Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওয়াশিংটন পোস্টের বিশ্লেষণ ধারণার চেয়েও শক্তিশালী ইরান

| প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : পরমাণু চুক্তির পাশাপাশি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়েও কঠোর অবস্থান নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি মেনে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম চালালেও এতে প্রকাশ্যে আপত্তি জানিয়েছে ট্রাম্প ও ইসরাইল প্রশাসন। আর তাই ইরানবিরোধী স্থানীয় সুন্নিপ্রধান দেশগুলোও ট্রাম্পের কার্যক্রমে খুশি। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের শক্তিকে ট্রাম্প খাটো করে দেখলে ভুল করবেন। কারণ, ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর এখন ধারণার চেয়েও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে দেশটি। খবরে বলা হয়, ক্ষমতায় আসার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তিপত্র ছিঁড়ে ফেলার ঘোষণা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ, ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে তেহরান প্রশাসনের ওই চুক্তির ঘোর বিরোধী তিনি। তার দল রিপাবলিকান শিবিরের দাবি, এই চুক্তির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আরো শক্তিশালী হয়েছে ইরানের অবস্থান। একই মত, মধ্যপ্রাচ্যের পশ্চিমা মিত্র আরব রাষ্ট্রগুলোরও। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের আগে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে শঙ্কা দেখা যায় বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে। পশ্চিমা রাষ্ট্র এবং আঞ্চলিক বৈরী মনোভাবাপন্ন রাষ্ট্রগুলো ধারণা করেছিল, পরমাণু বোমা তৈরির উদ্দেশ্যে গোপনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তেহরান। তবে তেহরান দাবি করে, শান্তিপূর্ণভাবে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতেই এই পরমাণু প্রক্রিয়াকরণ চালাচ্ছে তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ দেশ (যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও ব্রিটেন) এবং জার্মানি তেহরান প্রশাসনের সঙ্গে ওই পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইরান বাদে অপরপক্ষকে ডাকা হয় পি৫+১ নামে। চুক্তিটি মার্কিন কংগ্রেসে পাস করতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামাকে। এরপরও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে মেনে নিতে পারছেন না।
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বর্তমান সম্পর্কের গতিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে জর্জ ডাব্লিউ বুশের যুগ বুঝি ফিরে আসতে যাচ্ছে। বুশের শাসনামলে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি বিরোধ পৌঁছেছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এছাড়া, ইসরাইলের সঙ্গে বেড়েছিল লেবাননের শিয়া সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সংঘর্ষের পরিমাণও। এই হিজবুল্লাহই আবার ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তবে বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। ২০১১ সালের তথাকথিত আরব বসন্তের পর ছয় বছর বিশৃঙ্খলায় কেটেছে সুন্নিপন্থী আরব রাষ্ট্রগুলোতে। অন্যদিকে, এই সময় পরিকল্পিতভাবে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রভাব বলয় তৈরি করেছে ইরান। ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও লেবানন নিয়ে গড়ে তোলা এই অক্ষের সামরিক ও কূটনৈতিক প্রভাবও দিন দিন বাড়ছে। সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির গবেষক নিকোলাস হেরাস বলেন, ইরানকে এখন শক্তভাবে মোকাবেলা করতে গেলে আপনি পরিবর্তনটা উপলব্ধি করতে পারবেন। কারণ, দেশটির সঙ্গে এখন সম্ভাব্য সংঘর্ষের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতির যে ক্ষয়ক্ষতি হবে, এর ভার নিতে আগ্রহী হবে না যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্ররাষ্ট্রই। গত সপ্তাহে এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প লিখেছেন, ইরান আগুন নিয়ে খেলছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা তাদের প্রতি কতটা উদার ছিলেন, সেটা তারা এখনো উপলব্ধি করতে পারেননি। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তেমনটি হবে না। অন্যদিকে, ইরানের পক্ষ থেকেও ট্রাম্পের এই হুমকিকে গ্রাহ্য করা হয়নি। ট্রাম্পের বক্তব্যের পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টুইট বার্তায় জানান, ওয়াশিংটনের হুমকিতে ‘টলে’ যাওয়ার দেশ নয় ইরান। তিনি দম্ভ দেখিয়ে বলেন, আমরা যুদ্ধ শুরু করতে চাই না।
ইরানবিরোধীদের অভিযোগ, পরমাণু বোমা না বানালেও এই বোমা বহনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন অব্যাহত রাখার মাধ্যমে ইরান মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো নিজেদের আওতায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের আরো অভিযোগ, তেহরান থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগর, ন্যাটো সদস্যের সীমানা থেকে ইসরাইল এবং আরব উপদ্বীপ সবই এখন ইরানের নখদর্পনে। ইরানের শক্তিশালী সেনাবাহিনী (রেভলিউশনারি গার্ড কোর) ছাড়াও সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়া বাহিনীর নিয়ন্ত্রণও এখন তেহরানের হাতেই। আরব ভূখ-ে তারা ট্যাঙ্ক ও ভারী অস্ত্র নিয়ে ক্লান্তিহীন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ইনস্টিটিউট ফর স্টাডি অব ওয়ার গত সপ্তাহে জানায়, ইরানের নিয়মিত সেনাবাহিনী নিজেদের সীমানা ছাড়িয়ে শত শত মাইল দূরেও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, বর্তমানে খুব কমসংখ্যক দেশেরই এই সক্ষমতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক নিয়ে ইরাকি শিয়া সংসদ সদস্য মোবাফ্ফিক আল-রুবাইয়ি বলেন, ইরানকে ধাক্কা দেয়া হলে তারা পড়ে যাবে না। ইরাক, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র খুব সুন্দর একটি সমীকরণ। ইরাকি শিয়ারা বহুদিনের চেষ্টায় এই সম্পর্ক তৈরি করেছে। তাই হুট করে এসে সব নষ্ট করে দেয়া ট্রাম্পের উচিত হবে না। ওয়াশিংটন পোস্ট, ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ