Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইদ্রিস সরকার পতাকা

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শব্দের সবুজ ভুবনে অশুভ চিৎকার মৃত্যু ডেকে আনতেও পারে
সযতেœ শব্দকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে
হৃদয়ের সত্যের ভেতর। চিৎকার থেকে মৃৃত্যু
মৃত্যু থেকে জন্ম কেড়ে নিয়ে বেঁচে থাকতেই হবে সারাক্ষণ
কিংবা শত্রু আঁধারের বাড়ি থেকে
আলোর জীবনে যেতে হবে শব্দ চিৎকার জন্ম মৃত্যু
সত্য মিথ্যের সাথে যেমন যুদ্ধ করে কেউ
জীবনের পতাকা দুরন্ত বাসনায়
উড়িয়ে দিয়েছে ডানার দেয়ালে তার মতোই উড়তে হবে
বায়ান্ন থেকে একাত্তরের রক্তাক্ত বাংলায়।

খান চমন-ই-এলাহি
শুদ্ধস্বর

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কলা রঙ কম বলে
বহু পাক্ষিক সম্পর্কে ঝুঁকছে মানুষ।
কর্পোরেট শখ এসে লেনদেন সূচক বদলায় বলে
মনের কোণে নিজস্ব এখতিয়ার থাকতে নেই
এবং বে-আব্রু হয়ে গেছে প্রিয় অভিসার!
কোন দিকে যাবে রঙিন ফানুস ঊর্ধ্বাকাশে না নিচের দিকে
সে কথা বলবে শুধু অন্য ঘর অন্য স্বর।
গুণের গল্পে খুব বেশি লাভ নেই ধান্ধা-ফিকিরে চলছে দেশ-কাল-বন্ধু
নিয়ম ভাঙার খেলায় মত্ত তাই সুরের মধ্যে মানুষের শুদ্ধতা চাই।

ফাহিম ফিরোজ
নতুন চাপ : ডিসেম্বর

মাদ্রাজী উঠলো ফুটে আজ লাইব্রেরী বারান্দায়। পাঁকা বিলেতি
এক গাব তার মাথার পিছন থেকে ঢোকে মুখ দিয়ে প্রাণপণে
বের হচ্ছে যেন। তাইতো গালটা লাল। বণিকপ্রবণ তবে ছুরিবাদী নয়
একলা জগৎ আজ যখন আমার ঘিরে ধরে আছেÑকয়লা রং
চারদিকে, এই বেজোড় সময়ে সে জোড়া বাঁধতে চায়; পতিগত...
নদীতে ইলিশ খোঁজার দৃষ্টিতে খোঁজে তাই কোনো শক্ত খাট
স্বল্পভাষী; দেখায় দেখায় আড়াল চুম্বক। মজা পাই। কাছে
ভিড়ি। কিন্তু সেই ইরানির আবেগের অদম্য প্রেষণ, দক্ষিণ মইসুন্ডীর
সেই পাকিস্তানী শাহনাজ যে আমাকে ঘাড়ে বসিয়ে পশ্চিমে
ছুটে যেতে চায়;এরকম কেউ কিছু করেনি আমার সঙ্গে কোনো
পাললিক চাঁদ। এদের কোনোই আলো নেই, সর্বক্ষণ মেঘাবৃত
মেধার’চে  বৈভব কে বেশি ভালোবাসে। আর ওরা?
তাই নিজেকে বিক্রয় করে দেই চিরতরে মাদ্রাজীর কাছে।

১৪/১২/২০১৬

সৈয়দ টিপু সুলতান
ফসলী গন্ধ

যখন সমুদ্র দেখি
তোমার প্রশান্ত হৃদয়ের কথা ভাবি;
যখন উত্তাল তরঙ্গ দেখি
তখন  তোমার  শারীরিক নৃত্যকলার কথা ভাবি;
যখন ঝরনাধারা দেখি আনমনে
তখন তোমার উচ্ছলতার কথা হয় মনে।
যখন বৃষ্টি দেখি অঝোরে ঝরে
তখন তোমার চোখের জল দেখি
ঝরছে অবিরাম আমারই বুকের পরে।
যখন প্রদীপ দেখি ধিকিধিকি জ্বলে
তখন অনুভূতির প্রতি পলে পলে
তোমারই হৃদয় খেলা করে আমার হৃদয়ে;
বেলা অবেলায়, আনন্দে, সৌন্দর্যের অনুপম ধারায়
কচি সুপারির সুঠাম শরীরে,
কুকুর বৃষ্টির ঘন আঁধারে
খয়েরী শালিকের হলুদ পায়ে
বৃষ্টি¯œাত ফসলী গন্ধে
শিশিরের ছোঁয়া মধুকুপী ঘাসে
.... সকল প্রকৃতির গভীর অভিনিবেশে
তোমার আমার ভালোবাসা দিলেম
মহাকালের পানে বিলিয়ে।

মাহমুদ কামাল
মূল্যতালিকা

আমার চারপাশে দুটো চেয়ার একটি টেবিল
কিছু বই, লেখার খাতা আর কালি ও কলম
টেবিলে কাচের গ্লাস তার মাঝে আধখাওয়া পানি
অদূরে সুখের শয্যা, পরিপাটি
এসবের স্পর্শ নিয়ে আমি আছি, এগুলো আমার
জীবনের ক্ষয় মূল্যে এইসব আয়ত্ত করেছি
সম্প্রতি এইসব আমি ঠিক বিক্রি করে দেবো
প্রতিটি জিনিসের মূল্য তালিকা টানিয়ে দিয়েছি
দরোজায়, জানালায়, র‌্যাকে ও রাস্তায়
সমস্ত আসবাবপত্রের মূল্য মাত্র ৪২ দিন
২১ দিন লেখার খাতা ৩ দিন পানির গ্লাস
বৈদ্যুতিক পাখার মূল্য সাকুল্যে ৩৩ দিন
৩৬৫ দিন শেলফসহ সমস্ত গ্রন্থ
এবং ২৮ দিন নানাবিধ আনুষঙ্গিক
এই দামে বিক্রি হবে আমার অস্তিত্ব
কাঠামোতে ঘুণ ধরার আগেই ঠিকঠাক
হস্তান্তর হওয়া ভালো
কারণ, এসবের মালিকানা কখনো একার থাকে না।  

জামালউদ্দিন বারী
অন্তরঙ্গ দূরত্ব

দূরত্বের পরিসীমা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মনে হল
এটি কোন দুটি রেখার সরলাঙ্কিক রেখা নয়
নয় শুধু পারস্পরিক নৈকট্য, বোঝাপড়া অথবা ভিন্নপথে হাঁটা

একই ছাদের নিচে বাস করেও দূরত্ব বাড়তে থাকে আমাদের
একই দেহে অন্তর্লীন চেতনার ক্যানভাসে সাজানো ছবিগুলোর
রং, বর্ণ, কোলাজ, মন্তাজে কখন হয়ে যায় গড়মিল
দূরত্ব বেড়ে গিয়ে বড় অচেনা মনে হয় সবকিছু।

দূরত্ব অথবা নৈকট্যের মানদ-ে
আমরা যখন হিসাব কষতে বসি
তখনো আমাদের চেতনার রঙগুলো ফিকে হয়ে আসে
অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
ইতিহাস এবং প্রাগেতিহাস
ঘরে-বাইরে আলোকবর্ষ দূরের নেবুলায়
মধ্যরাতের আকাশগঙ্গায়
যে বিস্মরণের স্মৃতি অথবা চেতনার প্রতিবিম্ব
আমাদের ¤্রয়িমাণ করে তোলে
দ্রুত বদলে যাওয়া নীরব হাসি-কান্নাগুলো  
কখন কিভাবে সীমাহীন অন্তরঙ্গতায় হারিয়ে যায়।


হাবীবুল্লাহ সিরাজী
কালো কোকিল তুই আর ডাকিস না

কালো কোকিল তুই আর ডাকিস না
এই তো সবই আছে
চেনা সিঁড়ি, কাচঘর, মৃদুমন্দ আলো
মধুর সঙ্গীত আর উষ্ণ আহ্বান
মাইকেল জ্যাকসন থেকে শেফালী ও শ্যাম
প্রয়োজনে, পরিবেশে ক্রীড়া-শিল্প-কামার-মোক্তার
আনন্দে, আগুনে ভরে পাত্র :
সন্ত্রাস, সংকট, ঘৃণা, গ’লে যায় ছোঁয়ায়-ছোঁয়ায়
অন্য কোনো বিষণœ জ্যোৎ¯œা
ঝুল দেয় তোলা ফুলেÑস্ফীত প্লীহায়
কালো কোকিল তুই আর ডাকিস না

যা যাবে সবাই খাবে,Ñ অন্যচক্রে বেজে যায় ঘড়ি
মধ্যরাত পার হলে হাওয়াকল টান মারে বুকে
স্বপ্নের ভেতর থেকে ঝাঁপ দেয় নুনের সংসার;
পোশাক বদল হয়, শিকড়ের টান বুঝে
বন্ধুও আঙুল গোনে; উন্মুক্ত কৃপাণ হাতে
তছনছ করে দেয় ভালোবাসার দীর্ঘসূত্রী শিরা
অর্থ-লোভ দুলে ওঠে শুদ্ধ কোনো মোমের আগুনে!
বাঁশিঅলা সঙ্গে যায়
ছায়া নিয়ে খেলা হয় অন্তর-বিপ্লবে
কালো কোকিল তুই আর ডাকিস না

জাহানারা আরজু
ফাল্গুনের কালো কোকিলটা

ফাল্গুনের একটি কালো কোকিল নিয়তই আমার
বুকের ভেতরটায় এসে ঠোকরায়। ওর গানের চঞ্চু যেন
ধারালো এক শাবল হয়ে ওঠেÑঅথচ আমি যে
ওর পরিচিত সেই গানের কণ্ঠই শুনতে চাইÑ
যেমন শুনেছি সেই শীত বিদায়ের শেষে শুকনো
বাদামী ঝরা পাতাগুলো পায়ের নীচে ভাঙ্গা কাঁচের
মতো গুঁড়ো গুঁড়ো করে যখন আমি কুল গাছটায়
ঝাঁকুনি দিয়েছি, অথবা যখন উত্তরে হাওয়ায়
ভাসা পুকুরটার পাশে বসে থেকে থেকে এক সময়
ঝাঁপ দিয়েছি রোদ-তাতানো পানিতে এপার-ওপার
সাঁতার কাটবো বলে,Ñতখন যেমন কোকিলটা গান
গেয়ে উঠত, তখন যেমন ডেকে উঠত, সে গান, সে ডাক
শুনতে পাইনে আরÑ
কোথায় কবে যেন সেই গানের পাখীটা উড়ে গেলো।
তালতলার পাশে, গা-ছম্্ছম্্ ভিটেটায় সেই
চড়–ইভাতির খিচুরী উৎসব, মায়ের চোখকে ফাঁকি,
দিয়ে, বাবার ফাইলে ডুবে থাকা কড়া চোখ এড়িয়ে
চুপি চুপি চাল-ডাল-নুন-তেল নিয়ে আসা
এবং কিছু শুকনো ডাল আর পাতা কুড়িয়ে এনেÑ
ওপাড়া-এপাড়ার রেণু-বেণু-বকুল-বেলা মনিরাদের
সেই রাজ্য জয় করার দিনে মাথার ওপরে বড় গাছটায়
যে কোকিলটা ডাকত,Ñতাকে যে খুঁজেও পাইনে আর
শুধু একটা কালো কোকিল নিয়ত তার শাণিত
চঞ্চুতে আমাকে ঠোকড়ায়, ক্ষতবিক্ষত করে,
ফাল্গুনের সেই কালো কোকিলটা যেন এক বাজপাখী
হয়ে পাখা মেলে, ভয়াবহ দেও হয়ে আমার সব গান,
সব আলো, সব আমের বোল ঢেকে দেয়!
বসন্ত যে গান  শুনব বলে, যে আকুল পিপাসা।
নিয়ে সারাটি বছর বসে থাকিÑসে বুকে ওই গান-ভোলা
পাখীটার শাণিত ঠোঁট আমাকে বিদ্ধ করে, ছিন্ন ভিন্ন
করে, আমার বুক থেকে লাল রক্ত চুয়ে চুয়ে পড়ে
এক সময় কালো জমাট পাথর হয়ে যায় আর ওই
কালো খুদে দানব পাখীটা বুকভরা গান নিয়ে
পালিয়ে যায়Ñও এখানে বসবে না আরÑ
ঠুক্রে ঠুক্রে বুকের ভেতরটা ক্ষত বিক্ষত
করে দিয়ে যাবে শুধু!       



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন