ভালোবাসি মাতৃভাষা
‘মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা...’আমার ভাষা, মায়ের ভাষা, বাংলা ভাষা।জন্মেই মাকে মা বলে
মাহমুদ শাহ কোরেশী : অমর একুশে’ কথাটা উচ্চারণে অনিবার্যভাবে আমরা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করি। সেই থেকে ৬৪ বছর ধরে দেশে-বিদেশে উদযাপিত হয়ে আসছে এই দিবস ও সন্ধ্যা। ঢাকায় হামিদুর রহমান ও নভেরা পরিকল্পিত শহীদ মিনারের অনুরূপ ছোট-বড় মিনারে এখন পৃথিবীর বহুদেশ ছেয়ে গেছে। রাত বারোটা উত্তীর্ণ হতেই ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি গাইতে গাইতে স্থানীয় ও বিদেশী সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিরা কিংবা ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই ফুল দিয়ে তাদের অনুরাগ প্রকাশ করে থাকেন। সুদীর্ঘ ছয় দশকে এই প্রথা দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। লন্ডন, প্যারিস, টোকিও কোথাও বাকি নেই। বিদেশের প্রত্যন্ত শহরগুলোতেও বিগত বহু বছর ধরে অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা উদযাপিত হয়ে চলেছে। পঞ্চাশ ষাটের দশকে এমনকি সত্তর দশকের একটা সময় পর্যন্ত বিদেশে ব্যাপকভাবে অমর একুশে উদযাপিত হতে পারতো না। কেননা সেখানে উৎসাহী বাঙালির সংখ্যা উপযুক্ত পরিমাণে ছিল না। ক্রমস সংখ্যা বাড়লো। পাশ্চাত্যে আমাদের কিছু উপনিবেশ গড়ে উঠলো। তাছাড়া দেশে-বিদেশে অনেকটা মিডিয়ার প্রভাস্টে উৎসাহ-উদ্দীপনার অন্ত থাকলো না। এতে বিশেষভাবে প্রভাব চিন্তার করেছে লন্ডনের ইস্টএন্ডের হোয়াইট চ্যাপেলে বাংলা ঐতিনের কাছেই আলতাফ আলী পার্কে স্থাপিত শহীদ মিনার। প্রতি বছর বহু আগে বর্ণবাদীদের দ্বারা নিহত আলতাফ আলীর স্মৃতিতে নামকরণ হয়েছে এই পার্কের। এক স্মৃতিমেদুর শোকগম্ভীর পরিবেশে এখানে অমর একুশে উদযাপিত হয়? কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রায়শ রাজনৈতিক দলসমূহের অতিউৎসাহী সমর্থকবৃন্দ কোলাহল ও উত্তেজনা সৃষ্টি, পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং মারপিট শুরু করে দেয়। অর্থাৎ আমাদের বয়সের ভিন্ন দিকটিও উন্মোচিত করে দেয়া হয়। এটি লন্ডন ছাড়া ইউরোপ-আমেরিকার অন্যান্য স্থানেও সংঘটিত হয় বলে জানা গেছে।
আমরা আশা করব, বিদেশে আমাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তাঁরা উপযুক্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় অমর একুশে উদযাপন করবেন। বহির্বিশ্বে বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপনের প্রয়াস পাবেন। আমাদের সৌভাগ্য, উন্নতমানের সাহিত্য-সংস্কৃতির নিদর্শন আজ আমরা পৃথিবীর মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে পারি। বিদেশে বিশেষ সহনশীলতার সঙ্গে পবিত্র অনুষ্ঠানসমূহ উদযাপন করা বাঞ্ছনীয়। ১৯৫২ সাল থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ব্রতী থাকা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে আত্মস্থ হওয়া। স্বাধিকার ও স্বাধীনতা অর্জনে সাফল্য লাভ আমাদের জাতীয় জীবনের বিরাট গৌরবময় অধ্যায়। কিছু উগ্র-মস্তিষ্কের মানুষের উৎকট কার্যকলাপের ফলে দেশের বাইরে আমাদের সুনাম খ-িত হোক তা কখনো কাম্য হতে পারে না।
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।