Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি স্বচ্ছলতা ফিরছে অসংখ্য পরিবারে

| প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এমএস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে শিমচাষ করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে অসংখ্য পরিবারে। অল্প পুঁজি খাটিয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। একজনের দেখাদেখিতে অন্যান্য সবজি চাষিদের মধ্যে প্রতি বছরই আগ্রহ বাড়ছে শিমচাষে। এর ফলে একদিকে যেমন চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে এখানকার বেকার জনশক্তির মাঝে। সব মিলিয়ে এখানকার যুবসমাজ এখন যুবশক্তিতে পরিণত হতে চলেছে। তবে তারা চায় সরকারি-বেসরকারি দফতরের সহযোগিতা। জানা যায়, উপজেলার পূর্বাঞ্চলের আমুচিয়া, কড়লডেঙ্গা, জ্যৈষ্ঠপুরার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় মৌসুমী শাকসবজির পাশাপাশি শিমচাষ হয়েছে। এখানকার বিভিন্ন সড়ক, উপ-সড়কের দু’ধারেও ধান কাটার পর খালি জমির আইলে সারি সারি শিমগাছ শোভা পাচ্ছে এখন। শিমের বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। এছাড়াও উপজেলার পূর্ব গোমদ-ী, শাকপুরা, পোপাদিয়া, সারোয়াতলী, কধুরখীল, চরণদ্বীপ, পশ্চিম গোমদ-ী, চরখিজিরপুর, চরখিদিরপুর, টেঙ্ঘর চরাঞ্চল ও সমতলে সমান তালে শিম চাষ হয়েছে। শিমের সাথে সাথে মৌসুমী বিভিন্ন সবজি চাষে চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজেলার মতো বোয়ালখালীর চাষিদের সফলতাও দীর্ঘদিনের। মৌসুম ভেদে বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, মুলা, শিম, বরবটি, লাউ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, লালশাক, পালংশাক, ডাটাশাক, রাইশাক ও কপিশাকসহ বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদিত হয় বোয়ালখালীর বিভিন্ন স্থানে। তবে অন্যান্য সবজি চাষের চেয়ে এখানকার চাষিদের মধ্যে শিম চাষের প্রতি আগ্রহ বেশি। কারণ হিসেবে জানা যায় পতিত জমিতে, সরকারি রাস্তার দু’ধারে অল্পপুঁজি আর অল্প পরিশ্রমে সহজেই এ চাষ করা যায়, ফলনও পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি। আমুচিয়া ইউনিয়নের মো. নুরুল আলম, জাগির হোসেন ও পশ্চিম গোমদ-ীর মো. রফিক উদ্দিন, নাছির উদ্দিন, শাইর মিয়া, মো. আলী হামজাসহ আরো অনেক চাষির সাথে কথা হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই জানান- সীতাকু-ের শিম প্রসিদ্ধ, তাই পার্শ্ববর্তী এ উপজেলা থেকে বিভিন্ন জাতের (দেশি, সীতাকু- ও হাইব্রিড) শিমের বীজ ক্রয় করে জমিতে লাগিয়েছি প্রায় দুই মাস আগে। সারোয়াতলী ইউনিয়নের খিতাপচর গ্রামের মাওলানা মো. মাহবুবুল আলম বলেন, গত বছর সরকারি রাস্তার ধারে অল্পপুঁজিতে শিমচাষ করে ১০/১২ জনের সংসারে সবজির চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট শিম বাজারে বিক্রি করে লাভবান হয়েছি। তাই এবার বাড়তি কিছু চাষ করে আরো বেশি লাভের আশা করছি। এছাড়াও পশ্চিম গোমদ-ীর চরখিজিরপুর এলাকার শিমচাষি আজিজুর রহমান বলেন, প্রায় ১০ শতক জমিতে এবার পরীক্ষামূলকভাবে শিম লাগিয়েছি। সবমিলিয়ে ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাজারে শিমের ভালো দাম থাকায় আগাম বিক্রি করে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো পেয়েছি। আবহাওয়াসহ অন্যান্য সবকিছু অনুকূলে থাকলে এখান থেকে বাকি সময়ে আরো ৪০/৫০ হাজার টাকার মতো আয় হবে বলে তিনি আশাবাদী। এ আশাবাদ শুধু আজিজের নয় উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সব শিমচাষিদের। উপজেলার একাধিক শিমচাষি বলেন, আমন ধান কাটার পর ধানি জমি, সড়কের দু’ধারে গোবর ও সাদা-কালো সার দিয়ে  তৈরি করা বীজতলার ওপর শিম বীজ রোপণ করে সহজেই শিমচাষ করা যায়। পানি খুব একটা লাগে না। অল্পপরিশ্রম ও কম পুঁজিতে শিমচাষ করা সম্ভব বলে যে কেউ অন্যান্য কাজের পাশাপাশি শিমচাষ করতে পারে। তাই অন্যান্য চাষের চেয়ে শিমচাষে একটু আগ্রহ বেশি তাদের। তবে তারা আক্ষেপ করে বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে এখানে শিমের প্রচুর চাষ হলেও এব্যাপারে স্থানীয় কৃষি বিভাগ, সরকারি কিংবা অন্যান্য সংস্থার সহায়তা তারা পান না। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কোনো কারিগরি প্রশিক্ষণ না থাকায় স্থানীয় চাষিরা তাদের নিজস্ব সনাতন পদ্ধিতে শিমচাষ করে থাকে বিধায় ফলনও তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে। তাদের দাবি একটু সহযোগিতা পেলে এ চাষে বিপ্লব ঘটাতে পারবেন তারা। বোয়ালখালী পৌরসভার প্যানেল মেয়র মিসেস জোবাইদা বেগম ও শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মুহাম্মদ ফারুকে আজম বলেন, কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতা থাকলে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন, তার প্রমাণ এখানকার শিমচাষিরা। ফলনও ভালো হয়। বিনিময়ে আর্থিক লাভবান হন তারা। বোয়ালখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু জাফর মো. মঈন উদ্দীন বলেন- বোয়ালখালীতে খাল-বিল, নদীর তীর ও পাহাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচুর পরিমাণ শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হয়ে থাকে। তবে তা বিচ্ছিন্নভাবে হয়ে থাকে বিধায় এর ভালো সুফল ভোগ করতে পারেন না কেউ। আমরা চেষ্টা করছি চাষিদের এ ব্যাপারে আরো বেশি আগ্রহী করে তুলতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনীতি

৩ জানুয়ারি, ২০২৩
২১ নভেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ