Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লায় চাঁদা না দেয়ায় নির্মমভাবে খুন হলো ঢাকার ব্যবসায়ি ছাদেক

ভূমিদস্যু বিল্লাল গ্রেফতার

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার : ব্যবসায়ি খুনের মধ্যদিয়ে পতন শুরু হলো কুমিল্লা শহরতলীর পশ্চিম চাঁন্দপুর এলাকার ভূমিদস্যু নামে খ্যাত বিল্লাল হোসেন ওরফে হাজী বিল্লালের ত্রাসের সাম্রাজ্যের। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকার মিরপুরে বসবাসকারি ছাদেক আলী খন্দকার নামের এক ব্যবসায়িকে চাঁদা না দেয়ার কারণে হাজী বিল্লাল নিজ এলাকায় পেয়ে তার দুই ছেলেসহ সঙ্গিয় তিন/চারকে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও চাইনিজ চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। খুনের পর দুই ছেলে এলাকা ছাড়লেও বিল্লাল ঘরের দরজা বন্ধ করে লুকিয়ে থাকে। খুনের ঘটনায় গোটা চাঁন্দপুর এলাকার হাজারো নারী-পুরুষ ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুরে বিল্লালের বাড়িতে হামলা চালায়।
এসময় বিক্ষুব্ধ লোকজনকে সামলাতে পুলিশ হিমশিম পোহায়। একপর্যায়ে পুলিশ অবস্থা বেগতিক দেখে প্রথমে বিল্লালের স্ত্রী ও কন্যাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে বিল্লাল জনরোষের কবলে পড়লে পুলিশ তাকেও উদ্ধার করে থানা হাজতে নিয়ে রাখে। চাঁন্দপুর গ্রামের বিক্ষুব্ধ লোকজন বিকেল সাড়ে তিনটায় কোতয়ালী থানার সামনে এনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ভূমিদস্যু হাজী বিল্লালের ফাঁসির দাবি জানায়।
হাজী বিল্লাল। কুমিল্লায় ভিলেজ পলিটিকসে লেবাস বদলানো একটি নাম। যখন যে সরকার ক্ষমতায় তখন সেই দলের লোক হয়ে যায় হাজী বিল্লাল। নীরব চাঁদাবাজি, ভূমি দস্যুতার গডফাদার। চাঁন্দপুর এলাকায় কোন লোক বাড়ি তৈরি করলে তার রড় সিমেন্টের দোকান থেকে নির্মাণ সামগ্রী না কিনলে আর তার দুই ছেলে রিজন ও রনিকে চাঁদা না দিলে ভূমিকে ইটের গাঁথুনি দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। হাজী বিল্লাল নারী নির্যাতনের মামলায়ও ফেঁসেছিলেন। কিন্তু রঙ বদলানো রাজনীতির জোরে বেঁচে যান। তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অনেক অভিযোগ। কিন্তু ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কারণ হাজী বিল্লালের রঙ বদলানো রাজনীতি। হাজী বিল্লাল দীর্ঘদিন ধরে চাঁন্দপুর গ্রামে নিজের দুই ছেলেসহ আরও কিছু লোক নিয়ে গড়ে তোলেছেন ত্রাসের সাম্রাজ্য। গ্রামের মানুষ ভয়ে বা চক্ষুলজ্জায় এসবের প্রতিবাদ করতো না। নীরবে সব সয়েছে। কিন্তু গতকাল চাঁন্দপুর গ্রামের এক নির্ঞ্ঝঞ্জাট মানুষ ছাদেক আলীর নির্মম নৃশংস খুনের ঘটনায় গ্রামবাসী ঘরে বসে বসে থাকতে পারেনি। হাজী বিল্লালের ত্রাসের সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিতে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছিল। গ্রামবাসীর ভাষায়, হাজী বিল্লালের পতন শুরু হল। যা শেষ হবে বিল্লাল ও তার দুই ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মধ্যদিয়ে।   
কুমিল্লা শহরতলীর চাঁন্দপুর দক্ষিণপাড়ার মৃত মর্তুজ আলীর ছেলে ছাদেক আলী খন্দকার (৫৫) দীর্ঘদিন দুবাইয়ে চাকরি করেছেন। ৬/৭ বছর আগে দেশে ফিরেছেন। নগরীর গাংচর ও পার্শ্ববর্তী চাঁন্দপুর গ্রামে নিজের বাড়ি থাকলেও তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকা মিরপুরের ১০ নম্বর সেকশনে থাকতেন। ব্যবসা করতেন। সময় পেলে ছুটে আসতেন নিজের জন্মস্থান কুমিল্লার চাঁন্দপুর গ্রামে। চাঁন্দপুর এলাকার বৌবাজার রোডে ধানসিঁড়ি নামে একটি হাউজিংয়ের ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিলেন ছাদেক আলী। গত মঙ্গলবার তিনি ঢাকা থেকে কুমিল্লায় এসেছিলেন। আর কুমিল্লায় এলে চাঁন্দপুর দক্ষিণপাড়ার পৈত্রিক বাড়িতেই থাকেন। ঘটনার দিন গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ছাদেক আলী তার বড় বোনের ছেলেদের দেখার জন্য পায়ে হেঁটেই হাজী বিল্লালের বাড়ির সামনে দিয়ে চাঁন্দপুর কেরানীবাড়ি রোড়ের ভুঁইয়া বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ওই রোডে জামাল মিয়ার সেনিটারি দোকানে বসা ছিল হাজী বিল্লাল। এসময় ছাদেক আলীকে দেখে হাজী বিল্লাল ডাক দেয়। ছাদেক আলী জামালের দোকানের সামনে গেলে হাজী বিল্লাল রাগান্বিত স্বরে বলে ‘ধানসিঁড়ি হাউজিংয়ে যারা প্লট কিনেছে বা সেখানে জমি বেচাকেনার ব্যবসা করছে তারা সবাই হাজী বিল্লালের পরিবারকে চাঁদা দিয়েছে। কিন্তু তোরা দিচ্ছিস না। বিষয়টা আমার দুই ছেলের কানে গেলে কি অবস্থা হবে জানিস? এধরনের কথা নিয়ে ছাদেকের সাথে বাকবিতন্ডা শুরু হয় হাজী বিল্লালের। আর বিল্লালের সঙ্গে যোগ দেয় সেনিটারি জামালও। একপর্যায়ে জামালের দোকান থেকে হাজী বিল্লাল রড় নিয়ে ছাদেকের ওপর চড়াও হয়। খবর পাঠানো হয় হাজী বিল্লালের দুই ছেলে রিজন ও রনির কাছে। প্রাণ বাঁচাতে ছাদেক দৌড়ে চাঁনপুর প্রাইমারি স্কুলের সামনে নিরাপদ আশ্রয়ের চেষ্টা করে কিন্তু হাজী বিল্লাল ও তার দুই সন্ত্রাসী ছেলেসহ সঙ্গী আরও তিন/চারজনের কবল থেকে রক্ষা মেলেনি ছাদেকের। তারা রড়, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ছাদেকের ঘাড়, পিঠ থেতলা করে দেয়। ভেঙ্গে দেয় পা। তারপর হাজী বিল্লালের দুই ছেলে চাইনিজ চাপাতি দিয়ে মাথায় কুপিয়ে ব্যবসায়ি ছাদেকের মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। বেঁচে আছে মনে করে স্থানীয় কিছু লোক ছাদেককে প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, বেঁচে নেই। তারপর নেয়া হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকেও মৃত ঘোষণা দেয়া হয়। তারপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ চাঁন্দপুর দক্ষিণপাড়ায় ছাদেক আলীর জেঠাতো ভাই ইউনুস মেম্বারের বাড়িতে আনা হয়।
এদিকে ব্যবসায়ি ছাদেক আলীর মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে এলাকায় একদিকে শোকের ছায়া নেমে আসে। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে হাজী বিল্লালের এলাকায় হামলা চালায়। খুনের ঘটনায় জড়িত বিল্লালের দুই ছেলে আগ থেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলেও বিল্লাল বাড়ি ছাড়ার সুযোগ না পেয়ে ঘরের ভেতর লুকিয়ে থাকে। এদিকে ব্যবসায়ি ছাদেকের লাশ বাড়িতে আনার পর এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণ ঘটে। এসময় গ্রামের লোকজন মিছিল নিয়ে কোতয়ালী থানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা হাজী বিল্লালের ফাঁসি ও তার দুই সন্ত্রাসী ছেলেকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানায়। আজ শুক্রবার বাদ জুমা চাঁন্দপুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে ব্যবসায়ি ছাদেকের জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। নিহত ছাদেক এ মসজিদের মোতয়াল্লীর দায়িত্বে ছিলেন। তার দুই ছেলেÑ মেয়ের মধ্যে বড়, মেয়ে ইরিন ঢাকায় এমবিএ পড়ছে। আর ছেলে ইব্রাহিম সামি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যবসায়ি

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ