Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফুলবাড়ীতে ২শ’ বিঘা জমির বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় অর্ধশত কৃষক

গভীর নলকূপে মেলেনি বিদ্যুৎ সংযোগ

প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ১টি গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ না হওয়ায় ২শ’ বিঘা জমির বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে ওই এলাকার অর্ধশত কৃষক। জানা গেছে, উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের চিন্তামন রাধিকাপুর মাঠের গভীর নলকূপটি নিয়ে ২টি গ্রুপের মধ্যে মালিকানা জটিলতায় বন্ধ হয়ে গেছে গভীর নলকূপটি বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে একটি পক্ষ তেলের মেশিন দিয়ে গভীর নলকূপটি কোন রকমে চালু করলেও, শেষ পর্যন্ত সেচ দিতে পারবে কি না ,তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে ওই এলাকার কৃষকরা। এদিকে বিদ্যুৎ সংযোগ না হওয়ায়, তেলের মেশিন চালিয়ে সেচ দিতে বোরো চাষিদের গুনতে হচ্ছে ৫গুণ বেশি সেচ খরছ। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, গভীর নলকূপটি ১৯৮২ সালে স্থাপন হওয়ার পর থেকে সমিতির মাধ্যমেই পরিচালিত হয়ে আসলেও ২০০৪ সালে গভীর নলকূপটি তৎকালীন সমিতির ম্যানেজার মফিজ উদ্দিনের ছেলে আজিজার রহমানসহ সমিতির কয়েকজন সদস্য সমিতির ৩৯ জন সদস্যের চাঁদার টাকা তাদের নিজের নামে বিএডিসিতে জমা দিয়ে খরিদসূত্রে মালিকানা দাবি করে। সেই সূত্র ধরে ২০০৪ সাল থেকে সমিতির ম্যানেজার মফিজ উদ্দিনের ছেলে আজিজার রহমান নিজ দায়িত্বে গভীর নলকূপটি পরিচালনা করে আসছে। চিন্তামন কৃষক সমবায় সমিতির নামে স্থাপিত গভীর নলকূপটির মালিকানা ম্যানেজার আজিজার রহমান দাবি করলে, সমিতির অন্য সদস্যরা গত ২০১৪ সালের গোড়ার দিকে ম্যানেজার আজিজার রহমানসহ ৮ জনকে বিবাদী করে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট অভিযোগ করেন। উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের জারিকৃত ৪(৬)/৯১-৯৬/৯৯-০২/৫৭৫৫ তারিখ ১৮/০৭/২০০৭নং স্মারকপত্র মোতাবেক বিআরডিবি কর্র্তৃক সমবায় সমিতির মাধ্যমে স্থাপিত গভীর নলকূপগুলো কৃষক সমবায় সমিতি ছাড়া কোনভাবেই ব্যক্তি নামে বিক্রয় বা হস্তান্তর আইনসিদ্ধ নয়, ফলে উপজেলা চেয়ারম্যান গত ১৭/১২/২০১৪ইং তারিখে সমিতির পক্ষে রায় প্রদান করেন। এরপর উপজেলা সেচ কমিটির আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে, তৎকালীন ম্যানেজার আজিজার রহমান, সহকারী জজ আদালত দিনাজপুরে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় সমিতির ম্যানেজার আজিজার রহমান মালিকানার রায় পান। এর পর সমিতির অন্য সদস্যরাসহ ওই সমিতির বর্তমান সভাপতি ফিরোজ হোসেন উচ্চ আদালতে আপিল করেন, উচ্চ আদালত চলতি সনের গত ৩ জানুয়ারি সহকারী জজ আদালতের আদেশ ১ বছরের জন্য স্থগিত করে সমিতির মাধ্যমে গভীর নলকূপটি পরিচালনার আদেশ দেন। এর পর গভীর নলকূপটির বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সমিতির সদস্যরা সকল নিয়মানুসারে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ হয়নি, ফলে কোন রকমে তেলের মেশিন বসিয়ে বোরো রোপণ করলেও শেষ পর্যন্ত চাহিদানুযায়ী পানি সেচ দিতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে ওই এলাকার কৃষক। এই বিষয়ে দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (অপারেশন) জানান, উচ্চ আদালতে মালিকানা জটিলতার বিচার থাকায় গভীর নলকূপটিতে সময় মতো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায়নি। এদিকে গভীর নলকূপটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় কোন করমে তেলের মেশিন দিয়ে পানি সেচ দিলেও কৃষকদের সেচ মূল্য গুনতে হচ্ছে ৫গুণ বেশি। রাধিকাপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশের জানান, গভীর নলকূপটি দিয়ে ১২০ একর জমিতে পানি সেচ দিয়ে মাসে বিদ্যুৎ খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা, এখন তেলের মেশিন দিয়ে ৯০ একর জমিতে পানি সেচ দিয়ে মাসে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ দিয়ে এক ঘণ্টায় ৪ বিঘা জমিতে পানি সেচ দেয়া গেলেও এখন তেলের মেশিন দিয়ে এক ঘণ্টায় এক বিঘা জমির বেশি সেচ দেয়া যাচ্ছে না। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে বোরো চাষিরা। এলাকার কৃষকদের দাবি মালিকানা যারই থাকুক অন্ততপক্ষে সেচ কমিটি নলকূপটি পুরোপুরি চালু করুক, উচ্চ আদালত মালিকানার রায় যার পক্ষে দিবে সেই পাবে, তার আগে কৃষকদের কৃষি কাজ চলুক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফুলবাড়ীতে ২শ’ বিঘা জমির বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় অর্ধশত কৃষক
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ