Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয় যুক্তরাষ্ট্র

কংগ্রেসে ট্রাম্প প্রশাসনের চিঠি

প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ৫ মার্চ, ২০১৭

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউটিওর সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয় বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। কংগ্রেসে পাঠানো চিঠিটিতে এ কথা বলা হয়। এ বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখিত বিষয়কে এককথায় আমেরিকা ফার্স্ট-নীতির বাণিজ্য সংস্করণ বলা যায়। মার্কিন পণ্য কিনতে ও মার্কিন নাগরিকদের নিয়োগ দিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন, তারই আভাষ রয়েছে চিঠিতেও। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ডব্লিউটিও’র সিদ্ধান্ত সম্পর্কে এমন ঘোষণা নজিরবিহীন মনে করা হচ্ছে। এর জেরে বশ্বিক সংস্থাটির বিরোধ নিষ্পত্তি বিভাগের (ডিসপিউট সেটলমেন্ট বডি) রায়ের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। আন্তর্জাতিক ও বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির আদেশগুলো ডিএসবি থেকেই এসে থাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগে থেকেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) বিপর্যয় বলে অভিহিত করে আসছেন। তবে সংস্থাটির বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম আনুষ্ঠানিক আক্রমণের ঘটনা ঘটে গত বৃহস্পতিবার। ওই দিন মার্কিন কংগ্রেসে পাঠানো এক চিঠিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউটিওর সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয়। এক প্রতিক্রিয়ায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেছেন, চীন সবসময় উন্মুক্ত ও নিরপেক্ষ ডব্লিউটিওকে সমর্থন দিয়ে যাবে। ট্রাম্প প্রশাসনের চিঠি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে চীনা মুখপাত্র বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে ডব্লিউটিও যাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে চীন সবক’টি সদস্য দেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। গেং শুয়াং আরো বলেন, ডব্লিউটিওতে যোগদানের পর থেকে চীন স্বপ্রণোদিতভাবে সংস্থাটির কার্যক্রম সমর্থন করে এসেছে। চীনের এ অবস্থান অটুট থাকবে। ডবিøউটিওকে কেন্দ্রে রেখে একটি সুষ্ঠু ও উন্মুুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা বহাল রাখলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার হবে। এতে সব পক্ষেরই স্বার্থ নিহিত আছে। ডবিøউটিও মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সংস্থার প্রতি বড় কোনো হুমকি হিসেবে দেখতে রাজি হননি। মার্কিন বাণিজ্য দূতের কার্যালয় (ইউএসটিআর) আন্তর্জাতিক ও বহুপক্ষীয় বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। ইউএসটিআর অফিস গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউটিওতে যোগদানের শর্তগুলো পর্যালোচনা করেছে। ১৯৯৫ সালে ডব্লিউটিও গঠনের সময় যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটিতে যোগ দেয়। ডব্লিউটিওতে যোগদানের শর্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, কংগ্রেস স্পষ্ট করেছে যে মার্কিনরা প্রত্যক্ষভাবে ডব্লিউটিওর সিদ্ধান্তের প্রতি দায়বদ্ধ নয়।  ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্টের বাণিজ্যনীতি এজেন্ডা শীর্ষক এ চিঠিতে আরো বলা হয়, বাণিজ্যনীতির বিষয়গুলোয় মার্কিন সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে ট্রাম্প প্রশাসন আগ্রাসী অবস্থান নেবে। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কথিত আমেরিকা ফার্স্ট মতবাদ হাজির করেছেন।  ১৬৪ দেশকে নিয়ে গঠিত ডব্লিউটিও সাধারণত সবক’টি সদস্য দেশের জন্য প্রযোজ্য চুক্তি সম্পাদনে জোর দিয়ে থাকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এক্ষেত্রেও ডব্লিউটিওর গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ইউএসটিআরের চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, বহুপক্ষীয় আলোচনার পরিবর্তে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় জোরারোপ করলেই বাণিজ্যকেন্দ্রিক লক্ষ্যগুলোর সেরা রূপায়ণ সম্ভব। ইউএসটিআরের এ চিঠির বিষয়ে ডব্লিউটিও মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো নমনীয় অবস্থান নিয়েছেন। চিঠির বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে, বাণিজ্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিবিধ উদ্বেগ রয়েছে। ডব্লিউটিওর ডিসপিউট সেটলমেন্ট বডি সম্পর্কেও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। রবার্তো আজেভেদো বলেন, এসব উদ্বেগ অথবা অন্য যেকোনো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমি তাদের সুবিধামতো যেকোনো সময়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। বহুপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষণবাদী মনোভাব জোরদার হওয়ায় চীন আবারো বিদ্যমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বন্দোবস্তের পক্ষে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বিরোধ নিষ্পত্তিতে কালক্ষেপণ এবং দীর্ঘসূত্রতার জন্য ডব্লিউটিওর ডিসপিউট সেটলমেন্ট বডি (ডিএসবি) এর আগে বিভিন্ন পক্ষের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। তবে এরপরও ১৯৯৫ সালের পর থেকে ডিএসবি ভর্তুকি, শুল্কসংক্রান্ত পাঁচ শতাধিক ইস্যু নিয়ে শুনানি আয়োজন করেছে এবং ৩৫০টির বেশি বিরোধে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ডিএসবির সিদ্ধান্ত অমান্য করলে ডব্লিউটিও কোনো দেশকে শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার রাখে না। তবে সংস্থাটি সেক্ষেত্রে পাল্টা ব্যবস্থা আনুমোদন করতে পারে। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ফেলো সেবাস্তিয়ান দুলিয়েন মনে করেন, ডিএসবি হলো এমন একটি ফোরাম যেখানে একটি ছোট রাষ্ট্রও পরাশক্তির বিরুদ্ধে নিজের অভিযোগ জানাতে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানার আশা করতে পারে। সেবাস্তিয়ান দুলিয়েন এএফপিকে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে ভাবছেন যে শুধু অন্য রাষ্ট্রগুলোই ডিএসবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নালিশ করছে, বিষয়টি তেমন নয়। অনেক সময় যুক্তরাষ্ট্রই অন্যান্য দেশকে ডিএসবিতে হাজির করছে। সেবাস্তিয়ান দুলিয়েন মনে করেন, ডব্লিউটিওকে পাশ কাটিয়ে গেলে তুলনামূলক ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতির দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইউএসটিআরের চিঠিটিকে সেবাস্তিয়ান দুলিয়েন সতর্কতা সংকেত মনে করছেন। এএফপি, ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ