Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কর্মচারি সিন্ডিকেট ও দালালদের হাতে রায়পুরের সরকারি হাসপাতাল জিম্মি

| প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হারুনুর রশিদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) থেকে : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা সরকারি হাসপাতালের একশ্রেণির কর্মচারি আর দালাল চক্রের কাছে জিম্মি রোগী ও স্বজনরা। তাদের নানামুখী অত্যাচারে নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ। রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ কিনাসহ সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় দুই প্রভাবশালী শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সরকার নির্ধারিত ফি-এর বাইরে বাড়তি টাকা না দিলে এখানে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যেন রীতিমতো দুর্লভ ব্যাপার। এতে করে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা হাজার হাজার রোগীর দুর্ভোগ চরমে। আর এসব বিষয় হাসপাতালের চিকিৎসকদের চোখের সামনেই হলেও অথচ কিছুই যেন দেখেন না তারা।
সূত্রে জানিয়েছে, প্রায় ১৬-১৭ বছর ধরে নার্স আরজু, নাছিমা, ইয়াছমিন ও আয়া হাজেরা বদলি না হওয়ায় দীর্ঘদিন তারা একই হাসপাতালে চাকরি করায় হাসপাতালের সামনের এস জাহানারা ফার্মেসির মালিক রুমান ও আরমানের সাথে সিন্ডিকেট করে সকল অবৈধ ব্যবসা করছে। রুমান ও আরমান একে অপরে আপন ভাই। তাই হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহের লাইন্সেও আরমান এন্ড বার্দাস নামে। নার্স ও আয়ার চাকরি বদলিযোগ্য হলেও দীর্ঘ ১৬-১৭ বছরেও কোন বদলি না হওয়ায় তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ডাক্তার ও রোগীরা। এই সুযোগে হাসপাতালের সামনের এস জাহানারা ফার্মেসির মালিক রুমানকে হাতে নিয়ে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে নিজেদের ইচ্ছামতো নানা রকম অবৈধ কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। ডিএসএফ (হলুদ) কার্ডের ওষুধ চুরি, রক্ত বাণিজ্য ও ডেলিভারির পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধের কোন তালিকা ছাড়া নিজের ইচ্ছে মতো ওষুধ আনা থেকে শুরু করে নানারকম অপরাধমূলক কর্মকান্ডে এরা লিপ্ত থাকে। এই চক্রকে দমন করা অসম্ভব বলেই মনে করে কর্তৃপক্ষ। এরা গোটা হাসপাতালকে জিম্মি করে রাখেন এ অভিযোগ রোগী, চিকিৎসক, কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার। প্রভাবশালী রুমান ও আরমানের কারনে নার্স ও আয়ারা কর্তব্যে অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া কঠিন। রুমান ও আরমানদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে তার ফল হয় ভয়াবহ। ২০১৩ সালে যোগদানের পর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শিশির বাবু রুমান ও আরমানের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে হাসপাতালের ভিতরেই তাকে মারধর করে লাঞ্ছিত করায় তিনি চলে যেতে বাধ্য হয়। তারপর থেকে যেই কর্মকর্তাই আসে কৌশলে যতটা সম্ভব ঠিক সেভাবেই পরিচালনা করে। আর দিন দিন তাদের তাই চলে যায় হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব। তাই ডিএসএফ-এর সরকারি মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো-৩১৭২৮০) কোন কর্মকর্তা না হলেও রুমান নিজেই ব্যবহার করেন। এছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে রোগী আনার জন্য রয়েছে আরও বাইরের দুই দালাল। বরবংশী খাসেরহাট এলাকার ইবা রহমান ও তার মা কাউছার পারভিন অন্যতম। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সকল রোগী ধরে নিয়ে আসেন রুমান ও আরমানের পাতানো হাসপাতালের সামনে অবৈধ জনসেবা এন্ড প্যাথলজি প্রতিষ্ঠানে। এতে ডাক্তাররা ব্যর্থ হয়ে রোগীর সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার লিখে দিতে হয় ওই প্রতিষ্ঠানের নামে।
এসব ঘটনায় সিনিয়র নার্স আরজুর সাথে সরাসরি কথা বললে উত্তেজিত হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় সিন্ডিকেট নেতা রোমান এসে বলেন, কি কয়েছে আমার কাছে বলেন না হলে আপনি এখন চলে যান। পরে অনেকটাই বাধ্য হয়ে চলে আসতে হয় এই প্রতিবেদককে।
যোগাযোগ করা হলে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শায়লা জাহান বলেন, তিন বছরের মধ্যে সরকারি চাকরি বদলিযোগ্য হলেও ১৬-১৭ বছর ধরেই এখানে কাজ করছে কিছু নার্স ও আয়া। নার্স ও আয়া বদলির বিষয়টি আমাদের কিছু করার নেই। ডিএসএফ-এর সিজার রোগীদের ৩ হাজার টাকার ওষুধ সরকারিভাবে এস জাহান ওষুধের দোকান থেকে দেয়া হয়। ওষুধের সাথে রোগীর তালিকা ও দাম লিখে দেয়া এবং ওধুষ রোগীর অভিভাবকের কাছে দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তারা কি করছে এটা আমার জানা নেই।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ