Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জলবায়ু ইস্যুতে মুখ খুলছেন না মার্কিন বিজ্ঞানীরা

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ ও সিদ্ধান্ত দিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার সিদ্ধান্তে বিজ্ঞানীরা এতটাই গুটিয়ে গেছেন যে, এসব ইস্যু নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে মুখ খুলতেও রাজি হচ্ছেন না অনেকে। বলা যায়, মুখে কুলুপ এঁটেছেন তারা। বিতর্কিত ডাকোটা অ্যাক্সেস এবং কিস্টোন পাইপলাইন স্থাপনের অনুমতি, সরকারি কর্মকর্তাদের থামিয়ে দিয়ে এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির (ইপিএ) চুক্তি বাতিল এবং প্রথমবারের মতো ইপিএর ওয়েবসাইট থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মুছে ফেলার নির্দেশের মধ্য দিয়ে এই আতঙ্ক তৈরি করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিশ্বাস করেন না নতুন এই প্রেসিডেন্ট। তার মতে, এসব তথ্য পুরোপুরি ভিত্তিহীন। আর জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য জীবাশ্মের ভালো বিকল্প নেই। সম্প্রতি নিজেদের কাজ নিয়ে হোয়াইট হাউস থেকে কয়েক মাইল দূরে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিজ্ঞানীরা। কয়েকটি সূত্র বলছে, ওই বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন আসলেই বাস্তবিক কিনাÑ এমন কোনো কথা হয়নি। তবে বৈঠক শেষে মিডিয়ার কাছে মুখ খুলতে চাননি তারা। গত ২৪ জানুয়ারি এক ইপিএ কর্মী বলেন, আমি জানি না কী ঘটতে চলেছে। কেউই জানে না কী ঘটবে। এটা অদ্ভুত। লোকজন আমার দিকে এগিয়ে এসে আলিঙ্গন করছেন। তবে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় অনেক ইপিএ কর্মীর মতো তিনিও নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিজের এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার এই কর্মী জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ইপিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে কর্মকর্তাদের নিষেধ করে দিয়েছেন। এমনকি ব্লগে লিখতে ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠাতেও বারণ করা হয়েছে। শুধু একান্ত জরুরি বিষয়গুলো বার্তা হিসেবে দেয়া যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া অফিসের বাইরে কর্মীদের যেকোনো বৈঠক বা সেমিনারের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে অবগত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একজন বিজ্ঞানী জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সংকটের কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের এমন আতঙ্কে থাকার ফলে তাদের কাজে বিঘœ ঘটতে পারে।
ইপিএ-প্রধান হিসেবে মনোনীত স্কট প্রুইট-ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সুরে কথা বলছেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন আসলেই বাস্তব কি-না, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনাই হয়নি। পরিবেশবাদীদের আপত্তি সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেন জলবায়ু সুরক্ষার গলা টিপে ধরার পথে অগ্রসর হচ্ছেন। সরকারি বিধিনিষেধের কবলে তাই জলবায়ু ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংকটের আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। শঙ্কা রয়েছে নিজেদের দীর্ঘ পেশাগত জীবন নিয়েও। জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন জানান, কৃষি বিভাগের একজন কর্মী তাকে অপেক্ষাকৃত ভালো বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখনও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে রাষ্ট্রীয় খড়্গ স্পষ্ট না হওয়ায় সেসব প্রস্তাব নাকচ করে দেন এই জলবায়ু কর্মী। নিজের নাম লেখা ফলক (নেমপ্লেট) সরিয়ে ফেলে এই জলবায়ু কর্মী বলেন, আমি আসলে আপনার সঙ্গে কথা বলতে ভয় পাচ্ছি। তিনি যখন এ কথা বলছিলেন, তখন তার চোখের ভাষা এবং কষ্টের হাসি যেন তার অন্য সহকর্মীদের অবস্থারও কথাও জানান দিচ্ছিল। বাস্তবিকই অন্য অনেকের মধ্যেই এটা দেখা গেছে।
নিজ কর্মস্থলের আসন্ন নিয়তির শঙ্কাকে সঙ্গী করেই কাজ করে যাচ্ছেন মার্কিন গবেষক-বিজ্ঞানীরা। মশার কামড় থেকে শুরু করে তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট রোগবালাই নিয়ে নিজেদের গবেষণা প্রতিবেদন হাজির করছেন তারা। কাজ করছেন পানির প্রাপ্যতা হ্রাস আর বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এত কাজের মধ্যেও একটা অন্ধকার রাজনীতির থাবার মধ্যে রয়েছেন তারা। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে মার্কিন সিনেটে প্রথম শুনানি হয়েছিল ৩০ বছরের বেশি সময় আগে। এতদিনে বৈশ্বিক উষ্ণতা আরও বেড়েছে। বিজ্ঞানীদের সঙ্গে নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সামগ্রিক ইস্যুটি অনুধাবনের চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারগুলো। এর মধ্য দিয়ে তারা মানুষ ও ধরিত্রীকে বাঁচানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আগের সরকারগুলোর সেই চেষ্টা হয়তো শিগগিরই থামিয়ে দেবেন ট্রাম্প। তবে এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাওয়ার আগ পর্যন্ত শঙ্কা নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। দি ইন্টারসেপ্ট, ট্রিবিউন। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ