Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ বহাল, এটা রাজনৈতিক রায় -ট্রাম্প

| প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার দাবি নাকচ করে দিয়েছে মার্কিন আদালত। নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ বহাল রাখা হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে সাত দেশের মুসলিমদের প্রবেশে বাধা নেই বলে খবরে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের দেয়া নিষেধাজ্ঞাকে স্থগিত করে গত সপ্তাহে আগে যে রায় দিয়েছিল সিয়াটলের একটি আদালত, সেই রায় এবারও সর্বসম্মতিক্রমে বহাল রেখেছেন আপিল আদালতের তিন বিচারকের একটি প্যানেল। নবম মার্কিন সার্কিট আপিল আদালতের তিন বিচারকের যৌথ বেঞ্চ তার রুলিংয়ে বলেন, সরকার এমন কোনো প্রমাণ দাঁড় করাতে পারেনি যে ওই সাত মুসলিম দেশের নাগরিকরা কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কারণেই ওই আপিল আদালত নিম্ন আদালতে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে দেয়া রায়ই বহাল রাখে। একই সঙ্গে অভিবাসী নীতি নিয়ে ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্তের বিষয়টিও নাকচ করে দেয়। আদালতের এ রায়ে টুইটারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ট্রাম্প বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপশ নয়। প্রয়োজনে আবারও আইনি লড়াই চলবে। সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলোর সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের সংশ্লিষ্টতা থাকার ব্যাপারে সরকার প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি উল্লেখ করে এ রায় দেওয়া হয়। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সাত মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিক ও শরণার্থীদের প্রবেশে বাধা থাকছে না। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার নাইনথ ইউএস সার্কিট কোর্ট অব আপিলসে ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানি হয়। তিন বিচারকই সর্বসম্মতভাবে রুল জারি করেন। রুলে বলা হয়, ট্রাম্পের জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালত যে স্থগিতাদেশ দিয়েছে তা বহাল থাকবে। অর্থাৎ এর মধ্য দিয়ে ইরাক, ইরান, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, সুদান, সোমালিয়ার নাগরিকদের যাদের ভিসা আছে তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন। ট্রাম্পের ওই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আওতায় শরণার্থীদের প্রবেশ স্থগিত রাখার বিষয়টিও আর বহাল থাকছে না। অবশ্য, মামলাটি এখন পুরোপুরি মীমাংসার জন্য সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক বিচারকের সমন্বয়ে বড় একটি প্যানেল তৈরি করে সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার জন্য নাইনথ সার্কিট কোর্টে আবেদন জানাতে পারবে সরকার। অথবা সরাসরি মার্কিন সুপ্রিম কোর্টেও আবেদন জানানো যাবে। আর এর জন্য সরকার ১৪ দিন সময় পাবে। উল্লেখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে তিন মাসের জন্য সাত মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে স্থগিতাদেশ দেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা হয়, এ সাত দেশের নাগরিকরা তিন মাস যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলো হলোÑ ইরাক, ইরান, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, সুদান ও সোমালিয়া। এই আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মুসলিমদের বদলে খ্রিস্টান ও সংখ্যালঘুদের প্রাধান্য দেয়ার কথা বলা হয়। নির্বাহী আদেশের প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয় মুসলমানরা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। সংস্কৃতি কর্মীরা এর প্রতিবাদ জানান। নোবেল বিজয়ী শিক্ষা অধিকারকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিষ্ঠাতা, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ট্রাম্পের এ নিষেধাজ্ঞাকে মুসলিমবিরোধী নিষেধাজ্ঞা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। গত শুক্রবার ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে অস্থায়ী স্থগিতাদেশ দেয় সিয়াটলের আদালত। ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী নিষেধাজ্ঞায় সিয়াটলের সেই আদালতের দেয়া স্থগিতাদেশ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হয়। শনিবার শেষ রাতের দিকে ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে তা পুনর্বহালের আবেদন জানায়। সেসময় আদালত জানায়, চূড়ান্ত শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। গত মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ফেডারেল আদালতে এই নিষেধাজ্ঞা বহালের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে মার্কিন বিচার বিভাগ। সান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক নাইনথ ইউএস সার্কিট কোর্ট অব আপিলসে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করে ১৫ পৃষ্ঠার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নয় দাবি করে এটি প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার আইনসম্মত ব্যবহার বলে দাবি করা হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের আবেদন জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এ চূড়ান্ত শুনানি দিলো আপিল আদালত। সিএনএন, রয়টার্স, বিবিসি, এপি।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ বহাল থাকায় আবারো আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের রায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ট্রাম্প বলেন, হোয়াইট হাউজের জন্য এই রায় তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। এটা হলো গিয়ে একটা সিদ্ধান্ত, যা আমাদের বিপক্ষে গিয়েছে। তবে আমরাই মামলাটি জিততে যাচ্ছি। প্রসঙ্গত, গত ২৭ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। অনেক বিচারকের সমন্বয়ে বড় একটি প্যানেল তৈরি করে সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার জন্য নাইনথ সার্কিট কোর্টে আবেদন জানাতে পারবে সরকার। অথবা সরাসরি মার্কিন সুপ্রিম কোর্টেও আবেদন জানানো যাবে। আর এর জন্য সরকার ১৪ দিন সময় পাবে। তবে পরে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের ফেডারেল বিচারক স্থগিত করে রুল জারি করেন। অবশ্য এর বিরুদ্ধে আপিল করে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। আপিলে তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার আবেদন জানানো হলেও তা অগ্রাহ্য করে বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউস ও বিচার বিভাগকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার কথা বলে আপিল আদালত। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে রায় দেয় আপিল আদালত, যা আবারও ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই গেল। সিএনএন,বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ