Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্দেশনা লঙ্ঘনে দুই স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান

পাটজাত পণ্যের ব্যবহার শতভাগ কার্যকর হচ্ছে না কুষ্টিয়ায়

| প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া : পাটজাত পণ্য ব্যবহারে সরকারি নির্দেশনা মানছে না খোদ স্বায়ত্তশাসিত দুই প্রতিষ্ঠান। পাটশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং পরিবেশ দূষণ রোধে সরকার ছয়টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেন। সরকারের এই আদেশ অমান্য করে চলেছে খোদ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসি ও কুষ্টিয়া সুগার মিল। পাটজাত মোড়ক ব্যবহারে ছয় পণ্যের মধ্যে অন্যতম চিনি ও সার। স্বায়ত্তশাসিত দুই প্রতিষ্ঠান সরকারি আইন লঙ্ঘন করে চটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় সার ও চিনি বাজারজাত করছে। এমনকি কুষ্টিয়া সুগার মিলে আগে চটের ব্যবহার করলেও বর্তমানে চটের বস্তা ফেলে ব্যবহার করছে প্লাস্টিকের বস্তা। এই দুই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের দাবি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই তারা প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করছেন। তবে পাট অধিদফতরের কর্মকর্তা জানান, বিএডিসি ও সুগার মিলকে পঞ্চাশ শতাংশ প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা এই আইন লঙ্ঘন করে একটি চটের বস্তাও ব্যবহার করছেন না।
পাট অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, পাটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে এবং পাটশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ২০১০ সালে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন’ নামে একটি আইন করে গেজেট প্রকাশ করে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়। কয়েক দফা সময় দিয়ে ২০১৪ সালের ১ জুলাই পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইনটি কার্যকর করেন সরকার। আইনে ছয়টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। সে সময় কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসি ও সুগার মিল কর্তৃপক্ষের দাবির পেক্ষিতে সরকার সার ও চিনির ওপর আইনটি শিথিল করেন। এই দুই পণ্যের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ শতাংশ প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। তবে শিথিল আইনের এক ভাগ মানছেন না বিএডিসি ও সুগার মিল। দুই প্রতিষ্ঠানে একটি চটের বস্তাও ব্যবহার করা হচ্ছে না।
কুষ্টিয়া পাট অধিদফতরের মুখ্য পরিদর্শক সোহরাব উদ্দিন বিশ^াস জানান, বিএডিসি ও সুগার মিলকে পঞ্চাশ শতাংশ প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান দুইটি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে শতভাগ প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যেহেতু বিএডিসি ও সুগার মিল স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান তাই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের বাইরে আমাদের কিছুই করার নেই।
সরেজমিন সুগার মিলে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অবিক্রিত প্রায় এক হাজার ৩৬ মেট্রিক টন চিনি বাজারজাতের জন্য প্লাস্টিকের বস্তায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। চলতি বছরে ১৫৩৭ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়েছে। এসব চিনিও সংরক্ষণ করা হচ্ছে প্লাস্টিকের বস্তায়। প্রতি মৌসুমে কুষ্টিয়া চিনিকলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করা হয় বলে জানা গেছে।
কুষ্টিয়া সুগার মিলে আট বছর আগেও চিনি উৎপাদনের পর তা প্যাকেটজাত করে চটের বস্তায় সংরক্ষণ ও বাজারজাত করা হতো। সেই নিয়ম পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিকের বস্তা। কর্তৃপক্ষের অজুহাত চটের বস্তায় চিনি নষ্ট হয়ে যায়। এদিকে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার নিয়ে চিনিকল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য একেক রকম। সহকারী ব্যবস্থাপক উৎপাদন জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের বস্তায় চিনির গুণগত মান ভালো থাকে। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানালেন ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুষ্টিয়া সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, এ বছর চটের বস্তা ব্যবহারের কোনো নির্দেশনা নেই। লেমিনেটিং বস্তা না পাওয়ায় এ বছর প্লাস্টিকের বস্তায় চিনি বাজারজাত করতে বাধ্য হয়েছি। সদর দফতরে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামীতে চটের বস্তায় চিনি বাজারজাতকরণের সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
তবে কুষ্টিয়া সুগার মিলের ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) আব্দুল হালিম জানান, প্লাস্টিকের বস্তা মানসম্পন্ন। বস্তা ছেঁড়া-ফাটা না থাকলে চিনির ময়েশ্চার ঠিক থাকে এবং চিনি পচে বা গলে যায় না। চটের বস্তায় চিনি সংরক্ষণ করলে যে কোনো সময় চিনি ভিজে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চিনি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চটের বস্তার থেকে প্লাস্টিকের বস্তা অনেক ভালো বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
শুধু সুগার মিলই নয়, সরকারের আরেক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসিও মানছে না সরকারি নিয়ম। সার পরিবহন, সংরক্ষণ ও সরবরাহ করা হচ্ছে প্লাস্টিকের বস্তায়।
কুষ্টিয়া বিএডিসির সার গুদামে গিয়ে দেখা যায়, দুই গুদামে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন নন-ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে। যার সবই প্লাস্টিকের বস্তা। প্রতিদিনই প্লাস্টিকের বস্তায় এসব সার ডিলারদের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা অবশ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে বিএডিসি প্লাস্টিকের বস্তায় সার বাজারজাত করছে বলে জানান।
কুষ্টিয়া বিএডিসির (সার) যুগ্ম পরিচালক কামরুজ্জামান দাবি করেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে বিএডিসি প্লাস্টিকের বস্তায় সার বাজারজাত করছে। বিএডিসিকে পঞ্চাশ শতাংশ প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে পাট অধিদফতরের কর্মকর্তার এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনি হয়তো জানেন না, বিএডিসির শতভাগ প্লাস্টিকের বস্তায় সার বাজারজাত করার অনুমতি রয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক জহির রায়হান জানান, ছয়টি পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। সচেতনতা ও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তরা কাজ করছে। কুষ্টিয়ার প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাটজাত পণ্যের মোড়ক ব্যবহার হচ্ছে। এরপরও যারা নিয়ম মানবে না তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্দেশনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ