রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
কাজী মুহাম্মদ ইউনুছ, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) থেকে : প্রথম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে ঘিরে কমলনগরে ভোটার ও প্রার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে শঙ্কা ও আতংক। থমথমে ও ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রশাসনের কড়া নজরদারি ও হস্তক্ষেপ জরুরি। সব কটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। ঠেকানো যাচ্ছে না তাদের। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে লক্ষ্মীপুর জেলার মেঘনা উপকূলবর্তী ও চরাঞ্চল বেষ্টিত কমলনগর উপজেলায় ইতোমধ্যে উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়নে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের প্রার্থী চূড়ান্তকরণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছেন। অপেক্ষা শুধু বাছাই শেষে প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে ভোটযুদ্ধে নেমে পড়ার। এবারের স্থানীয় এ নির্বাচনে ভোট প্রদানের আগেই যেন প্রার্থী নির্বাচন যুদ্ধে নেমে পড়েছে বড় দু’দলের প্রার্থীরা। এ যেন মনোনয়নেই জয় নিশ্চিত করে দেয়া। দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক পেতে দলীয় প্রার্থীরা অন্তঃকোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে। কে কাকে দমিয়ে মনোনয়ন নামের সোনার হরিণ লাভ করবেন সে প্রতিযোগিতা যেন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, চরম দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে একে অপরের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ, বিষোদগার, রাজনীতির মাঠে সক্রিয়-নিষ্ক্রিয়তার প্রশ্ন তোলাসহ সামাজিক, পারিবারিক ও রাজনৈতিক খুঁটিনাঁটি দোষত্রুটি খুঁজতে শুরু করেছে। এসব অভিযোগ অনুযোগ সমাধানে স্থানীয় উপজেলা, জেলা নেতৃবৃন্দসহ সংসদ সদস্য ও খোদ হাইকমান্ড পর্যন্ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। একজন প্রার্থীকে চূড়ান্তকরণের পর তা প্রত্যাহার করণ পুনরায় প্রার্থীদান, বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকানোসহ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ঠেকাতে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও সরকারি আনুকূল্য লাভে প্রশাসনের অনুকম্পা পাওয়ার আশায় আ’লীগ প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন লাভে ভোটযুদ্ধের পূর্বেই মনোনয়ন লাভ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। কমলনগর উপজেলায় আ’লীগের টিকিট পাওয়া না পাওয়াকে ঘিরে উত্তেজনার কমতি নেই। তৃণমূল পর্যায়ের কোন কোন নেতাকর্মীর দাবি নির্বাচনী মাঠে ভোটারদের ভোট পাওয়া না পাওয়ার হিসাব না কষে প্রার্থীরা মনোনয়ন পেতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছেন। উপজেলা-জেলা নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় সাংসদ, প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েক হাইবোল্টেজ নেতা-মন্ত্রী পরোক্ষভাবে মনোনয়ন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। কমলনগরে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনে চারটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন চর ফলকন ইউনিয়নে হাজী হারুনুর রশিদ, যিনি ধনি সাবেক উপজেলা বিএনপির সদস্য ও উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি, বর্তমানে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগ যোগদান করে আ’লীগে মনোনয়ন লাভ করেন। এ নিয়ে চর ফলকন ইউনিয়নসহ পুরো উপজেলায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারেফ হোসেন বাঘা বিগত ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেছেন এবার তিনি দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করেছেন বলে জানান একাধিক ইউনিয়ন আ’লীগ নেতা। সেক্ষেত্রে সদ্য যোগদানকারী ব্যবসায়ী এ নেতাকে দলের জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ রহস্যজনক কারণে মনোনয়ন দেন। এ ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা যুবদল সভাপতি আবদুল অদুদ হাওলাদার, আ’লীগ নেতা মোশারেফ হোসেন বাঘা, পাটারীর হাট ইউনিয়নে ও প্রার্থী বাছাইয়ে আ’লীগে রয়েছে নানাবিধ অভিযোগ আপত্তি। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট নুরুল আমিন রাজু অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থী সাবেক দু’দুবারের চেয়ারম্যান মাস্টার রাশেদ বিল্লাহ আলমগীর দু’জনের মধ্যে প্রকাশ্যে বাকবিত-া ও হয়েছে যদিও উভয়ই পরস্পর মামাতো-ফুফাতো ভাই। এ ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সজ্ঞান ও আদর্শবান হিসেবে পরিচিত প্রফেসর জামাল উদ্দিন তালুকদার। কমলনগরের চর জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নেও আওয়ামী লীগে প্রার্থী মনোনয়নে ব্যাপক হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদিও ইতোমধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ত্যাগী ও নির্যাতিত আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ নিজাম উদ্দিনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশও স্থানীয় সাংসদ পরোক্ষভাবে নাখোশ হয়েছেন বলে জানা যায়। স্থানীয় সাংসদের অনুগত হাজিরহাটের হাজীবাড়ীর সন্তান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় আ’লীগ নেতা আকতার হোসেন মিলন ও এই ইউনিয়নে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীর ভোটে যদিও নিজাম উদ্দিন মনোনীত হন তবুও স্থানীয় জনসাধারণের কাছে ভোটের মাঠে আকতার হোসেন মিলন এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা যায়। এ ইউনিয়নে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফরহাদ হোসেন মিয়াও প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নে একমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান ফয়সল আহমেদ রতন। তরুণ এ নেতার প্রয়াত দাদা ফজলুল হক ও প্রয়াত বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম দীর্ঘযুগ ধরে ইউনিয়নটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জন্মসূত্র ধরে আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এ উদীয়মান উচ্চ শিক্ষিত লোকটির পিতার দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় অকাল মৃত্যুতে সুদূর রাশিয়া ছেড়ে এলাকায় এসে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। মাত্র আড়াই বছরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি এ এলাকার আপামর জনসাধারণের কাছে অতি আপনজন হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। সমাদৃত হয়েছেন দলমত নির্বিশেষে। আগামী নির্বাচনে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মধ্যে এ ইউনিয়নে আ’লীগের প্রার্থীর বিজয় হওয়ার সম্ভবনা খুবই প্রবল। জয় জয় কারের মধ্যে ছেয়ে যাওয়া এ ইউনিয়নে ‘বিএনপি’ ফাঁকা মাঠে গোল না দেয়ার কথা ভেবে ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি মোসলেউদ্দিনকে অনেকটা চুপিসারে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন দিলেন। কমলনগর উপজেলার চর জাঙ্গালিয়া, চর ফলকন ও পাটারীরহাট ইউনিয়নে আ’লীগ প্রকাশ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। একাধিক প্রার্থী থাকায় এসব এলাকায় দলীয় প্রভাব বিস্তার কিংবা দলীয় ভোট সংগ্রহে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে সরকারদল তা ভাববার বিষয়। অন্যদিকে আ’লীগের কোন্দল ও বিদ্রোহী প্রার্থী না ঠেকাতে পারলে জয়ের মুকুট লাভ করা আদৌ আ’লীগের পক্ষে সম্ভব হবে কিনা তা প্রশ্নই থেকে যাচ্ছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের এ কোন্দলে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শতভাগ কাজে লাগাতে পারবেন বলে মনে করেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। কমলনগরে ৪টি ইউনিয়নের ছয়ত্রিশ কেন্দ্রের প্রায় বিশটির অধিক কেন্দ্র ঝুঁকিতে রয়েছে। তন্মধ্যে চর ফলকন ও পাটারীরহাটের আঠারটি ও চর জাঙ্গালিয়ার দুটি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সাধারণ ভোটাররা। এর মূল কারণ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল। সাধারণ ভোটারদের অভিমত মেঘনা নদী উপকূলবর্তী চর ফলকন ও পাটারীরহাট ইউনিয়নে আ’লীগের দু’জনকে প্রার্থী হার্ডলাইনে থাকায়, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে দাপিয়ে বেড়ায় এ দু’টি ইউনিয়নের প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটাররা ভীত সন্ত্রস্ত ও আতংকিত অবস্থায় রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কঠোর অবস্থানের ফলে তৃতীয় পক্ষ কিংবা পেশাদার কোন পক্ষ ব্যাপক নাশকতা চালাতে পারে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত উপজেলা হওয়ায় সুষ্ঠু ভোটে বাধা সৃষ্টি হলে বিরোধী জোট থেকে চর ফলকন পাটারীরহাট ইউনিয়নসনহ চর জাঙ্গারিয়ার ২টি কেন্দ্রে নাশকতা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে। অপরদিকে চারটি ইউনিয়নের ছয়ত্রিশজন ইউপি সদস্য পদে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড প্রতি গড়ে চারজন করে প্রার্থী থাকায় ইউপি মেম্বার পদে জয় পরাজয়ের ব্যাপারেও চরম বিশৃঙ্খলা সংঘাত ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।