Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বসবাসের অযোগ্য খুলনার লোহাপট্টি

| প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : লোহা-লক্কড় ওঠানামা ও পেটানোর কান ফাটানো শব্দ, ক্রেতা-বিক্রেতার দর কষাকষি আর শ্রমিকের কর্মব্যস্ততায় দীর্ঘদিন ঘুম নষ্ট নগরীর শেখপাড়াবাসীর। অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র লোহা রাখায় নষ্ট হচ্ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা; ফলে শীতের শুষ্ক মৌসুমেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে শেখপাড়ায়। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠা লোহার মার্কেটের ছোট সড়কের দু’পাশে দোকান থাকায় ফুটপাতগুলো ব্যবসায়ীদের দখলে। সড়কের মাঝে ট্রাক লোড-আনলোড করায় বেশিরভাগ সময় যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের ওপর সম্পূর্ণ খোলা পরিবেশে গ্যাস দিয়ে বড় বড় লোহার প্লেট কাটায় সৃষ্টি হয় বায়ু দূষণ। আবাসিকে গড়ে উঠা লৌহ সামগ্রীর এই প্রাচীন মার্কেটটির কারণে বসবাসের অযোগ্য হচ্ছে এলাকাটি।
ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৬০ সাল থেকে শেখপাড়ায় লোহার ব্যবসা শুরু। তখন শেখপাড়া মেইন রোডে মাত্র ১২-১৫টি দোকানে লোহার সামগ্রী বেচাকেনা হতো। ২০০০ সালের পর থেকে লৌহ ব্যবসার প্রসার বাড়তে থাকে। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন সড়কে ছড়িয়ে পড়ে লোহার দোকান। বর্তমানে ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে শেখপাড়ার বাজার রোড, চামড়া পট্টি, শেখপাড়া মেইন রোড, সঙ্গীতা হলের মোড় ও তেঁতুলতলা সড়কে। লোহার চাহিদা বাড়তে থাকায় বাজার পার্শ্ববর্তী গোবরচাকা, শেখপাড়া বাজার, শিরিষ নগর, শের-এ বাংলা রোডেও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন অর্ধ শতাধিক কোটি টাকার লেনদেন হয় মার্কেটটিতে। আর লৌহ শিল্পকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় পাঁচ শতাধিক দোকান। দূর-দূরান্ত থেকে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ বাজার থেকে তাদের চাহিদামতো লৌহজাত দ্রব্য কিনে নিয়ে যান। পাশাপাশি এখান থেকে বৃহত্তর খুলনা বিভাগসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গে লৌহজাত মালপত্র সরবরাহ করা হয়।
এ মার্কেটের ওপর ভিত্তি করে এখানে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ইয়াসিন আরাফাত ও আমির হোসেন মিঠু জানান, অপরিকল্পিতভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ওঠায় নানাধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। রাস্তা বন্ধ করে পণ্য লোড-আনলোড করতে গেলে মানুষের গালাগাল শুনতে হয়। এছাড়া কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লোহাপট্টিতে চোরাই সাইকেল, রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক বিক্রি করে। প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবসায়িক গুরুত্ব বিবেচনা করে নগরীতে পরিকল্পিতভাবে লোহা পট্টি গড়ে তোলার দাবি ব্যবসায়ীদের।
দেখা গেছে, নগরীর শেখপাড়া মেইন রোডটি দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ। সড়কের দু’পাশে ভারী ভারী লোহার দোকান। এই সব দোকানের লোহার প্লেট রাখা হয়েছে রাস্তার ওপর। প্লেটের নিচে ঢাকা পড়ছে ড্রেন। লোহার চাপে ড্রেনের সাইড ওয়াল ভেঙে ড্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই অল্প বৃষ্টিতেই ওই সড়কটিতে সৃষ্টি হয় পানিবন্ধতা। শীতের শুষ্ক মৌসুমেই এবার সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। লোহার প্লেøটে ড্রেন ঢাকা থাকায় পরিছন্ন কর্মীরা ড্রেন পরিষ্কার করতে পারছে না। ফলে পানি উপচে পড়ছে সড়ক ও বাসাবাড়িতে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, লোহা ব্যবসার কারণে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হলেও পরিবেশ ও শব্দ দূষণে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। শ্রমিকদের লোহা কাটা ও হাতুড়ি পেটা, লোহা-লক্কড়ের কান ফাটানো শব্দ এবং ক্রেতা-বিক্রেতা আর শ্রমিকদের চেঁচামেচির কারণে শব্দ দূষণ চরমে উঠেছে। লোহার ঝন ঝন শব্দে মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। উচ্চ শব্দের কারণে সন্ধ্যার পরও শিক্ষার্থী ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারে না। রাতে মানুষ ঠিকমতো ঘুমাতেও পারে না।
কেসিসি’র ২০নং ওয়ার্ডের (স্থানীয়) কাউন্সিলর শেখ মোঃ গাউসুল আযম বলেন, লোহাপট্টির কারণে শেখপাড়া এলাকা মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ট্রাক রাখার কারণে সড়কগুলোতে দিনের বেলা চলাচল করা যায় না। সড়কের দু’পাশে অর্ধ-সহস্রাধিক দোকান থাকায় সারাদিন সড়কগুলোয় পণ্য বোঝাই ভারী ট্রাক-পিকআপ দাঁড়িয়ে থাকে। ভাঙারি ব্যবসায়ীরা সড়কের মাঝখানেই পণ্য নামিয়ে সেগুলো বাছাই করে।
শেখপাড়া মেইন রোড এলাকার লৌহ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি কাজী বাদশা মিয়া বলেন, পরিকল্পিতভাবে লোহা মার্কেটটি শহরের অন্য কোন স্থানে সরিয়ে নেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবসায়িক গুরুত্ব বিবেচনা করে নগরীতে পরিকল্পিতভাবে লোহাপট্টি গড়ে তোলার দাবি দীর্ঘদিনের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বসবাস

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২৩ এপ্রিল, ২০২২
২৪ জানুয়ারি, ২০২১
৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ