পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অন্য চার নির্বাচন কমিশনার হলেন : মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জে. (অব:) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হয়েছেন সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা। অন্য চার কমিশনার হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শাহাদাৎ হোসেন। গত সোমবার রাতে প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ তাদের নিয়োগে অনুমোদন করেছেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রেসিডেন্ট গত ২৫ জানুয়ারি একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি ৩১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও দেশের ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামতের আলোকে কমিটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ৫ জন করে নাম আহ্বান করে। তাদের মধ্য থেকে সর্বশেষ সার্চ কমিটি ১০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকাও তৈরি করে। তালিকায় সিইসি হিসেবে কে এম নুরুল হুদা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের নাম সুপারিশ করা হয়। আর কমিশনার হিসেবে সুপারিশ করা হয় সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জারিনা রহমান খান, সাবেক সচিব মো: রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য মো: আব্দুল মান্নান, ব্রি. জে. (অব:) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী ও ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।
অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থানের পর তারা বঙ্গভবন ছেড়ে যান। বঙ্গভবন থেকে বের হওয়ার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তখনই তিনি বলেন সার্চ কমিটির সদস্যদের নাম আজ রাতেই প্রকাশ করা হবে। সচিব জানান, মহামান্য প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তেই নামগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে।
এর আগে বিকেল ৪টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুসন্ধান কমিটির প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে সর্বশেষ বৈঠক হয়। পৌনে ১ ঘণ্টা বৈঠকের পর কমিটির সদস্যরা প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে যান।
ওই বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রেস ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া নাম থেকেই ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করেছে ইসি গঠনের জন্য গঠিত সার্চ কমিটি। এই তালিকা প্রকাশ করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট। নির্ধারিত সময়ের আগেই সার্চ কমিটি তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তার কাছে সুপারিশ করা ১০ ব্যক্তির নাম এবং ১৬ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময়ের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সার্চ কমিটি।
২৫ জানুয়ারি সার্চ কমিটি গঠনের পর ছয়টি বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে দুই দিন বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। আর রাজনৈতিক দল থেকে নাম পাওয়ার পর সার্চ কমিটি দুটি বৈঠক করে। বিশিষ্ট নাগরিকেরা দলনিরপেক্ষ, সাহসী, দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করার সুপারিশ করেন। তাদের মত হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন হতে হবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে, মেরুদ- হতে হবে সোজা। যাতে চাপ কিংবা হুমকির মুখেও প্রভাবমুক্ত হয়ে তারা কাজ করতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন গঠনে গত ২৫ জানুয়ারি বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন প্রেসিডেন্ট। কমিটিকে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নারীসহ ১০ জনের নামের তালিকা প্রেসিডেন্টের কাছে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সিইসি কাজী রকীবউদ্দিন আহমদ ও অন্য তিন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কমিশনার শাহনেওয়াজের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি।
জানা গেছে, বিসিএস ১৯৭৩ ব্যাচের সরকারি কর্মকর্তা নুরুল হুদার বাড়ি পটুয়াখালীতে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দীর্ঘদিন ওএসডি থাকার পর ২০০৬ সালে সচিব হিসেবে অবসরে যান তিনি।
নতুন কমিশনারদের মধ্যে সেনা কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন ও বিচারক কবিতা খানমের নাম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এসেছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম জানান।
বিএনপির প্রস্তাব করা পাঁচটি নাম থেকে দু’জন মাহবুব তালুকদার ও অধ্যাপক তোফায়েলের নাম সার্চ কমিটির ১০ জনের তালিকায় এসেছিল বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। তার মধ্য থেকে একজন পেয়েছেন প্রেসিডেন্টের মনোনয়ন।
সার্চ কমিটির দিনপঞ্জি
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন ইসি গঠনের জন্য ২৫ জানুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করে দেন প্রেসিডেন্ট। আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এই কমিটির অপর সদস্যরা হলেনÑ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি শিরীন আখতার।
সার্চ কমিটিকে ১০ কার্যদিবস, অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ দিতে বলা হয়। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এবার একজন নারীও নিয়োগ পাবেন জানিয়ে সে অনুযায়ী সুপারিশ করতে বলা হয় কমিটিকে। গত ২৮ জানুয়ারি প্রথম বৈঠকে বসে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম প্রস্তাব চায় সার্চ কমিটি। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যেক দলকে পাঁচটি করে নাম জমা দিতে বলা হয়। ৩০ জানুয়ারি ১২ বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বসে তাদের মতামত শোনেন সার্চ কমিটির সদস্যরা। বিশিষ্টজনরা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দক্ষ, সৎ, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার জন্য সার্চ কমিটিকে পরামর্শ দেন। হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এস এম এ ফায়েজ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আইনজীবী সুলতানা কামাল, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন, এম সাখাওয়াত হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষক তোফায়েল আহমদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নির্বাহী বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠক।
সার্চ কমিটির চিঠি পাওয়ার পর ২৫টি দল ৩১ জানুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামের প্রস্তাব জমা দেয়। সেসব প্রস্তাব নিয়ে বৈঠকে বসে সেদিনই ২০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেন সার্চ কমিটির সদস্যরা। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন আরো চারজন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বসে মতামত নেয় সার্চ কমিটি। যাচাই-বাছাই শেষে এই কমিটি যেসব নাম সুপারিশ করবে, প্রেসিডেন্ট তার বাইরে যাবেন না বলে আশা প্রকাশ করেন বিশিষ্টজনদের একজন। সেদিনের বৈঠকে অংশ নেন সাবেক সিইসি মোহাম্মদ আবু হেনা, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। ২ ফেব্রুয়ারি আবার বৈঠকে বসে সার্চ কমিটির সদস্যরা সংক্ষিপ্ত তালিকায় আসা নামগুলো পর্যালোচনা করেন। সেদিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, তালিকা চূড়ান্ত করতে ৬ ফেব্রুয়ারি আবারও বসবে সার্চ কমিটি। সোমবার বিকালে বসে সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে এবং পরে বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে তাদের সুপারিশ জমা দেয়। রাতেই প্রেসিডেন্ট নতুন ইসি গঠন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।