পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মাসেতু নির্মাণে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার ঘটনা গোটা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে ওই ঘটনা ফলাও করে প্রচার করায় বাংলাদেশ এবং বর্তমান সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হয়। সাড়ে তিন বছর আগের ওই ঘটনার পর বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি কিছু ব্যক্তিত্বের দৌড়ঝাপ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়াকর্ম ও মিডিয়ার অতি উৎসাহ পদ্মা সেতু ইস্যুতে সরকারতে বিপাকে ফেলে দেয়। যা ছিল সরকারের জন্য চরম অবমাননাকর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলছে। পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার কারণ পর্দার আড়ালে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস কলকাঠি নাড়ছেন বলে মনে করে সরকার। কানাডার আদালত পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলা খারিজ করে দেয়ার পর সবর হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলো। তারা এখন মনে করছেন ওই সময় পদ্মা সেতু ইস্যুতে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট করায় ড. ইউনূসকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। জাসদের নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদল ঘোষণা দিয়েছেন সিদ্ধান্ত হলে তিনি এবং মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন যৌথভাবে ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বাদী হবেন। বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ক্ষুদ্র ঋণের জনক ড. ইউনূসের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে সংসদে থাকা দলগুলো কার্যত একাট্টা হয়েছে।
কানাডার একটি আদালত পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ষড়যন্ত্র মামলা খারিজ করে দিয়ে অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দেয়ার পর আলোচিত এ ইস্যুতে সামনে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। দলটি জাতীয় সংসদে ও সংসদের বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ড. ইউনূস ও জার্মানির অর্থে পরিচালিত দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবি’র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের দাবি দেশের যারা পদ্মসেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন তাদের সবাইকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় যে অধিক অর্থ ব্যয় হচ্ছে সে ক্ষতিপূরণ বিশ্বব্যাংককে দিতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করারও দাবি জানানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী দল জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের দাবি করে বলেছেন, পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ‘গালগপ্পের’ অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্তে ইন্ধন যুগিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূস। এ জন্য ড. ইউনূসকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। শুধু তাই নয় এ ইস্যুতে সব ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের নামে এ সরকারের ওপর কলংকের বোঝা চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তা আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সেখানে কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর মতো অন্যায়ের সঙ্গে মাথা নত করেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো দুর্নীতি হয়নি, আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে নোবেল জয়ী ড. ইউনূস এবং আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নাম এসেছে। আমাদের দেশের কিছু মানুষ টকশোয় তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছিলেন। আদালতের রায়ের মাধ্যমে তাদের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সুরে বলবো, এখন তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, কানাডার আদালত পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির মামলায় যে রায় দিয়েছে তাতে প্রমাণিত হয়Ñ এতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক কাগজপত্রের ভিত্তিতে কিছু করে না তা প্রমাণিত হয়েছে। তারা দু-তিনজন ব্যক্তির স্বার্থের কারণে একটা নির্দোষ দেশকে দোষী করার চেষ্টা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় কানাডার আদালতে পদ্মাসেতু দুর্নীতি ষড়যন্ত্র মামলার রায়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে ষড়যন্ত্রকারীদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছেন। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, প্রকল্পটিতে দুর্নীতির অভিযোগের কোনো প্রমাণাদি আদালত না পাওয়ায় প্রমাণ হয়েছে অভিযোগটি ছিল সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও গুজব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয় বলেন, যারা এ ধরনের অভিযোগ করেছেন, তাদের উচিত হবে, প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার এবং দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তারা দেশপ্রেমিক নন।
জয় তার লেখায় অভিযোগ করেন, বিশ্বব্যাংক আমার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে তাঁর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করে। সে সময়ের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন আমাদের সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন প্রদান বাতিল করার নির্দেশ দেয়। জয় বলেন, ইউনূসের কারণেই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ দেয়া বন্ধ করে। ইউনূস তার বিদেশি বন্ধুদের ব্যবহার করে বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চেয়েছিল।
এদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, পদ্মসেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে অভিযোগ তোলা বিশ্বব্যাংকের পক্ষ নিয়ে সাফাই গেয়ে কথা বলেছেন ড. ইউনূস ও টিআইবিসহ দেশের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ। কানাডার আদালতের রায়ের পর এদের সবাইকে দেশবাসীর সামনে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি।
গতকাল সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এ দাবি জানান। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে পদ্মসেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। এর পক্ষ নিয়ে সাফাই গেয়ে কথা বলেছেন ড. ইউনূস ও টিআইবিসহ দেশের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ। কানাডার আদালতে প্রমাণ হয়েছে পদ্মসেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তাই এদের সবাইকে দেশবাসীর সামনে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ষড়যন্ত্র করেছেন তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে হাছান বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ক্ষুদ্র ঋণের জনক ড. ইউনূসের সমালোচনা করে হাছান বলেন, বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে তখন ড. ইউনূস বিশ্বব্যাংকে উচ্চ পর্যায়ের লোকদের কাছে ইমেল পাঠান যেন তারা এ প্রকল্পে অর্থায়ন না করেন। যা সা¤প্রতিকালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ষড়যন্ত্র করছেন তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। তবে সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে কিনা সেটা জানেন না তিনি। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে কিনাÑ তা সরকার জানে।
কানাডার আদালতের রায়ে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে অভিমত প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বলেন, এ রায়ের পরে বিএনপির মাহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কোথাকার কোন আদালত কি রায় দিয়েছে তা নিয়ে আমরা ভাবি না। তাদের এ বক্তব্য হচ্ছে গ্রাম্য মোড়লদের মতো। মোড়লরা যেমন বিচারে হেরে গেলে বলেন যা বলেছিতো বলেছি। তাদের কথা ওই রকম। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আরও বলেন, বাংলাদেশের কোনো আদালত এ রায় দিলে বিএনপিসহ অন্যরা বলতেন সরকারের প্রভাবে আদালত এ রায় দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না মন্তব্য করে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার সততা ও যোগ্যতা দিয়ে তা প্রমাণ করেছে যে পদ্মা সেতু দুর্নীতি নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। যারা পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে তথ্য সন্ত্রাস চালিয়েছে তাদের বিচার হওয়া উচিত। জাতির কাছেও তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। এদিকে, কানাডার আদালতে পদ্মা সেতুর অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এক বিবৃতিতে বলেন, কানাডার আদালতের এই রায় প্রমাণ করে, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাকে জড়িয়ে বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ করেছে তা সর্বৈব মিথ্যা। তিনি বলেন, যারা সত্যের পথ অনুসরণ না করে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, যে সব পত্রিকা মিথ্যা রিপোর্ট করেছে, বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা অভিযোগে সহায়তা দিয়েছে, আমার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে, যারা পদ্মাসেতু নির্মাণকে বিলম্বিত করেছে- তাদের আল্লাহ যেন সত্যের পথ দেখান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।