পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারাক্কার প্রভাবে মরুময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল
এসএম আলী আহসান পান্না (কুষ্টিয়া) : পানির অভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে নদীমাতৃক বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল অংশ। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলার ২ হাজার নদ-নদী, খাল-বিল পুকুর ফাল্গুনের শুরুতেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। পানি না থাকায় খাল-বিল থেকে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে মাছ। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। নদীর পাড়ের মানুষ পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ বর্তমান সরকারের সময়ে দু’দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক সর্বোচ্চ উচ্চতায়। তারপরও আন্তর্জাতিক রীতি-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে গঙ্গার পানি ভারত তুলে নেয়ায় বাংলাদেশের বিশাল অংশ মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এটা কী পরীক্ষিত বন্ধুত্বের নিদর্শন! চৈত্র মাস অনেক দূরে। ফাল্গুন মাসের শুরুতেই নদ-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। পদ্মায় চর জেগেছে এবং কৃষি জমি ফেটে হয়েছে চৌচির। পানি নিয়ে খোদ ভারতের বুদ্ধিজীবীরা দিল্লির ওপর বিক্ষুব্ধ। তারা সভা-সেমিনারে তিস্তা চুক্তিসহ বাংলাদেশের প্রাপ্য পানি দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। অথচ আমাদের দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী এ ব্যাপারে নীরব।
উত্তর ভারত থেকে নেমে আসা গঙ্গা নদী ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত ধরে ১২৯ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের ভিতরে ১১৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের কাছে এই গঙ্গার শাখা ভাগীরথী উৎপত্তি। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলে এটা হুগলি নদী নামে পরিচিত। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ফারাক্কা বাঁধ নির্মিত হয়। তারপর আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে নদী থেকে পানি তুলে নেয় ভারত। প্রাকৃতিক সম্পদ পানি ভাগাভাগি করতে দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ৩০ বছরের পানি চুক্তি হয়। ২০ বছর আগে করা ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী এইচ. ডি. দেবে গৌড়া। চুক্তির পর থেকে বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি। তিস্তা চুক্তি নিয়ে তালবাহানাই শুধু নয়; ৩০ বছরের চুক্তি অনুযায়ী (গঙ্গা-পদ্মা) পানি না দেয়ায় দেশের বৃহৎ এলাকা পরিবেশের ভারসাম্য হারাতে বসেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নেয়ায় পদ্মায় পানি প্রবাহ কমে গেছে। পদ্মায় পানি কমে যাওয়ায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দু’পাশে জেগে উঠেছে চর। চরে রাখালরা গরুর পাল নিয়ে যাচ্ছে। বিকেলে হাজার হাজার ভ্রমণপিয়াসী মানুষ ব্রিজের নিচে আড্ডা দিচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই পিকনিক করতে ব্রিজের নিচে চরকে বেছে নিয়েছে। কোনো কোনো চরে এরই মধ্যে হাল চাষ শুরু করেছে কৃষকরা। কুষ্টিয়াসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল সমতলভূমি মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কুষ্টিয়ার প্রায় মাছের আবাদেও চরম হিমসিম খাচ্ছে মৎস্য চাষীরা। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ; মারা যাচ্ছে বনজ গাছপালা। কৃষি আবাদও হুমকির সম্মুখীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পানিস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে যেমন পানি পাচ্ছে না। আর্সেনিকের সমস্যাও দেখা দিয়েছে প্রকট আকারে।
পঞ্চাশের দশকে ভারত যখন ফারাক্কা পরিকল্পনা গ্রহণ করে তখন প্রতিবেশী রাষ্ট্র আজকের বাংলাদেশ ওই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে। কিন্তু ভারত আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে বাংলাদেশের ১০ মাইল উজানে নদীর উপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে। ১৯৭৪ সাল থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ওই বাঁধ চালু রয়েছে। বন্যার সময় বাঁধের গেইট খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে; আবার শুষ্ক মৌসুমে গেইট বন্ধ রেখে পানি অন্যদিকে সরিয়ে নিচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ৭৩ বছর আগে ভৌগোলিক কারণে গঙ্গা নদীর প্রধান স্রোত ভাগীরথী নদী থেকে পদ্মার দিকে সরে যায়। এর ফলে ভাগীরথী নদীর স্রোত কমে যায়। পদ্মা তখন গঙ্গার প্রধান পানিস্রোতে পরিণত হয়। ভাগীরথী নদীতে স্রোত কমে যাওয়ায় সেখানে পলিমাটি জমতে থাকে। এতে কলকাতা বন্দরে জাহাজ ও নৌ-চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্যই ভারত সরকার ফারাক্কা বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করে।
ভারত নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে এর কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭০ সালে ফিডার খাল ছাড়া ফারাক্কা বাঁধের কাজ শেষ করে। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৪১.৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ভাগীরথী নদীর সাথে একটি ফিডার ক্যানেল নির্মাণ করে কাজ শেষ করে। ওই বছরের এপ্রিলে ফারাক্কা বাঁধ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে।
পরিবেশবিদদের মতে, ফারাক্কা বাঁধ চালুর মাধ্যমে ভারতের আধিপত্যবাদীরা পানি সম্পদকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মরণ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এ বাঁধের মাধ্যমে পানি সরিয়ে নেয়ায় বাংলাদেশের ৬ কোটি মানুষকে ধুঁকে ধুঁকে মারছে। ভারত কেবল গঙ্গা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা ৫৪টি অভিন্ন নদীর মোহনায় মিনি ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে পানির হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণেই দেশের উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সকল নদী ভরাট হয়ে ধ্বংসের মুখে। ভূ-গর্ভস্থ পানি স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় জলবায়ুর উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ২৫২টি নদীর মধ্যে ২০০টি নদীই পানিশূন্য। কৃষি আবাদেরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
দু’ দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক প্রচার করলেও ভারত শত্রুর মতোই আচরণ করছে। অতীতে যেমন পানি দেয়ার আশ্বাস দিয়ে দেয়নি; এখন চুক্তি করেও দিচ্ছে না। ভারতের এই আন্তর্জাতিক আইন লংঘন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অভিযোগ তোলে। ১৯৭৬ সালে চুক্তি অনুযায়ী পানি না দেয়ায় কুষ্টিয়াসহ দেশের ১৫টি জেলা পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ওই সময় পানির ন্যায্যহিস্যার দাবিতে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ঢাকা থেকে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ করেন। ফারাক্কা বাঁধের এ সমস্যা সমাধানের জন্য আব্দুল হামিদ ভাসানী সে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ফারাক্কা সমস্যার সমাধানে এদেশের মানুষ আজও মে মাসের ১৬ তারিখে ফারাক্কা দিবসটি পালন করে। এদেশের মানুষের আন্দোলনের মুখে ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে পানির ন্যায্যহিস্যা আদায়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিশ্ব জনমত লাভের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান। জিয়াউর রহমান নতুন কৌশলও অবলম্বন করে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেন।
জানা যায়, ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তর ৮টি জেলার ৬১ লাখ ৪০ হাজার একর কৃষি জমিসহ দেশের সর্ববৃহৎ গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জিকে সেচ প্রকল্প) ৩ লাখ একর জমিতে আধুনিক চাষাবাদ সেচ সুবিধা প্রদান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খরা মওসুমে লবণাক্ততা রোধে ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে ১৯৬৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ দল গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের জন্যে পর্যবেক্ষণ শেষে নির্মাণকাল নির্ধারণ করে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধার্য করা হয় ৭ হাজার ৩শ’ ২৫ কোটি টাকা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশের পক্ষে এ বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়ে। বৃহত্তর কুষ্টিয়া, বৃহত্তর যশোর, বৃহত্তর খুলনা, বৃহত্তর ফরিদপুর, বৃহত্তর রাজশাহী ও বৃহত্তর পাবনার উপর দিয়ে প্রবাহিত প্রায় ২৯টিরও বেশি নদী, হাজার হাজার পুকুর, অসংখ্য খাল-বিল বাঁওড়। খরা মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে পড়ে এসব নদ-নদী।
১৯৮০ সালের প্রথমদিকে তৎকালীন বিএনপি সরকার গঙ্গাবাঁধ নির্মাণ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তৎকালীন বিদ্যুৎ পানি সম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কাজী আনোয়ার-উল হক ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার বাহিরচরে গঙ্গা বাঁধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এখানে গেস্ট হাউজ ও প্রকল্পের গবেষণা মডেল তৈরি করেন। সময়ের ব্যবধানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পদ্মা নদীর ভাঙনে মডেলের কিছু অংশ বিলীন হয়ে গেছে। বাকি যেটুকু রয়েছে তাও গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালের পরিকল্পনা মোতাবেক গঙ্গা বাঁধের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয় ৬ হাজার ৯ম ৯০ ফুট। ভারতের ফারাক্কার বিকল্প বাঁধ বা এন্টি ফারাক্কা হিসেবে পরিচিত গঙ্গা ব্যারেজের গেটের সংখ্যা ছিল ১০০ শতটি। ৬০ ফুট ও ৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বিশিষ্ট এ সকল গেটে পানির নির্গমন ক্ষমতা ধরা হয়েছিল ২৫ লাখ কিউসেক। একই সাথে বিশাল পানির ¯্রােত সৃষ্টি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। গঙ্গা ব্যারেজের মূল উদ্দেশ্য ছিল পদ্মা নদীর ডান পাশ দিয়ে বয়ে চলা মাথাভাঙ্গা, চন্দনা ও গড়াই নদীকে খাল হিসেবে ব্যবহার করে বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচ সুবিধা ও পানির হিস্যা পৌঁছে দেয়া। ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালের মাধ্যমে গড়াই, নবগঙ্গা, কুমার, চিত্রা নদী, আড়িয়াল খাঁ ও কপোতাক্ষ নদের সারা বছর পানি প্রবাহ ঠিক রেখে এসব এলাকায় চাষাবাদ পদ্ধতির উন্নয়নসহ এ অঞ্চলের পানি প্রবাহ ঠিক রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পটি দীর্ঘ ৩৭ বছরেও সম্পন্ন হয়নি। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা ও জনপদ রক্ষার জন্য ফারাক্কা বাঁধের বিকল্প হিসেবে গঙ্গা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা আজ এ অঞ্চলের গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
এ গঙ্গা বাঁধ প্রকল্পটি চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ একর জমি সেচ সুবিধা নিশ্চিত হবে। কৃষক ও কৃষি ব্যবস্থা চাঙ্গা হবে। গঙ্গা পানির ফলে এ এলাকার ৪ কোটি মানুষ গঙ্গা নদীর পানির সুফল ভোগ করবে। কুষ্টিয়া জেলার ৮ দশমিক ১৬৪ লাখ একর, বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার ১১ দশমিক ৬৪ একর, বৃহত্তর যশোর জেলার ১৫ দশমিক ১৮১ লাখ, বৃহত্তর খুলনা জেলার ৬ দশমিক ৭৪৮ লাখ একর, বৃহত্তর রাজশাহী জেলার ১২ দশমিক ১৬৩ লাখ একর জমিতে ৩ ফসলী আবাদসহ দেশের শতকরা ৩৭ ভাগ কৃষি শিল্প মৎস্য ব্যবস্থার উন্নয়নে নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও মরুময়তা থেকে রক্ষার জন্য এবং কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা এতদাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি।
গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জিকে সেচ প্রকল্প) প্রকল্প পরিচালক মোঃ নৈমুল হক জানান, গত বছর ২০১৬ সালে সেচ প্রকল্পে ১৬ হাজার ১শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়। কিন্তু পদ্মা নদীতে পানি কম থাকায় গত বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সেখানে সেচ প্রদান করা সম্ভব হয়েছিল ১২ হাজার ৭৪ হেক্টর জমি। পদ্মা নদীতে পানি কম থাকায় ভেড়ামারাস্থ জিকে সেচ প্রকল্পের পাম্প হাউজে পানি সরবরাহে বাধাগ্রস্ত হয়। চলতি বোরো মৌসুমে ১৬ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ৪.৭৫ মিটার। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সেখানে পানির উচ্চতা ছিল ৪.৯৭ মিটার। ওই কর্মকতা আরও জানান, গত বছরের চাইতে এবার পদ্মা নদীতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় জিকে সেচ প্রকল্পের অধীনে চাষাবাদ বৃদ্ধি পাবে। কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল মতিন জানান, ভেড়ামারাস্থ জিকে সেচ প্রকল্পের পাম্প হাউজের ১২টি ছোট মেশিনই নষ্ট। তিনটি প্রধান পাম্প ভালো থাকায় চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে দুটি প্রধান পাম্পে পর্যায়ক্রমে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। সেচ সরবরাহ নিশ্চিত হলে তিনি এ মৌসুমে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। পানি সমস্যার সমাধানে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে একদিকে গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন জরুরি, তেমনি ভারতের সাথে ৩০ বছরের চুক্তি অনুযায়ী পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়াও জরুরি। এ ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে- এ দাবি দেশের আপামর জনসাধারণের। নদীতে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক করা না গেলে পরিবেশের ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যাপিত জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।