Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ড্রোন তৈরি ও হামলায় উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিচ্ছে আইএস

| প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সানফ্রান্সিসকো ক্রনিকল : প্রথমে ক্ষুদে ড্রোনগুলো ইরাকি সৈন্যদের পর্যবেক্ষণের জন্য মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায়। তারপর ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উড়–ক্কু যন্ত্রগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে আতঙ্কসৃষ্টির উদ্দেশ্যে একটি ছোট বোমা ফেলার জন্য ফিরে আসে অথবা আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলাকারীকে তার লক্ষ্যে পৌঁছতে নির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করে। এই ড্রোন তৈরিতে আইএস উদ্ভাবনী শক্তি ও হামলার ক্ষেত্রে ধ্বংস ক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে ড্রোন হামলায় ইরাকি সৈন্যদের নিহত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইরাকি সামরিক কর্মকর্তারা জানান, আইএস যোদ্ধারা জোট বাহিনীর প্রবলচাপের সম্মুখীন হলেও গ্রুপটি প্রযুক্তি বিষয়ে হাত খুলে ব্যয় করছে। ফলে তাদের ড্রোন কার্যক্রমের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।
উগ্রপন্থ’ী  গ্রুপটি দোকান থেকে কেনা ড্রোন নিয়ে কঠোর প্রশিক্ষণ রীতি অনুসরণ করছে। তারা আইএসকে নির্মূল করতে ও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা মনুষ্যবিহীন মার্কিন ড্রোনগুলোর নকল করছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সংবাদদাতা এ সপ্তাহে শুরা এলাকায় খুঁজে পাওয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় কারখানাটি পরিদর্শন করে। তিনি মাসে হাজার হাজার ডলারের ড্রোন সরঞ্জাম কেনার রশিদসহ হিসাব সংক্রান্ত কাগজপত্রের একটি বান্ডিল দেখতে পান। একটি রশিদে মসুল অভিযান শুরু কয়েক মাস আগের তারিখ দেখা যায়। এতে ওয়্যার, সিলিকন, ইলেকট্রিক্যাল প্লাগ, কেবল, রোটর ও গো প্রো ক্যামেরা কেনার কথা দেখা যায়। অন্যান্য রশিদে ফ্রায়েড চিকেনসহ খাবার সামগ্রী, ট্যাক্সি ভাড়া ও বাড়ির গরম পানির হিটার মেরামতের ব্যয়ের উল্লেখ আছে।
ছড়িয়ে থাকা কাগজপত্রের স্তূপের মধ্যে ড্রোনে ক্ষুদ্র ও টুকরো অংশও রয়েছে। আইএস পালানোর সময় সে সবের অধিকাংশই ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। কারখানার বিভিন্ন স্থানে স্টাইরোফোম উইং, ফিন ও রেডিও ট্রান্সমিটারের টুকরো ছড়িয়ে ছিল।
সকল হিসাব বিবরণীর শিরোনামে লেখা বোর্ড অব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মিলিটারি ম্যানুফ্যাকচারিং, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপ শিরোনাম হচ্ছে এয়ার অবজারভেশন ডিভিশন। হাতে লেখা নোটে দেখা যায়, আই এস ড্রোন অপারেটরদের প্রতিদিনের মিশন রিপোর্ট এবং তারা যে সব চ্যালেঞ্জ ও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তার মাসিক রিপোর্ট লেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সম্প্রতি মসুলে ড্রোন তৈরি ও আধুনিকায়নের আধা ডজন স্টোরহাউজ পাওয়া গেছে।
গত মাসে এক গবেষক মসুলে একটি ক্ষুদ্র অস্থায়ী কারখানায় এক গাদা কাগজপত্র পেয়েছেন যাতে আভাস পাওয়া যায় যে গ্রুপটি ছোট ড্রোনের পরীক্ষা চালাচ্ছে যা খেলনা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও ধ্বংস ক্ষমতা রয়েছে।  
উক্ত গবেষক হচ্ছেন ভেরা মিরোনোভা। তিনি শ্রম অর্থনীতিতে প্রশিক্ষিত। তিনি বলেন, এ সব কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে আরবি ও ইংরেজিতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের নাম, একটি ফাইলে লেখা টুল কিট যা  হচ্ছে কয়েক ডজন জরুরি জিনিসপত্রের চেকলিস্ট। তিনি বলেন, এ সব থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে যোদ্ধা ঘাটতির কারণে তারা এখন ড্রোন তৈরির কর্মসূচি নিয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে গো প্রো এবং চার্জার, ব্যাটারি কেবল, ল্যাপটপ, বিস্ফোরক ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।
হার্ভার্ড বিশ^বিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট-এর ফেলো মিরোনোভা বলেন, বিস্ফোরক নিক্ষেপ ও ধ্বংসকর কাজে ড্রোন ব্যবহারের কারণ হামলাকারী যোদ্ধাদের অভাব। তিনি বলেন, মসুলে ইরাকি সৈন্যদের হামলার গোড়ার দিকে হত্যার চেয়ে ভীতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এলোমেলো ভাবে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের মোতায়েন করতে চেয়েছিল।
ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৫ সালে রামাদি যুদ্ধে তারা নজরদারি কাজে আইএসকে ড্রোন ব্যবহার করতে দেখে।  
সেন্টার ফর ন্যাভাল এনালিসিসে সেন্টার ফর স্ট্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর পরিচালক জোনাথান শ্রোডেন বলেন, নতুন পন্থা ব্যবহারের প্রথম আভাস পাওয়া যায় ২০১৬ সালে যখন উত্তর ইরাকে তুর্কি সৈন্যরা তাদের মাথার উপরে খেলনার মত ড্রোন দেখতে পায় এবং পনেরো মিনিটের মধ্যে সঠিক লক্ষ্যে গুলিবর্ষণের করে। তিনি বলেন, তখন থেকেই বোঝা যায় যে আইএস কি করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা ড্রোন দিয়ে যা করছে তারাও তাই করতে চায়। তারা হত্যার দিকেই মনোযোগ দেবে।
ড্রোনগুলো বিস্ফোরক বোঝাই থাকে, তবে তা বেশি ক্ষতি করতে পারে না, তবে আইএসের বিরদ্ধে লড়াইরত সৈন্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে।
ডিসেম্বরে এক সামরিক দায়িত্বে গোপন অবস্থানে থাকা বিশেষ বাহিনীর কমান্ডার মেজর ফিরাস মেহেদী এ পি সাংবাদিককে বলেন, প্রথমে ড্রোনগুলো আসে পর্যবেক্ষণ করতে এবং তারপর তারা ফিেের আসে বোমা নিয়ে।
আইএসের এলাকা থেকে পাঠানো একটি ছোট কালো তাদের অবস্থানের মাত্র কয়েক শ’ মিটার দূর দিয়ে উড়ে যায়। দু’জন সৈন্য নিরাপদ অবস্থান নেয়ার জন্য দৌড়ে মেহেদীর কংক্রিট বাড়িতে প্রবেশ করে, অন্যদিকে আধা ডজন সৈন্য রাস্তায় বেরিয়ে যায় ও আকাশে নির্বিচারে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। একজন অফিসার জানান, ড্রোন হামলায় ৩ ইরাকি সৈন্য নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হায়দার ফাযিল বলেন, নজরদারি ও বোমা ফেলা ছাড়াও আসল সময় গাড়ি বোমা হামলার নির্দেশনায় ড্রোন ব্যবহার করা হয়। তবে আমাদের সৈন্যরা এ সব বিমানের অনেকগুলোই ধ্বংস করেছে। তাছাড়া আমরা তাদের কন্ট্রোল ফ্রিকোয়েন্সি জ্যাম করে দেয়ায় কিছু ড্রোন বিধ্বস্ত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইরাকি গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ডোন যন্ত্রাংশের অধিকাংশই তুরস্কে কেনা হয় ও সিরিয়ার মধ্য দিয়ে ইরাকে পাঠানো হয়। কিছু নকশা এত সহজ যে কারিগরি জটিলতা খুব কম।
আইএসের আনলাইন ভিডিওতে ছোট ফিক্সড উইং বিমান ও হেলিকপ্টার দেখা গেছে। ভিডিওতে ড্রোনগুলোকে ইরাকি সৈন্যদের গতিবিধি লক্ষ্য করতে এবং গাড়ি বোমাগুলোকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে দেখা যায়।  
শ্রোডেন বলেন, অবাক করা বিষয় যে তারা পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর নকল করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ