পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের নারী ও মেয়েদের ধর্ষণ করেছে। তাদের ওপর যৌন সহিংসতাও চালানো হয়েছে। নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আর ধর্মমতের কারণেই পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবেই এই নির্যাতন চালানো হয়েছে। গতকাল (সোমবার) নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। দায়ী সেনা ও পুলিশ কমান্ডার ও সদস্যদের শাস্তির আওতায় আনারও সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরে আরাকান (রাখাইন) রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানকালে এসব ঘটনা ঘটেছে। উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নারী ও তরুণীদের ধর্ষণের ঘটনাসহ পুরো বিষয়টি তদন্তের জন্য মিয়ানমার সরকারের উচিত অতি শিগগিরই একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তের ব্যবস্থা করা।
এইচআরডব্লিউ জানায়, গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশটির মংডু জেলার ৯টি গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশের সদস্যরা আগ্রাসীভাবে দেহতল্লাশি, রোহিঙ্গা নারী ও তরুণীদের ধর্ষণ, গণধর্ষণসহ যৌন হামলায় অংশ নেয়।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালায়। অনেকে বন্দুকের মুখে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করে। নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠনটি জানায়, রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং তাদের নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আর ধর্মমতের কারণে পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবেই এই নির্যাতন চালানো হয়েছে।
নিপীড়নের শিকার নারীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের তথ্য সংগ্রহ করার কথাও জানিয়েছে সংগঠনটি।
এইচআরডব্লিউর গবেষকরা গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৮ জন রোহিঙ্গা নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ১১ জন যৌন হামলার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ১৭ জন নারী-পুরুষের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। যারা রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর হামলার শিকার হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকে নিজের স্ত্রী, বোনকে চোখের সামনে যৌন সহিংসতার শিকার হতে দেখেছে। এইচআরডব্লিউ ২৮টি ধর্ষণ এবং যৌন হামলার ঘটনার তথ্য জানিয়েছে।
সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ গবেষক প্রিয়াঙ্কা মোতাপার্থি বলেন, নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা চালানোর বিষয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দীর্ঘ ও বিকৃত ইতিহাস রয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো লোমহর্ষক হামলা বর্বরতার নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে। এসব অপরাধ করার সময় জড়িতদের থামাতে বা অপরাধের জন্য জড়িতদের শাস্তি দিতে ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার না করে থাকলে সামরিক ও পুলিশ কমান্ডারদের অবশ্যই এসব ঘটনার জন্য ধরা উচিত।
প্রিয়াঙ্কা আরো বলেন, রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধ তদন্তের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের ব্যর্থতা তার বন্ধুপ্রতিম দেশ ও দাতাগোষ্ঠীদের কাছে এটা পরিষ্কার করেছে যে, এ ঘটনার মূলে যাওয়ার জন্য একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত খুবই জরুরি।
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের তথ্য অনুযায়ী সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৬৬ হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৬৯ হাজারে দাঁড়িয়েছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। জাতিসংঘ এরই মধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিযোগ এনেছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মকা-েরও অভিযোগ তোলা হয়। জাতিগত তিক্ততার ফলে ২০১২ সালে আরাকানে ভয়াবহ মুসলিমবিরোধী সহিংসতা সংঘটিত হয়। সে সময় ১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় আরাকান প্রদেশে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের বসবাস। কিন্তু সেখানে তাদের চলাচল এবং চাকরির সুবিধা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব বঞ্চিত। এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি বরং তাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী অপবাদ দিয়ে ‘বাঙ্গালী’ ডাকা হয়ে থাকে। গত ৯ অক্টোবর সীমান্ত রক্ষী পুলিশের ফাঁড়িতে হামলার ঘটনার পর থেকে শুরু হওয়া সেনা অভিযান চলা এলাকায় স্বাধীন সাংবাদিক এবং পর্যবেক্ষকদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।