নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ভারত : ৪৮৭/৬ ডি. ও ১৫৯/৪ ডি.
বাংলাদেশ : ৩৮৮ ও ২৫০
ফল : বাংলাদেশ ২০৮ রানে পরাজিত
চতুর্থ ইনিংসে ভারতের পিচ মানেই খানা-খন্দকে ভরে যাওয়া! এমন বৈশিষ্ট্যের পিচে ব্যাট করতে যে কতটা বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিতে হয়, তা টের পেয়েছে প্রতিটি প্রতিপক্ষই। নিকট অতীতে চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের অসহায় আত্মসমর্পণ এতটা ভরসা দেয়নি বাংলাদেশ দলকেও। সে কারণেই চতুর্থ ইনিংসে ১২৫ ওভার পার করার চ্যালেঞ্জটা সহজ মনে হয়নি কখনোই। ৪৫৯ রানের টার্গেট পাড়ি দিয়ে জিতলে হলে করতে হবে বিশ্বরেকর্ড, ১২৫ ওভার কাটিয়ে ড্র’ করাটা হবে ভারতের মাটিতে তৃতীয় সেরা রেকর্ড। এমন কিছু করতে পারলে বাংলাদেশ দলের জন্য হবে তা জয়ের সমতুল্যই বটে। চতুর্থ দিন শেষে ১০৩/৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম দিনে ব্যাট করতে নেমে অপ্রত্যাশিত কিছু করতে পারেনিÑ পঞ্চম দিন পাড়ি দিতে এক ঘণ্টা ৪২ মিনিট আগেই প্রতিরোধ লড়াইটা থেমেছে বাংলাদেশের। চতুর্থ ইনিংসে অশ্বিন (৪/৭৩), রবীন্দ্র জাদেজার (৪/৭৮) বোলিংয়ে বাংলাদেশ থেমেছে ২৫০ এ। ভারতের মাটিতে ১৬ বছর দুই মাস ২৯ দিন পর টেস্ট আতিথ্য পাওয়ার ম্যাচে হেরে গেছে বাংলাদেশ দল ২০৮ রানে। বাংলাদেশকে হারিয়ে টানা ১৯ টেস্ট অপরাজেয় থাকার রেকর্ডে নতুন উচ্চতায় উঠল কোহলীর নেতৃত্বাধীন দলটি। তবে এই হারেও আছে বীরত্ব। ভারতের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে ১০০ ওভার ব্যাট করার অতীত ছিল সর্বসাক‚ল্যে সাতটি। যে টার্গেট পাড়ি দিতে এসে জয়ের রেকর্ড নেই কারো। ২০০০ সাল থেকে এমন লক্ষ্য পাড়ি দিতে পেরেছে কেবল নিউজিল্যান্ড। ১০৭ ওভার ব্যাটিংয়ে কাটিয়ে ম্যাচ বাঁচাতে পেরেছে শুধু তারাই। ওভারের দিক থেকে চতুর্থ ইনিংসে লম্বা ব্যাটিং বীরত্বটা অন্তত প্রদর্শন করতে পেরেছে বাংলাদেশ। কাঁটায় কাঁটায় আড়াইশ’তে থেমে ২০৮ রানে হেরেও তাই বাংলাদেশের ব্যাটিং বীরত্ব পেয়েছে প্রকাশ। সময়ের সেরা স্পিন জুটি অশ্বিন-জাদেজার আক্রমণের বিপরীতে ১০০.৩ ওভার খেলে হায়দারাবাদে প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ দল। বল ছাড়তে ছাড়তে বোলারকে ক্লান্ত করার পরীক্ষাটা নিয়েছেন টেল এন্ডার কামরুল ইসলাম রাব্বী হায়দারাবাদ টেস্টের পঞ্চম দিনে। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই রানের ইনিংসে খেলেছিলেন তিনি ৭৩ মিনিট, হায়দারাবাদ টেস্টে ৭০ বলে অবিচ্ছিন্ন তিন রানের ইনিংসে সময় কাটিয়েছেন ৮৪ মিনিট। লাঞ্চের পর মিরাজের সঙ্গে পার্টনারশিপটি তার ১৭ রানের হলেও ৮৫ বল পার করা ৫০ মিনিটের এই পার্টনারশিপ ভারত বোলারদের কম অস্বস্তিতে ভোগায়নি। তবে ভারত বোলারদের অস্বস্তিতে ভোগানোর দায়িত্বটা ছিল যাদের, তারা যে সেই অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেননি।
দিনের প্রথম আধ ঘণ্টা নিয়ে ভয় পেয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং পরামর্শক থিলান সামারাবীরা। সেই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ দল। দিনের তৃতীয় ওভারে রবীন্দ্র জাদেজার ভয়ঙ্কর এক টার্নে শর্ট লেগে সাকিব ক্যাচ দিতে বাধ্য হয়েছেন (২২)। শঙ্কা কাটিয়ে পঞ্চম জুটিতে মাহামুদুল্লা-মুশফিকুর ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে ৫৬ রানে জ্বালিয়েছিলেন আলো। তবে বলের আকৃতি পরিবর্তন হওয়ায় ৫১তম ওভারে বল পরিবর্তন করাটা শুভকর হয়নি বাংলাদেশ দলের। প্রথম ইনিংসে বাহবা পাওয়া ব্যাটিং বাদ দিয়ে আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাটিংকে বেছে নিয়ে ইশান্ত শর্মাকে দর্শনীয় পুলে ছক্কা মেরে মনস্তাত্বিকভাবে ভারত বোলারদের দিতে চেয়েছিলেন ধাক্কা। অশ্বিনের দিনের প্রথম বল থেকেই হয়ে উঠেছিলেন বেপোরোয়া। পর পর তিনটি ডেলিভারিকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলে দ্বিতীয়টি থেকে আদায় করেছেন বাউন্ডারি। কিন্তু যে পজিশনে মেরেছেন অশ্বিনকে বাউন্ডারি, সেই ওভারের চতুর্থ বলে সেই পজিশনেই দিয়েছেন ক্যাচ মুশফিকুর (২৩)। মুশফিকুরের ওভাবে চলে যাওয়ায় ভারত ক্রিকেটারদের উৎসব, গ্যালারির দর্শকের উচ্ছ¡াসÑম্যাচের আগাম পরিণতি দিয়েছে জানিয়ে। তার পরও সাকিব, মুশফিকুরকে হারিয়ে দিনের প্রথম সেশনে ৯৯ স্কোর কিছুক্ষণের জন্য দেখিয়েছে বাংলাদেশকে অপ্রত্যাশিত স্বপ্ন। টানা ১০ ইনিংস ফিফটিহীন কাটিয়ে মাহামুদুল্লাহ পেয়েছেন ফিফটির দেখা। লাঞ্চের পর চতুর্থ ওভারে ইশান্তের অ্যাঙ্গেল ডেলিভারিতে সাবিবর এলবিডাবøুতে (২২) এবং শর্ট বলে পুল করতে যেয়ে মাহামুদুল্লাহ লং লেগে ক্যাচ দিয়ে (৬৪) ফিরে আসলে জয়ের আবহ পেতে শুরু করে ভারত। টেল এন্ডাররা এর পর শুধু প্রতিরোধের দীক্ষা দিয়েছে। প্রথম ইনিংসে ফিফটিতে নিজেকে চেনানো মিরাজ জাদেজার অসাধারণ টার্ন এবং বাউন্সে উইকেটের পেছনে দিয়ে এসেছেন ক্যাচ (২৩) তার ফিরে নির্ধারিত সময়ে টি ব্রেক দেয়ার প্রয়োজন আর মনে করেননি আম্পায়াররা। অশ্বিনের বলে দু’টি রিভিউ আপিলের প্রথমটি হক আই ক্যামেরায় ক্যাচে হয়নি গণ্য, তবে ইয়র্কার ডেলিভারিটি তাসকিনকে থামিয়েছে এলবিডাবøুতে।
অশ্বিনের দ্রæততম আড়াইশ’ টেস্ট উইকেট ক্লাব এবং টানা চারটি সিরিজে সিরিজপ্রতি একটি করে ডাবল সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড ম্যাচে ভারতের রান পাহাড়ে (৬৮৭/৬ ডি.) চাপা পড়েও হতোদ্যম হয়নি বাংলাদেশ। তাদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর (৩৮৮), টেস্টে তিন হাজারী ক্লাবের সদস্যপদের ম্যাচে মুশফিকুরের বীরত্বপূর্ণ সেঞ্চুরি, চতুর্থ ইনিংসের চ্যালেঞ্জে ১০০ ওভার পাড়ি দিয়ে পঞ্চম দিনটি রোমাঞ্চিত করেও যে বাহবা পাচ্ছে বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।