Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কানাডায় ইসলামবিদ্বেষ বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : প্রায় এক মাস আগে কুইবেক সিটির একটি মসজিদের উপর প্রাণঘাতী আক্রমণের পর কানাডায় বহিরাগতদের প্রতি বিরূপতা, রাজনৈতিক বিভাজন ও হেট ক্রাইম উঠতির দিকে। গত ১৭ ফেব্রæয়ারি ডাউনটাউন টরন্টোর ‘মসজিদ টরন্টো’-র সামনে বিক্ষোভকারীদের ভিড়; তাদের হাতে যে সব প্ল্যাকার্ড, তাতে লেখা ছিল, ‘ইসলামের প্রতি ‘না’, ‘মুসলিমরা সন্ত্রাসবাদী’। ওদিকে টরন্টো জাতিগতভাবে কানাডার সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ শহর। কিন্তু টরন্টোর বৃহত্তর সমাজ অতি শিগগিরই একটি পাল্টা ডেমোর আয়োজন করে, যা থেকে বিভিন্ন সমর্থনের বার্তা এখনও মসজিদটির গায়ে লটকানো আছে: ‘বৈচিত্র্যই আমাদের শক্তি’, ‘আমাদের মুসলিম ভাইবোনদের প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থন’। কিন্তু দৃশ্যত বহিরাগত বিদ্বেষ সারা দেশেই বেড়ে চলেছে, সাধারণ কানাডীয়রা যা নিয়ে উদ্বিগ্ন। জনসাধারণ ও রাজনীতিক মহলের একটি ক্ষুদ্র কিন্তু সোচ্চার অংশ ক্রমেই আরো বেশি বৈরিতামূলক ভাষা ব্যবহার করছে।
তবে সব মিলিয়ে হেট ক্রাইমের সংখ্যা যে খুব বেড়েছে, এমন নয়। এছাড়া ইসলাম বিদ্বেষের মতো ইহুদি বিদ্বেষের বিক্ষিপ্ত ঘটনাও পুলিশের নজরে এসেছে, যেমন টরন্টোর একটি কন্ডোমিনিয়াম ভবনের ইহুদি বাসিন্দাদের ফ্ল্যাটের দরজায় ইহুদি বিদ্বেষী বার্তা লেখা হয়েছে।
গত ২৯ জানুয়ারি কুইবেক সিটির ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের উপর বন্দুক আক্রমণে ছ’জন মুসল্লি শাহাদাতবরণ করেন, আহত হন আরো অনেকে। এই ঘটনা কানাডার মুসলিমদের বিমূঢ় করেছে। ঘটনাটিকে সর্বত্র সন্ত্রাসবাদের ঘটনা বলে অভিহিত করা হয় ও তার নিন্দা করা হয়। হাজার হাজার কানাডীয় মিছিল করে ও নীরব প্রহরার মাধ্যমে হতাহতদের পরিবারবর্গ ও বৃহত্তর মুসলিম সমাজের সঙ্গে তাদের সংহতি প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল অবধি কানাডায় হেট ক্রাইমের সংখ্যা কিন্তু কমতেই দেখা যায় - এর পরের তথ্য আপাতত সরকারের কাছে নেই অথবা এ যাবৎ প্রকাশ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট তিন বছরে মুসলিমদের লক্ষ্য করে হেট ক্রাইমের সংখ্যা কিন্তু প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা।
কুইবেক সিটির যে মসজিদটির উপর বন্দুকধারী আক্রমণ চালায়, গত বছর তার বাইরে একটি শূকরের মাথা রাখা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ফেডারেল নির্বাচনের ঠিক পর পরই অন্টারিও-র পিটারবরো শহরের একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দেশ জুড়ে বিভিন্ন ঘটনায় মুসলিম মহিলাদের গালিগালাজ করা হয়েছে, এমনকি তাদের দিকে থুতু ফেলা হয়েছে অথবা অন্যভাবে আক্রমণ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে মন্ট্রিয়লের দু’টি মসজিদের জানলার কাচ ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং পুলিশের কাছে প্রায় দু’ডজন হেট ক্রাইমের খবর এসেছে।
কানাডা ২০১৫ সালের নভেম্বর মাস যাবৎ ৪০ হাজারের বেশি সিরীয় উদ্বাস্তুকে গ্রহণ করেছে। কিন্তু অ্যাঙ্গাস রিড ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক একটি জরিপ অনুযায়ী ৪১ শতাংশ কানাডীয়র মতে, সরকার বড় বেশি উদ্বাস্তু গ্রহণ করেছেন এবং এখন উদ্বাস্তু নেওয়া বন্ধ হওয়া উচিত।
জাতিবাদকে নিন্দা করে প্রস্তাব ও তার প্রতিক্রিয়া
সংসদে আনীত সাম্প্রতিক একটি প্রস্তাবে কানাডায় ইসলাম বিদ্বেষের নিন্দা করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু দৃশ্যত ফল হয়েছে ঠিক তার বিপরীত। ১০৩ নম্বর প্রস্তাবটির ফলে দক্ষিণপন্থী সমর্থক, রাজনীতিক ও মিডিয়া কলামনিস্টরা এবং সাধারণভাবে ইসলাম বিরোধীরা সকলেই সোচ্চার হয়েছেন। প্রস্তাব ১০৩ ফেডারাল সরকারের প্রতি ‘জনমানসে ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষ ও আশঙ্কার পরিবেশ’ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহŸান জানিয়েছে ও যাবতীয় জাতিবাদ ও ধর্মভিত্তিক বৈষম্যকে নিন্দা করতে বলেছে।
প্রস্তাবটির পিছনে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উদারপন্থী সরকার এবং বাম-ঘেঁষা নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থন আছে। অপরদিকে দক্ষিণপন্থী দলগুলির কাছে এই প্রস্তাব মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ। ইক্রা খালিদ, যে সংসদ সদস্য সংসদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন, তাকে এ মাসে শত শত হেট বার্তা ও হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ