন