Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

দখলদারদের দৌরাত্ম্যে হারিয়ে যাচ্ছে নীল কুমার

প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : ফুলবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী খর¯্রােতা নীল কুমার নদী এখন মৎস্য ও পানীশূন্য মরা খাল। বেদখল হয়ে যাচ্ছে শুকিয়ে যাওয়া নদীর শত শত একর জমি। নদী ও বিলগুলো এখন ফসলের মাঠ। ফলে দেখা দিয়েছে প্রাকৃতিক মাছের সংকট। নদী থেকে প্রাকৃতিক মাছের এক বিরাট চাহিদা জোগান হত। কালের বিবর্তনে নীল কুমার নদীর তলদেশ পলি দ্বারা ভরাট হওয়া, দুপাড় কেটে ফসলের চাষ করা অত্যাধিক কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার এবং অপরিকল্পিতভাবে মাছ আহরণ প্রভৃতি কারণে নদী মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। এলাকার প্রবীণ লোকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ৩০-৪০ বছর আগেও নীল কুমার নদী ছিল গভীর ও খর¯্রােতা। ফুলবাড়ীর ব্যবসা-বাণিজ্যের সিংহভাগই এই নদী দিয়ে সংঘটিত হত। ফুলবাড়ী সদর, গংগারহাট, সদ্য বিলুপ্ত দাসিয়ার ছড়া ছিটমহল, খরিবাড়ীবাজার, নেওয়াশীবাজার ও পাখিরহাট প্রভৃতি বড় বড় হাটবাজার এই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। বড় বড় নৌকা করে নদী পথে এসব স্থানের উৎপাদিত ধান, পাট, সরিষা, ডাল, গরু, মহিষ ও হাঁস-মুরগি প্রভৃতি নীল কুমার নদী দিয়ে ধরলা হয়ে কাঠালবাড়ী, যাত্রাপুর, কুড়িগ্রাম সদর এবং ঐতিহ্যবাহী চিলমারী বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে যেত। উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত সুফি-সাধক ও ওলি, মাওলানা কেরামত আলী এই নদী পথেই আসাম হতে এখানে এসে ইসলাম প্রচার ও ভক্ত মুরিদের বাড়ি বাড়ি যেতেন। এখন এসব কেবলই স্মৃতি। নদী মরে যাওয়ায় এসব এলাকার বিপুলসংখ্যক মৎস্য চাষী বেকার হয়ে পড়েছে। তারা পৈতৃক পেশা ছেড়ে কেউবা চালায় রিকশা, কেউবা ঠেলাগাড়ি এবং কেউবা হয়েছেন দিনমজুর। নদীর বুকে পলি ও বালি জমে তলদেশ ভরাট হওয়ায় দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে এককালে নদী ছিল। এ ছাড়া বর্ষাকালে গংগারহাট, খরিবাড়ীবাজার, পাখিরহাট, নেওয়াশীবাজার এবং খোচাবাড়ী এলাকার হাজার হাজার একর জমির ফসল বন্যা ও জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়। নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করে বাঁশের ঘের দ্বারা মাছ চাষ, নদীর এক পাশে সামান্য পানি প্রবাহের জায়গা রেখে পাড় বেঁধে দীঘি খনন করে মাছ চাষ করছেন। স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নদীতে উৎপন্ন কচুরীপানাসহ বিভিন্ন আবর্জনা পচে-গলে পানি দূষিত হয়ে পড়ে। ফলে বর্ষাকালে দেখা দেয় ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও আমাশয়সহ নানা প্রকার পানিবাহিত রোগ। আবার শুষ্ক মৌসুমে নদীর দুপাড় কেটে তলদেশ ভরাট করে চলে বোরো ধান চাষের প্রতিযোগিতা। কোথাও বা শ্যালো মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলনের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। এরূপ নানা অত্যাচারে নীল কুমার নদী আজ মৃতপ্রায়। নাওডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাদা খন্দকার বলেন নীল কুমার নদী আসাম হতে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে  এসেছে। ফারাক্কা বাঁধ দেয়ার ফলে নীল কুমার নদী যৌবন হারাতে থাকে। বাংলাদেশে গংগারহাট হতে হাসনাবাদ ইউনিয়নের যোলানিরঘাট পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিমি এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য নদীটি সংস্কার করা জরুরি। এলাকাবাসী জানান, নদীটি আর কয়েক বছরে বিলীন হয়ে যাবে। তাই নদীটিকে রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দখলদারদের দৌরাত্ম্যে হারিয়ে যাচ্ছে নীল কুমার
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ