পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে তিনদিনের জন্য ঢাকায় পৌঁছেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। গতকাল বুধবার বিকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে মাহমুদ আব্বাসকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। বিমান থেকে নামার পর দুই শিশু ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান।
বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয় এবং তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল দেয় গার্ড অব অনার। গার্ড পরিদর্শন শেষে ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টকে লাইন অব প্রেজেন্টেশনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। মাহমুদ আব্বাসের সফর উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি বিমানবন্দর এলাকাও বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। টার্মিনালের উপরে এবং সামনে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের বিপুলসংখ্যক পতাকা লাগানো হয়েছে। ভিভিআইপি টার্মিনালের দু’পাশে দুই রাষ্ট্র প্রধানের দুটি বড় ছবি স্থাপন করা হয়েছে এবং টার্মিনালের উপরে বড় করে লেখা ‘স্বাগতম হে মহামান্য অতিথি’। এর সঙ্গে স্বাগত বক্তব্যের ইংরেজি অনুবাদও রয়েছে।
এয়ারপোর্ট থেকে মোটর শোভাযাত্রা করে লা মেরিডিয়ান হোটেলে নেয়া হয় ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টকে। সফরকালে এখানেই থাকবেন তিনি। ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে গতকাল বিকেলে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, আইজিপি একেএম শহীদুল হক, প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া এবং তিন বাহিনীর প্রধান।
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে বাংলাদেশ সফরে এলেন মাহমুদ আব্বাস। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটা প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর হলেও গত বছর ফেব্রুয়ারিতে জর্ডান থেকে জাপান যাওয়ার পথে ঢাকায় কয়েক ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করেছিলেন তিনি।
ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতও এর আগে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। তিনি সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সফর করেন। সেই ধারাবাহিকতায় মাহমুদ আব্বাসের এ সফরকে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করছেন ঢাকায় ফিলিস্তিনের মিশন প্রধান ইউসুফ এসওয়াই রামাদান।
তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে সরাসরি বাংলাদেশে আসছেন মাহমুদ আব্বাস। প্যারিস যাওয়ার পথে এরপর এখান থেকে শুক্রবার জর্ডান যাবেন। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি, প্রধান বিচারপতি মাহমুদ আল-হাব্বাস, প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদিনেহ, কূটনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাজিদ আল খালিদিসহ সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা এই সফরে মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে রয়েছেন।
চলতি সফরে মাহমুদ আব্বাস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে দুই দেশ দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী আগেই জানিয়েছেন। দুই নেতার আলোচনায় কৃষি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ তথ্য সহযোগিতার বিষয় থাকবে বলেও আভাস দিয়ে রেখেছেন মাহমুদ আলী।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর দুই দেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে একটি সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনী কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন মাহমুদ আব্বাস। পরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরও ঘুরে দেখবেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তার সঙ্গে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। পরে মাহমুদ আব্বাস ফিরবেন হোটেলে। সেখানে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের বৈঠক হবে। ফিলিস্তিনী নেতা তার সম্মানে বঙ্গভবনের নৈশভোজেও অংশ নেবেন।
ঢাকায় ফিলিস্তিনের মিশন প্রধান ইউসুফ রামদান জানান, মাহমুদ আব্বাসের এই সফরে দ্বিপাক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে দুই দেশের সরকারের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই স্মারকে সই করবেন। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনী কূটনীতিকদের জন্য ভিসামুক্ত যাতায়াতের সুযোগ দেয়ার ঘোষণা আসতে পারে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো জানান, দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের স্মারক হিসেবে অন্তত ১০০ সামরিক ও বেসামরিক শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মেয়াদের বৃত্তি নিয়ে পড়ালেখা করছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সবসময়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে এবং ১৯৬৭ সালের মানচিত্র অনুযায়ী এর রাজধানী জেরুজালেম হবে বলে সমর্থন করে। ঢাকা বরাবরই বলে আসছে, কোনো স্বার্থের ভিত্তিতে নয়, সংবিধানে বলা আদর্শের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনী মুক্তি সংগ্রামে বাংলাদেশের এই সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে আজ শ্রদ্ধা জানাবেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে : ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
সাভার গণর্পূত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ঢাকা থেকে সড়ক পথে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে পৌঁছবেন। তার আগমন উপলক্ষে স্মৃতিসৌধে ধোয়া-মোছা ও রঙ তুলির কাজ শেষ হয়েছে। তাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত স্মৃতিসৌধ।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের আগমন উপলক্ষে ২৮ জানুয়ারি থেকে স্মৃতিসৌধে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্মৃতিসৌধে পৌঁছে মাহমুদ আব্বাস মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তখন তিন বাহিনীর একটি চৌকশ দল তাকে গার্ড অব অনার দিবেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করবেন। পরে স্মৃতিসৌধে একটি বকুল ফুলের গাছের চারা রোপণ করবেন।
ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়েছেন খালেদা জিয়া
স্টফ রিপোর্টার
ঢাকায় সফররত ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে স্বাগত জানিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দলের বিশেষ সম্পাদক ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ তথ্য জানান।
তিনি ইনকিলাবকে বলেছেন, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তার এই সফর ও ফলপ্রসূ হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র হিসেবে অচিরেই সার্বজনীন স্বীকৃতি লাভ করবে এবং ফিলিস্তিনী ভূ-খ- থেকে ইসরাইলী আগ্রাসন এবং দখলদারিত্বের অবসান হবে।
ঢাকায় মাহমুদ আব্বাসের ঢাকা অবস্থান সফল ও তার সুস্বাস্থ্য কামনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। জানান ড. রিপন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।