Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শতকোটি টাকা মূল্যের রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়া পড়ে আছে মাটিতে!

| প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : পথে পথে হয়রানি, ভোগান্তি আর প্রশাসনের বিরূপ মনোভাব ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারণে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কাঁকড়া রপ্তানি। এসব কারণে খুলনার ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট মিলে বৃহত্তর খুলনায় শতকোটি টাকা মূল্যের রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়া মাটিতেই পড়ে আছে। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাজার হারানোর আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা এর জন্য পণ্য রপ্তানি নীতিমালা ও আইনের অপপ্রয়োগকে দায়ী করেছেন।
খুলনা ও বাগেরহাটের কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েনে, গত ৩ বছর ধরে কাঁকড়া রপ্তানি দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শুধু কাঁকড়া রপ্তানি করে এখন প্রতিবছর গড়ে আয় হচ্ছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা। রপ্তানি তালিকায় অপ্রচলিত এই পণ্যই বদলে দিচ্ছে লাখো মানুষের ভাগ্য। যে হারে চাহিদা বাড়ছে তাতে ‘সাদাসোনা’ হিসেবে পরিচিত গলদা চিংড়িকে অদূর ভবিষ্যতে হার মানাতে পারে এই জলজ সম্পদ। দেশের পাঁচ উপকূলীয় এলাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে কাঁকড়ার। মোটাতাজাকরণ ও পোনা পালন প্রকল্পে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় অন্তত শতাধিক কোটি টাকামূল্যের রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়া মাটিতেই পড়ে আছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রথম ১৯৭৭ সালে মাত্র ২ হাজার ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে বেড়ে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এসে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৭৩ টনে। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪১৬ টনে। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সেই রপ্তানি হয়েছে ৮ হাজার ৫২০ টন। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০ হাজার এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ১০ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন ছাড়িয়েছে। কাঁকড়া রপ্তানির বড় অংশ যায় চীনে, তারপর রয়েছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, জাপান, সিংগাপুর, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মিয়ানমার এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ মিলিয়ে মোট ১৮টি দেশে এই কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে।
এ বিপুল পরিমাণ কাঁকড়া রপ্তানিতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাদের দাবি, প্রজনন মৌসুমে নদ-নদী থেকে কাঁকড়ার পোনা আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় প্রশাসনের সদস্যরা নাজেহাল করে।
দিগরাজ কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান শেখ বলেন, প্রজনন মৌসুমে কোন কাঁকড়া নদী থেকে সংগ্রহ করা হয় না। এ মৌসুমে ঘেরের সংরক্ষিত কাঁকড়া বাজারজাত করা হয়। বিষয়টি পুলিশসহ প্রশাসনের অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা না জেনেই পথিমধ্যে পরিবহন আটকে দেয়। এ সময় হয়রানির শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের। চালনা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুর রহিম গাজী বলেন, ‘কোস্টগার্ড অনেক সময় না জেনে বুঝেই কাঁকড়া নষ্ট করে দেয়। পোনা কাঁকড়া কখনও এক দুই সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয় না। এ জন্য এখন নদী থেকে আহরণ করে সেই পোনা বিক্রি করা সম্ভব নয়। এগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানা না থাকায় তারা আচমকা অভিযান চালিয়ে সেগুলো বিনষ্ট করে দেয়। দাকোপ-বটিয়াঘাটা এলাকা এ অঞ্চলের সবথেকে বড় মোকাম’। আর এখানেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে বলে তিনি দাবি করেন। পাইকগাছা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অদিবাস কুমার বলেন, কাঁকড়া পানি থেকে ডাঙায় ওঠানোর পর ৪/৫ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এর মধ্যে সেটা ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে হয়। না হলে মারা যায়। তবে স্থানীয় পর্যায় এবং হাইওয়েতে কোনভাবে যদি গাড়ি আটকে রাখা হয় তবে এগুলো মারা যাওয়ার আশংকা থাকে। তিনি এ ধরনের হয়রানি বন্ধের দাবি জানান। খুলনা বিভাগীয় মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার জানান, বর্তমানে খুলনা অঞ্চল থেকে কত টাকার এবং কি পরিমাণ কাঁকড়া রপ্তানি হয় তার হিসাব নেই তাদের কাছে। মৎস্য অধিদপ্তর ঢাকায় পূর্ণাঙ্গ হিসাব আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ