পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : বাংলাদেশের আম গাছে যখন মুকুল, তখন ভারতীয় পাকা আম দখল করে নিয়েছে নরসিংদীসহ দেশের আমের বাজার। বাহারি রঙ্গের ভারতীয় পাকা আমে বাজার সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দাম কম নয়। এক কেজি ভারতীয় পাকা আম বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। চতুর বিক্রেতারা গ্রাহক বুঝে প্রতি কেজি আম ৪০০ টাকা দরে পর্যন্ত বিক্রি করছে। বাংলাদেশের ধনী গ্রাহকরা তাদের পারিবারিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এসব আম নিয়ে ফ্রিজ ভর্তি করছে। আর এসব ভারতীয় পাকা আম দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করে বাহবা নিচ্ছে। আর এ অবস্থা বাংলাদেশে ঘটছে প্রতিবছরই। আম ভারতের জাতীয় ফল বিধায় সেখানে আমের উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। ২০১০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের আমের উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ৫০ লাখ ছয় হাজার মেট্রিক টন।
যা তৎকালীন সময়ে সারা পৃথিবীর আমের ফলনে ৪০.৪৮ ভাগ। দ্বিতীয় স্থানে ছিল চীন, ৪৩ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ মোট উৎপাদনের ১১.৭২ ভাগ। তৃতীয় স্থানে ছিল থাইল্যান্ড, ২৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। মোট উৎপাদনের ৬.৮৭ ভাগ। চতুর্থ স্থানে ছিল পাকিস্তান, ১৮ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। মোট উৎপাদনের ৪.৯৭ ভাগ। পক্ষান্তরে সে সময় বাংলাদেশে আমের উৎপাদন হয়ে ছিল ১০ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। মোট উৎপাদনের ২.৮২ ভাগ। সারা বিশ্বে আম উৎপাদনে বাংলাদেশের স্থান ছিল অষ্টম। একই বছর সারা পৃথিবীতে আমের ফলন হয়ে ছিল তিন কোটি ৭১ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন। এই পরিসংখ্যানের ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে আমের ফলনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ভারত এখন সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ আম উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক দেশ। এ ক্ষেত্রে ভারতের রফতানিকৃত আমের বেশির ভাগই আসে বাংলাদেশে।
বৈধ পথের সাথে সাথে অবৈধ পথেও ভারত থেকে আম আসে বাংলাদেশে। যে বছর ভারতে বেশি আম উৎপাদিত হয়, সে বছর বাংলাদেশে উৎপাদিত আমের মূল্য কমে যায়। অর্থাৎ আমের বাগান চাষিরা আম চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে আমের উৎপত্তিস্থল হচ্ছে আসাম ও বার্মা। সেখান থেকেই আম সারা ভারতসহ পৃথিবীর উষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল দক্ষিণ আমেরিকা, হাওয়াই, দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব আমেরিকা, মিশর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলো বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী ইত্যাদি জেলায় উন্নত জাতের আম উৎপাদিত হয়। এসব এলাকাসমূহে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমের চাষাবাদ হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক আম সারা বাংলাদেশে জেলা গুলোতেই রয়েছে। বাংলাদেশে এমন বাড়ির সংখ্যা কম যে সব বাড়িতে অন্তত একটি আম গাছ নেই। কিন্তু এর পরও বাংলাদেশে আমের ফলন সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছতে পারছে না।
কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে আম উৎপাদনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান ছিল চতুর্থ। কিন্তু বর্তমানে আম উৎপাদনে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে গিয়ে ঠেকেছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যেসব উন্নতজাতের আম চাষাবাদ করা হয়, সেগুলোর রুটিন মাফিক পরিচর্যা করা হলেও প্রাকৃতিক আমের কোনো পরিচর্যা হয় না। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক আমগাছগুলো আমের আঁটি থেকে সৃষ্টি হয়। বিনা পরিচর্যায় বেড়ে উঠে। বিনা পরিচর্যায় মুকুল ধরে। বিনা পরিচর্যায়ই গাছে আম ধরে এবং পাকে। এসব প্রাকৃতিক আমগাছগুলোতে যদি রুটিন পরিচর্যার অধীনে আনা যেতো, তবে বাংলাদেশে আমের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়ে যেতো।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. লতাফত হোসেন জানিয়েছেন, আম গাছের বছরভিত্তিক একটি রুটিন পরিচর্যা রয়েছে। প্রতিটি বাড়ির মালিক যদি প্রতিবছর তাদের নিজ নিজ আমগাছগুলোর গোড়ায় সার, গোবর প্রয়োগ করতো এবং মুকুল ধরার সময় গাছে হরমোন স্পপ্রে করতো এবং মুকুল থেকে আমের গুঁটি বাধলে গাছে কীটনাশক স্পপ্রে করতো তাহলে আমের ফলন কয়েকগুণ বেড়ে যেতো। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের যে প্রাকৃতিক আমের ভ্যারাইটিগুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অনেক আম খেতে যেমন মিষ্টি, তেমনই ফলেও প্রচুর পরিমাণে। ছোট জাতের অনেক মিষ্টি আম রয়েছে, যেগুলো গাছে ধরলে পাতা দেখা যায় না। শুধু পরিচর্যার অভাবে প্রতিবছর ফলন কম হয়। এ ছাড়াও এখন উন্নত জাতের আমের গাছ বাড়ি বাড়িতেই রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ বহুসংখ্যক উন্নত জাতের আমের চারা বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করেছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে গড় উঠেছে বহুসংখ্যক নার্সারি। যেগুলোতে উন্নত জাতের আমের চারা উৎপাদন করা হয়। এসব চারাও গ্রাম-গঞ্জের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এসব গাছেরও কোনো পরিচর্যা হয় না। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব আম গাছের পরিচর্যার জন্য সব সময়ই তৈরি থাকেন। কিন্তু কেউ সেই সুযোগ কাজে লাগাতে আসে না। যার ফলে প্রতি বছর বাংলাদেশে আশাব্যাঞ্জক আমের ফলন হয় না। এই সুযোগেই বিদেশি বা ভারতীয় আম বাংলাদেশের বাজার দখল করে নেয়। ভারত প্রতি বছর তাদের মোট উৎপাদনের ২৫ ভাগেরও বেশি আম রফতানি করে থাকে। আর এই রফতানিকৃত আমের বেশির ভাগই আসে বাংলাদেশে। কিন্তু বাংলাদেশের সকল শ্রেণির মানুষ বিদেশি আম কিনে খেতে পারে না। ভরা মৌসুমেও ভারতীয় আম ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। পক্ষান্তরে বাংলাদেশি আম ২০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরেই পাওয়া যায়। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, একজন মানুষের প্রতিদিন ১২০ গ্রাম করে ফল খাওয়া প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশে যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হয় তা চাহিদার মাত্র এক চতুর্থাংশ। আমের ফলনের দিক থেকে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এরপরও বাংলাদেশের মানুষ বছরে জনপ্রতি দুই কেজির ওপরে আম খাওয়ার সুযোগ পায় না। পক্ষান্তরে একজন ভারতীয় নাগরিক বছরে ১২ কেজিরও বেশি আম খায়।
পাকিস্তানের নাগরিকরা খায় জনপ্রতি সাত কেজি। অথচ এক সময় এ বাংলাদেশ ছিল আমের প্রাচুর্য্যরে দেশ। প্রতি বছর আমের মৌসুমে গাছে গাছে আমের ব্যাপক ফলন হতো। গাছের নিচে উঁচু হয়ে আম পড়ে থাকত। কেউ কারো গাছের নিচ থেকে আম কুড়িয়ে নিতো না। প্রতিটি বাড়িতেই গাছ ছিল। প্রতি বাড়িতেই আমের প্রাচুর্য্য ছিল। বর্তমানে সে অবস্থা আর নেই। আমগাছের সঠিক পরিচর্যার অভাব এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আমের ফলন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। আর এই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের ফল আমদানিকারকরা বিদেশি আমের মনোপলি বা একচেটিয়া ব্যবসা করছে। আমদানিকৃত আমের উপর সরকারের কোনো নজরদারি না থাকায় ফল ব্যবসায়ীরা গলাকাটা ব্যবসা করছে। এক কেজি ভারতীয় আম ভ্যারাইটি ভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। অথচ ভারতে এসব পাকা আম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ ভারতীয় রুপিতে। ফল বা আম আমদানি ও বিক্রির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রতিবছর সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।