একুশের চেতনার বাস্তবায়ন ছাড়া প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন হয় না
আবদুল আউয়াল ঠাকুর : সাধারণত একুশের কথা উঠলেই আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলি। অবশ্যই মায়ের ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে নিয়েই সব কিছুর সূত্রপাত। তবে এটাই
ম. মীজানুর রহমান : বাংলার কবি লিখে গেছেন, “মোদের গরব, মোদের আশা, আমরি’ বাংলা ভাষা...”
পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণীর তথা জীব-জন্তুর আপন আপন ভাষা আছে। জীবনযাপন ও প্রাণ রক্ষার তাগিদে প্রতিটি জীব নিজ নিজ ভাষায় পারস্পরিক সম্পর্ক নিবিড় করে রাখে। আমরা সেসব ভাষা বুঝি বা না বুঝি সে ভাষা প্রাণী বিশেষের মাতৃভাষা। কীট-পতঙ্গ জন্তু-জানোয়ার প্রভৃতির নানা শব্দ-সংকেত হয়ত তাদের আপন আপন ভাষা ও ভাবসূচক আত্ম-প্রকাশের ধ্বনিমাত্র। এই শব্দ ধ্বনি উচ্চারণ নড়াচড়া আকার-ইঙ্গিত ভিন্ন ভিন্ন আত্ম-প্রকাশের মাধ্যমই হচ্ছে ভাষার চলন। প্রকৃতি তার আপন মাধুরী মিশায়ে জীব-জগতে কি যে অপার ভাষা-রহস্য নির্মাণ করে রেখেছে তার অনেক কিছুই মানবকুলের অজানা। প্রকৃতির এই ভাষার স্বাধীনতা অবারিত ও অনির্বচনীয়। মানুষ ছাড়া অন্য কোন জীব-জন্তু কীট-পতঙ্গ পাখি-পক্ষী কেউই আপন ভাষা সম্পর্কে এমন বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম নয়। বিজ্ঞানী বলেন, গাছেরাও কথা বলে। তবে তাদের ভাষা আমরা বুঝি না। তাহলে বুঝতে হবে, ভাষার স্বাধীনতা আছে সর্বত্র। বিশ্বব্যাপী সর্বমোট কত ভাষাভাষী লোকের বসবাস তা আজও নির্ণিত হয়নি। ভাষার পার্থক্য জাতিতে জাতিতে ভিন্ন, এলাকা বিশেষে স্থান বিশেষে ভিন্ন, গোত্র বিশেষে উপজাতি ও উপভাষা বিশেষে ভিন্ন।
এ বিষয়ে প্রাক্তন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব কফি আননের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি ২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারীতে প্রথম ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদ্বোধনকালে বলেন, “...আজ সমগ্র মানবকুলের ভাষার মূল্যবোধ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সহনশীল চৈতন্যবোধ সর্বলোকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। বিশ্বায়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এই যুগে বিশ্বব্যাপী কেবল কতিপয় ভাষা জাগতিক ভাষারূপে বিদ্যমান কিন্তু আরো যেসব বহুমুখী ভাষা স্থানীয়ভাবে সক্রিয় রয়েছে তার মর্যাদাপূর্ণ স্থান দেওয়া এখন আমরা জরুরী মনে করি। জাতিসংঘ ও ইউনেস্কো বহুকাল ধরে কাজ করে আসছে মাতৃভাষার উন্নয়নকল্পে এবং ভাষাবৈচিত্র্য অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় শিক্ষাদান অব্যাহত রেখেছে। আশঙ্কা এই, আজ যে ছয় হাজার ভাষা কথ্য রয়েছে আগামী বিশ বছরের মধ্যে তা যাতে বিলুপ্ত না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে মানবজাতির ঐতিহ্য ঐসব সাধারণ ভাষাগুলি সংরক্ষণে দ্বিগুণ প্রয়াস অব্যাহত রাখা। সর্বোপরি আমাদের যুগের শিক্ষা হচ্ছে, পারস্পরিক ভাষাসমূহ তাজ্য না করে অন্তর্গত মহিমায় মানবতার কল্যাণে একের অধিক ভাষা রপ্ত করে মানুষে মানুষে যোগাযোগ সৃষ্টি করে মানব-জীবন সুসমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা। সকল মানুষের সকল ভাষা সংরক্ষণ করেই একভাষা অন্য ভাষার সঙ্গে সহবস্থান করুক এই নব শতকে।...”
মোটামুটি ২২টি মাতৃভাষা বিশ্বব্যাপী আপন আপন ঐতিহ্যে সভ্যতায় ও সংস্কৃতিতে জাজ্বল্যমান-
১. চীনা (১২৫ কোটি লোকের ভাষা), ২. ইংরাজী (৪৯.৭০), ৩. হিন্দি (৪৭.৬০), ৪. স্পানিশ (৪০.৯০), ৫. রাশিয়া (২৭.৯০), ৬. আরবী (২৩.৫০), ৭. বাংলা (২০.৭০), ৮. পর্তুগীজ (১৮.৭০), ৯. ফরাসী (১২.৭০), ১০. জাপানী (১২.৬০), ১১.জার্মানী (১২.২৬), ১২. উর্দু (১০.৪০), ১৩. পাঞ্জাবী (৯.৪০), ১৪. কোরীয় (৭.৪০), ১৫. তেলেগু (৭.৫০), ১৬. তামিল (৭.৪০), ১৭. মারাঠি (৭.১০), ১৮. ভিয়েতনামিজ (৬.৮০), ১৯. জাভানিজ (৬.৪০), ২০. ইতালীয় (৬.২০), ২১. তুর্কি (৬.১০), ২২. তাগালোগ (৫.৭০); এতদ্ব্যতীত বিশ্বব্যাপী প্রায় তিন হাজারের অধিক সংখ্যায় রয়েছে বিভিন্ন উপজাতীয় উপভাষা।
বাংলা আমার ভাষা। এ বড় মধুরতম ভাষা আমার! আমার সকল অনুভূতির অভিব্যক্তি নানাভাবে আকারে-প্রকারে প্রকাশিত হয় এই ভাষায়। এ যে আমার মাতৃভাষা! এমন কি অন্যভাষায় যখন আমি কথা বলি বা লিখি তা আমাকে মনে মনে ভাষান্তর করেই বলতে হয়, লিখতে হয়। এ আমার হৃদয়ের অন্তর্গত আত্মানুভূতির স্পর্শে আপনা-আপনিই বিগলিত হয়ে পশে যায় মরমে মরমে। এমন কি আমি যখন গান গাই তখনো বাংলা ভাষা আমার সুতন্ত্রীত হয়ে যায় স্বরধ্বনিতে। যে কোন ব্যক্তি তিনি বিশ্বের যেখানেই থাকুন না কেন যে অঞ্চলের বা যে দেশেরই হন না কেন তিনি একইভাবে তাঁর মাতৃভাষা ভিন্ন ভিন্ন স্বরধ্বনিতে হচেছ তন্ত্রীত। পারতপক্ষে তা হচ্ছে প্রতিটি ব্যক্তির ব্যক্ত কথাবার্তার ভাষিক স্বাতন্ত্র্যমাত্র । সর্বলোকে ‘সময়’ আমাদের একই সূত্রে অভিন্ন ডানায় ভাসিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। সময়-অশ্বের রাশ টেনে ধরার ক্ষমতা আমাদের কারুরই হাতে নেই। আমরা শুধু কথা বলি সময়ের ভাষায়। বিষয়টি সর্বজনেই আপেক্ষিক।
১
ছোটবেলা থেকেই জীবনের যাত্রাপথে আমরা বেড়ে উঠেছি মা-বাবার যতেœ লালনপালনে আর শিক্ষকের পরিচর্যায় শিক্ষাদীক্ষায়। বিশ্বের সকল সমাজের সকল শিশুই যে এমনিভাবে বেড়ে উঠছে তা নয়, যদিও মানবিক অধিকারের ভিত্তিতে সকল শিশুর এমনিভাবে বেড়ে ওঠাাটাই নায্য প্রাপ্য। প্রতিটি রাষ্ট্র কর্তৃক জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা অপরিহার্য করা অত্যাবশ্যক।
আমি যদি সঠিকভাবে আমার গাছের যতœ না নিই তাহলে আমি তার কাছ থেকে সুফল আশা করতে পারিনা। গাছ বেড়ে ওঠে সযতেœ সঠিক পরিচর্যায় আলো আর আবহাওয়ার ভারসাম্যে। সে গাছ আমাকে দেবে সুমিষ্ট ফল। সেই একই সূত্র প্রযোজ্য সর্বত্র এবং সকল ক্ষেত্রে। তুমি যদি তোমার ভাষা সুমিষ্ট ও সুন্দরভাবে বলতে চাও তাহলে তোমাকে তা যথাযথভাবে জানতে হবে, শিখতে হবে। এর ব্যাকরণ আছে, বাক্য-বর্ণবিন্যাস আছে। তোমার কথ্যবাক্য ব্যাকরণগত শুদ্ধ হতে হবে শব্দোচ্চারণে বাগ্ধারায়।
আমাদের বাংলাভাষা প্রচলিত রয়েছে বাংলাদেশের জন্মাবধি। তবে এ বাংলাদেশ খ-িত রাজনৈতিক কারণে। খ-িত একাংশটি এখন পশ্চিম বঙ্গ (ভারতের অঙ্গ রাজ্য)। ১৯৪৭ সালে ভারত-বিভক্তির পর পাকিস্তানের অন্তর্গত পূর্ববঙ্গের নামকরণ করা হয় পূর্ব-পাকিস্তান।
পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তাানী শাসকদের মতদ্বৈধতা, স্বায়ত্তশাসন ও অন্যান্য বিবিধ দ্বন্দ্বাত্মক কারণে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ করে বাঙালীরা পূর্ব-পাকিস্তানের নামকরণ করে বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।
তবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বহু পূর্বে মধ্যযুগেই বাঙলায় বা বঙ্গদেশে (অখ-) বাংলা ভাষার উন্নয়ন শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ষোড়শ শতকের একজন মুসলমান কবিকে দিয়েই শুরু করা যাক। সৈয়দ সুলতান (১৫৫০-১৬৪৮) সেই কবি যিনি মধ্যযুগে বাংলা কবিতার ভাষায় যে পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন তার কতিপয় চরণ নিদর্শন স্বরূপ দেয়া হল
“আজ্রাইল মহামতি আইল বায়ুর গতি
রসূলের পুরীর দুয়ারে ॥
রসূলের নাম ধরি ডাকে কহে ভক্তি করি
আজ্ঞা মাগে যাইতে অন্তপুরে ॥...”
(রসূলের অন্তিম শয্যা)
শব্দের অনাড়ম্বরতা লক্ষ্যযোগ্য। ‘ডাকে কহে’ বাংলা চলিত ও সাধুভাষার সংমিশ্রণ। সে যুগের ঐ কবির সঙ্গে তুলনীয় অধুনা যুগের কবিদের কবিতায় আমরা চলিত ও সাধু বাংলার সংমিশ্রণ দেখতে পাই। শুধু আঙ্গিকের, ভাবের বৈচিত্র্য ছাড়া ভাষার বাক্সময়তায় তা বোধ করি রবীনদ্রনাথ, নজরুল, জসীম উদদীন, জীবনানন্দদাশ প্রমুখের কবিতায়ও দেখতে পাওয়া যায়। আর এরমধ্যে দেখা যায় মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষা সাহিত্যের সঙ্গে আধুনিকতার দূরতম আত্মীয়ের মতো পরম স্নিগ্ধ সাযুজ্য।
তদানীন্তন ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এদেশে আগত ইংরেজ প্রশাসকদের দেশীয় ভাষায় শিক্ষালাভের সুবিধার্থে। তখন বাংলা ভাষা শিক্ষাটা তাদের কাছে বড় জরুরী ছিল। ইংরেজরা এদেশের শাসক হওয়ার পূর্বে রাষ্ট্রভাষা ছিল ফারসী। বাংলা ভাষার মধ্যে তৎকালে প্রচুর আরবী-ফারসী শব্দ যুক্ত হয়ে যায়। এসব বিদেশী শব্দগুলি পরিহার করে সংস্কৃত শব্দ বাংলা ভাষায় প্রচলন করাটা যুক্তিযুক্ত মনে করেছিলেন ইংরাজ শাসক এদেশের ন্যস্ত-স্বার্থপর মুৎসুদ্দীদের পরামর্শ-প্ররোচনায়। এই কাজটি চলে ফোর্টউইলিয়াম কলেজে। ১৮৪১ সালে ঈশ্বরচন্দ্র এই কলেজের সংস্কৃত বিভাগের প্রধান প-িত নিযুক্ত হন। উল্লেখ্য যে প-িত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১) সংস্কৃত ভাষা থেকে জটিলতামুক্ত সরল করলেন বাংলাভাষার ব্যাকরণকে। সেটি হচ্ছে ‘ব্যাকরণ কৌমুদি’। তাঁর লেখা থেকে একটা উদ্ধৃতি দিলে তাঁর পরিমার্জিত বাংলা রচনার নমুনা মেলে।
“...যদি আমার উপর তাঁহাদের সন্দেহ থাকিত, তাহা হইলে, অনায়াসেই তাঁহারা চোর ধরিতে পারিতেন, একে, ওকে, তাকে, সন্দেহ করিয়া বেড়াইতেন না। কারণ, যদিও আমি, ঐ সময়ে, খুব সতর্ক হয়ে কথা কই; কিন্তু মধ্যে মধ্যে, বিলক্ষণ অসামাল হয়ে পড়ে; অর্থাৎ হঠাৎ এমন সব কথা, আমার মুখ থেকে, বেরিয়ে পড়ে যে, আমি উপযুক্ত ভাইপো বলিয়া, অক্লেশে বুঝিতে পারা যায়। ভাগ্যক্রমে আমি এ পর্যন্ত ধরা পড়ি নাই, এবং শীঘ্র ধরা পড়িব, তাহাও সম্ভববোধ হইতেছে না। লোকে জানে আমার চালাকি ও ফচকিয়ামি আইসে না; কিন্তু, আমার পুস্তকে ঐ দুয়ের ভাগই অধিক; সুতরাং আমি ঐ অপূর্ব গ্রন্থের রচয়িতা, লোকের এরূপ সংস্কার হওয়া সম্ভব নহে। বস্তুত আমি চালাক ও ফচকিয়া নই। কিন্তু মা সরস্বতীর আমার উপর এমনই দয়া যে, লিখিতে বসিলে, অদ্বিতীয় অতি দুর্দান্ত মহাবল, পরাক্রান্ত কলম বাহাদুরের প্রফুল্ল মুখপদ্ম হইতে ফচকিয়ামি মধু ভিন্ন, অন্য কোন রস, বড় একটা, নির্গত হয় না।...” (আবার অতি অল্প হইল)
১৮৪৭ সালে প্রকাশিত তাঁর “বেতাল পঞ্চবিংশতি” হচ্ছে সরল সাধু বাংলায় লেখা প্রথম বই। প্যারীচাঁদ মিত্র ওরফে টেকচাঁদ ঠাকুর (১৮১৪-১৮৮৩) -এর ‘আলালের ঘরের দুলাল’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম কথ্যগদ্যে লেখা বই। এর পর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪) যিনি সাধু বাংলা বাকরীতি সংযুক্ত সংস্কৃত অলঙ্কার প্রয়োগ করে হৃদয়গ্রাহী বাংলা গদ্য প্রণয়ন করেন প-িত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাংলা রীতি-পদ্ধতি অনুসরণে।
৩
কিন্তু “আনন্দমঠ” উপন্যাসে এবং আরো কিছু সাহিত্যকর্মে তিনি সরাসরি মুসলিম-বিদ্বেষের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প উদগীড়ন করায় তাঁর সৎ-সাহিত্যিকসুলভ দিকটিই দুর্গন্ধময় হয়ে গেছে। কোন সাহিত্যিকেরই উচিত নয় তাঁর সাহিত্য-কর্মে মানবতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উসকে দিয়ে এক সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হানাহানিতে লেলিয়ে দেওয়া। এটা বাংলাভাষার প্রতিও এশরূপ বৈরিতা, কারণ বাংলা ভাষা মার্জিত সুন্দর ভালোবাসার ভাষা। মানব-বিদ্বেষের ভাষা নয়।
অন্যদিকে প-িত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫৩-১৯৩১) বিপুল বৌদ্ধ দোঁহা ও গান সংগ্রহ করলেন এবং তৎসঙ্গে আবিষ্কার করলেন হাজার বছরের বাংলা চর্য্যাপদ। তার জন্য তিনি সুদূর নেপালে গিয়ে নেপালের রাজকীয় গ্রন্থাগারে কিছুকাল পড়াশুনা করেছিলেন বলে জানা যায়। সেই থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অগ্রগতির পথে ধাবিত।
ঢাকার বাংলা একাডেমী থেকে বহুবিধ বাংলা আঞ্চলিক শব্দ সম্ভারে অভিধান প্রণয়নে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৮৮৫-১৯৬৯) ও ড. এনামুল হকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমলব্ধ বিপুল অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের পটভূমির প্রেক্ষিতে তৎকালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অসাধারণ অগ্রগণ্য অভিযাত্রা মনে রাখার মত।
এখন প্রতি বছরে আমরা ২১শে ফেব্রুয়ারী ‘শহীদ দিবস’ অতীব শ্রদ্ধা সহকারে স্মরণ করে থাকি। সেইসঙ্গে দিবসটি জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বব্যাপী এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবেও হচ্ছে উদযাপিত।
ঐতিহ্যগতভাবে আমরা চলেছি একটি সমৃদ্ধ ভাষার সুদীর্ঘ পথ ধরে যার নাম বাংলাভাষা।
বাংলার নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করে গেছেন তা থেকে জীবনের ধন যেমন কিছুই যাবে না ফেলা, কোনোক্রমেই তেমনি কোনো মানুষকে করা যাবে না অবহেলা। আর এটাই হচ্ছে আমাদের মহান কবি সাহিত্যিকদের তপস্যানিষ্ঠ মহৎ কীর্তি। এইসব মহান কীর্তিমানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের আরো অনেক কীর্তিমান লেখক কবি সাহিত্যিক রয়েছেন যাঁদের কথাও আমরা বিস্মৃত হব না। যখন আমি তাঁদের সম্পর্কে বলি তখন আমি তাঁদের সীমাহীন গুণাবলীর বর্ণনা করি। তাঁদের প্রতি আমি নিবেদন করি আমার অন্তরতম শ্রদ্ধা । তাঁরা আমাদের পথপ্রদর্শক, বন্ধু এবং দর্শনদাতা। তাঁদের প্রতি আমার আন্তরিক অভিবাদন, আমি তাঁদের সালাম করি।
যখন আমি একটি বাংলা কবিতা আবৃত্তি করি তখন আমার মন যে কি আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে, সে আনন্দ যে কি অসীম অমৃত ও মধুময় তা আমার হৃদয়ই কেবল জানে। যখন আমার মুখ থেকে বাংলা শব্দের ভাষা নিঃসৃত হয় তা যেন অবশ্যই হয় বন্ধুত্বের আর অমৃত ভালোবাসার। যে ভাষার শব্দ থেকে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায় তা যেন আমার বাংলা ভাষার না হয়। আমাকে সদাসর্বদা সতর্ক থাকতে হবে আমার ঠোঁট থেকে যেন কোনো নোংরা কথা না বেরোয়। আমি যদি বিশুদ্ধ বাংলাভাষায় কথা বলি তাতে ত কারুর ক্ষতি হবার কারণ কিছু নেই বরং আমার ভালো কথা শুনে আমার প্রতি শ্রোতাদের আকর্ষণ বাড়বে বই কমবে না।
এ দেশের অসীম সাহসী সন্তানেরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে অকাতরে আপন মিষ্টি ভাষা বাংলাকে মহাসম্মানে রাষ্ট্র ভাষায় উন্নীত করতে; সেই ভাষার সম্মান বজায় রাখার তাগিদ প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে সুগ্রন্থিত হোক এটাই হবে শহীদ দিবসের পবিত্র শপথ আর তাহলেই বীর শহীদদের আত্মাসমূহ পাবে পরম তৃপ্তি। আমরা সেইসব ভাষা-শহীদদের আন্তরিক শ্রদ্ধাভরে আজ স্মরণ করি। আর তাঁদের শ্রদ্ধার্থে কেন আমরা শুদ্ধভাবে বাংলায় কথা বলব না, কেন আমরা অপাঙ্ক্তেয় অযাচিত ইতর বাংলা শব্দগুলি বর্জন করবো না যাতে চির উন্নত থাকে আমাদের এই পবিত্র ভাষা?
৪
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় আঞ্চলিক বাংলা কথ্য ভাষা রয়েছে তার বিকৃতি ত আর রাতারাতি সরিয়ে ব্যাকরণগত বাংলা বাকরীতি অনুসারে শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলা এবং ঐসব বাংলা ডায়ালেক্টগুলো পাল্টানো আদৌ সম্ভব নয়। তবে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সন্তানসন্ততিদের শৈশব থেকেই শুদ্ধ করে বাংলা শিক্ষা দিতে পারি। এর মানে এই নয় যে আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাংলা বাকরীতি অনুকরণ করবো। আমাদের সূদীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্য ধারায় বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের যে অকৃত্রিম প্রীতি রয়েছে তাকে চিরকালের জন্যে ধরে রাখতে সচেষ্ট হব।
এখানে উল্লেখ্য যে, ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি হওয়ার ফলে তার পশ্চিম বঙ্গরাজ্যের বাঙ্গালীদের বাংলাভাষায় স্বভাবতই হিন্দি বাকরীতির সংমিশ্রণ এসেছে খুবই স্বাভাবিকভাবে। অতএব তা আমাদের অনুকরণ করার প্রশ্নই ওঠে না। এখানেই পূর্বের বাংলাদেশ ও বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষারীতির বা বাকরীতির দুস্তর ফারাক। বাংলাদেশের প্রমিত বাংলা বানান, প্রস্বন, বাচনপদ্ধতি, উচ্চারণ প্রভৃতি বাংলাদেশের বাংলা একাডেমীর প-িত শিক্ষাবিদগণ যেভাবে সুচারুরূপে নির্ণয় করে দিয়েছেন সেগুলি অনতিবিলম্বে চালু করতে হবে যাতে আমাদের বাংলা শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে তা অনুসরণ করে যথাযথভাবে বাংলা বলতে, পড়তে ও লিখতে পারে।
আমার বাংলাভাষা হবে আমার ভালোবাসা, আমি তা সঠিকভাবে বলবো এবং তার উন্নয়ন অগ্রগতির লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাবো। এখন আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন ব্যক্তি। স্বতই আমি স্মরণ করি আমার এই মাতৃভাষার লড়াইয়ে জিতে আমরা লাভ করেছি স্বাধীনতা আর সে স্বাধীনতা এসেছে অনেক রক্ত আর অশ্রুর বিনিময়ে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের পর। আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলার শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে বাঙ্গালীর বাংলাদেশি জাতি-রাষ্ট্র। আমরা তা কোনোদিন ভুলবো না।
এ কথা ভুললে চলবে না যে পশ্চিম বাংলা (ভারতের অঙ্গ রাজ্য) হচ্ছে আধুনিক বাংলা ভাষার সূতিকাগার। বেশ কিছু প্রাচ্যবিদ একাডেমিশিয়ান যথা এফ.ই. পারগিটার (১৮৮৬), ডব্লিউ সাটন্ পেজ, জন বিয়ামস এবং হোমলা বাংলাদেশের আঞ্চলিক কথ্যবাংলা, বাংলার আদি ব্যাকরণ প্রভৃতির গবেষণায় যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি দেখিয়েছেন। বিশেষ করে পূর্ববঙ্গের(এখন বাংলাদেশ) স্থানিক্য কথ্য শব্দাবলি সংগ্রহ ও সংকলন তাঁদের গবেষণার অন্তর্গত ছিল। বাংলাসাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ক প্রাঙ্গ প-িত-গবেষক ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে ... বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম বাঙ্গালী ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলাভাষা সমস্যার বিষয়টি বৈজ্ঞানিকের দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করেছেন। বাংলা বাচনধ্বনি তত্ত্বসহ শব্দতত্ত্ব বিষয়ক বেশ কিছু প্রবন্ধ তিনি লিখেছেন তাঁর ‘শব্দতত্ব’ এবং ‘বাংলাভাষা পরিচয়’ গ্রন্থে।
আরেকজন খ্যাতিমান বাঙ্গালী কবি হচ্ছেন শান্তিপুরের কবি মোজাম্মেল হক (১৮৬০-১৯৩৩) যিনি এগারো বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাভাষার পরীক্ষক ছিলেন, তিনি বাংলা ব্যাকরণ ও শব্দপ্রকরণ সম্বলিত সরল সহজ ভাষায় লিখেছিলেন ‘শিশুরজ্ঞন বর্ণশিক্ষা’ এবং প্রাথমিক ও উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয়ের জন্য ‘প্রাথমিক রচনা শিক্ষা’, ‘সাহিত্য শিক্ষা’ ও ‘মক্তবের বাংলা শিক্ষা’ যেগুলি তাঁর কালে অবিভক্ত বাংলাদেশে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছিল বাংলাভাষার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায়। উনবিংশ শতকেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ব্যাপক উন্মেষ ঘটে। তাছাড়া এ সময় থেকেই বিদেশী ভাষা ও সাহিত্যের অবাধ আগমন এবং তার অনুবাদ হওয়ার ফলে বাঙ্গালী সমাজে তার প্রভাব অনিবার্য হয়ে পড়ে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য প্রভাবে বাংলা সাহিত্যের প্রযুক্তিগত আঙ্গিকে একরকম সাযুজ্য ঘটাতে থাকে ঠিক তখন থেকেই।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রথম বৈপ্লবিক রূপান্তর আনলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩)। যখন তিনি বিবেকের তাড়নায় বুঝতে পারলেন যে তিনি ইংরাজী ভাষায় কবিতা যত ভালো করে লিখুন না কেন তিনি ইংরেজ কবিদের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হবেন না যদিও উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য তিনি ইতোমধ্যে ইংরাজী, গ্রীক, ল্যাতিন ও ইতালীয় ভাষা আয়ত্ব করে ফেলেছেন; তখন তিনি বাংলা ভাষার রতœ মণি-মাণিক্য আহরণে মনোনিবেশ করলেন বিশেষ অভিনিবেশ সহকারে।
তৎকালীন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ভারতের শিক্ষা সমাজের সভাপতি বেথুন সাহেব (জন ইলিয়ট ড্রিন্ক ওয়াটার বেথুন- ১৮০১-১৮৬২) মধুসূদন সম্পর্কে যথার্থ মন্তব্য করেছিলেন, “...তিনি (মধুসূদন) তাঁর প্রতিভা নিজ অভিজ্ঞা-অভিরুচি অনুযায়ী ইংরাজী ভাষা চর্চায় যে অধ্যবসায়ে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তা যদি স্বদেশী ভাষায় নিবব্ধ রাখেন তাহলে তিনি অধিকতর স্বদেশের সেবা দিতে সক্ষম হবেন। আর ঐ মেধা ও মননে কবিতাই যদি লিখতে হয় তাহলে তাঁর অন্তর্গত আরো উন্নতমানের কবিতা থাকলে তা তিনি নিজের ভাষায় রচনা করে চিরতরে যশস্বী হয়ে যেতে পারেন।”
৫
বেথুনের উপদেশই যেন অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেল মধুসূদনের জীবনে। মধুসূদন ইতালীর বিখ্যাত মহাকবি দান্তে (১২৬৫-১৩২১) আর ইংল্যান্ডের বিখ্যাত কবি ও নাট্যকার শেক্সপিয়র (১৫৬৪-১৬১৬)-এর সনেট অনুসরণ করে বাংলাভাষার কবিতায় প্রথম সনেট ও মুক্ত ছন্দ প্রবর্তন করলেন। বাংলাভাষায় প্রথম মুক্তাক্ষরে রচিত তাঁর বিখ্যাত মহাকাব্য “মেঘনাদ বধ কাব্য (১৮৬১)” গ্রীসের মহাকবি হোমারের (খৃ.পূর্ব ৮৪০) ‘ইলিয়ড’-এর আদলে চরিত্র-চিত্রণ আর ভারতীয় মহা-পুরাণ অনুসরণ করে এবং কবি জন মিল্টনের (১৬০৮-১৬৭৪) ‘প্যারাডাইস লষ্ট’- কাব্য রীতিতে ‘মেঘনাধ বধ কাব্য’ নির্মাণ সত্যিই চিরকালের মতো বাংলা সাহিত্যে অক্ষয় কীর্তি হয়ে রইল। এ ভাবেই তাঁর হাত দিয়েই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কাব্যসাহিত্যে এলো আধুনিকতা। পাশ্চাত্য শিক্ষাদীক্ষা এ ক্ষেত্রে তাঁর সুদীপ্ত প্রতিভায় হয়েছে প্রতিবিম্বিত। বাল্মীকি-ব্যাস উপজীব্য রামায়ণ-মহাভারতের হিন্দু পুরাণ কর্ষন করে তিনি লাভ করেছেন মহাকাব্যের ঐশ্বর্য।
পরবর্তীকালে বাঙ্গালী কবিরা মুক্ত ছন্দেই কবিতা ও সনেট লিখে চলেছেন। এ ক্ষেত্রে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ব্যতিক্রম নন। রবীন্দ্রনাথের গদ্য ঢং-এর কবিতাগুলিই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। যে ‘সং অফারিংস্’ কবিতায় তিনি নোবেল বিজয়ী হন তা মূলত তাঁর ইংরাজী গদ্য কবিতাগুচ্ছের সমাহার মাত্র। তাছাড়া অধিকাংশ আধুনিক কবি মুক্ত ছন্দে শুধু কবিতাই লেখেন না, কবিতাতে প্রতীকী আনতে যথেচ্ছ পৌরানিক শব্দও ব্যবহার করে থাকেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিমান ও জনপ্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রতীকীরূপে হিন্দু পুরাণ থেকে দেবদেবী সম্বলিত অনেক শব্দ এবং পবিত্র কোরানের আরবী শব্দ আহরণ করে তাঁর ‘বিদ্রোহী’, ‘সাম্যবাদী’ ও অন্যান্য কবিতায় চমকপ্রদভাবে প্রয়োগ করে যশস্বী হয়েছেন। এতদ্ব্যতীত বহু ফারসী শব্দ বাংলা সাহিত্যে সংযোজন করে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে করেছেন সমৃদ্ধ।
আবহমানকাল ধরে এইভাবে কাব্য-সাহিত্য চর্চা চলে আসছে আর তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু কবি সাহিত্যিকের অশেষ মেধা ও শ্রম। সুখের বিষয় বাংলাদেশ এই সুশীল সুকুমার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা থেকে আদৌ পিছিয়ে নেই। কালের কলধ্বনির তালে তালে চলার গতি এগিয়ে যাচেছ বড় দ্রুত। এই মধুর বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে বহিরাগত যে কোনো কূটচাল-চক্রান্ত কিম্বা ষড়যন্ত্র স্বদেশপ্রেমিক বাঙ্গালী যোদ্ধারা তাঁদের শক্তিশালী শাণিত কলমের দ্বারাই করবেন প্রতিহত।
বাংলাদেশের সীমিত ভৌগোলিক জনপদে এ পথে ধাবমান মুক্তিকামী অশ্বারোহীর সংখ্যা কম নয়। বাংলাভাষা-বীরদের দেশ বাংলাদেশ নানা প্রতিকূলতা ও বৈপরিত্য সত্ত্বেও তা উল্লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের বাঙ্গালীরা উড়িয়ে চলেছে আপন ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বৈজয়ন্তী।
[আমি উপরের নিবন্ধটি প্রকাশ করতে গিয়ে লজ্জাবোধ করছি এই ভেবে যে, যে বাংগালি ত্যাগ স্বীকার করলো বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় রূপদানে বা আন্তর্জাতিক রূপদানে সেই বাংগালি ব্যবসায়ীদের সাইনবোর্ডে বাংলার বদলে অবাধে এত ইংরাজী লেখার ঘনঘটা কেন? একেই কি বলে বাংলাদেশীদের জাতীয় বিস্মৃতি? ঢাকার দোকানগুলোর সাইনবোর্ডগুলো দেখতে পারেন বাংলার বদলে কেমন ইংরাজী প্রীতি! ]
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।