পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রয়োজনে গণশুনানি ও আইন প্রণয়ন
মালেক মল্লিক : সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে সার্চ কমিটিকে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা পরামর্শ দিয়েছেন। স্থায়ী ভিত্তির ওপর কমিশনকে দাঁড় করাতে আইন প্রণয়নের কথাও বলেছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করা যেতে পারে বলে মনে করেন তারা। বাস্তবতার আলোকে প্রয়োজনে দুই মাস সময় নিয়ে হলেও ৪৫ বছরের কাক্সিক্ষত কমিশন গঠনের পরামর্শ এসেছে বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে। গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির সঙ্গে বিশিষ্ট নাগরিকদের মতবিনিময় সভায় এসব পরামর্শ দেন দেশের ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। একই বিষয়ে মতামত নিতে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি আরো ৫ বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করবে সার্চ কমিটি। এদিকে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের একজন আইনজীবীর করা রিটের ভিত্তিতে রুলও জারি করেছে উচ্চ আদালত। আগামী চার সপ্তাহের ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
গতকাল বিকাল ৪টার পর সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির সঙ্গে বিশিষ্ট নাগরিকদের মতবিনিময় শুরু হয়। আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সার্চ কমিটির সদস্যরা ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে তাদের মতামত ও পরামর্শ শোনেন। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দেয়া পরামর্শগুলো রেকর্ড করা হয়। ৪টা থেকে দুই ঘণ্টা এই বৈঠক চলে। আগে থেকেই গণমাধ্যমের কর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ করতে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ভিড় করতে থাকে।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, উনারা আজ গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলোর রেকর্ড নিয়েছি। তারা প্রত্যেকেই সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হিসাবে সৎ, দক্ষ, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় ব্যক্তিদের বাছাই করার পরামর্শ দিয়েছেন। সার্চ কমিটির কার্যক্রমে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেই সূত্রে এ বিভাগের সচিব নিজেও সার্চ কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-ভিসি শিরীণ আখতার।
সার্চ কমিটির আমন্ত্রণে হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এসএমএ ফায়েজ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন, এম সাখাওয়াত হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষক তোফায়েল আহমদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নির্বাহী বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা অংশ নেন এই আলোচনায়।
বৈঠক শেষে ড. এটিএম শামসুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, শুরুতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এমন ইসি গঠনের পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়া এমন লোকের নাম প্রস্তাব করতে পরামর্শ দিয়েছি যারা নির্বাচন কমিশনে কাজ করার যোগ্য।
একে আজাদ চৌধুরী বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, দেশপ্রেম আছে, ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত এমন ব্যক্তিদের তালিকা দিতে সার্চ কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছি।
এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তারা কোনো নাম প্রস্তাব করেননি। আমরা বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। আশা করি, সার্চ কমিটি নতুন ইসি গঠনে নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবে।
তিনি বলেন, ইসি গঠনের কিছু মানদ- তারা সার্চ কমিটির সামনে তুলে ধরেছেন। এমন লোকটিকে নির্বাচন করতে হবে, যাকে দেখে মানুষ প্রথমেই বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে। পাশাপাশি প্রশাসনিক দক্ষতাসম্পন্ন, নিরপেক্ষ বিবেচিত ব্যক্তিদের বাছাই করতে হবে।
সুলতানা কামাল বলেন, একটা কথা আপনাদের মনে রাখতে হবে, আমরা এখানে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছি। সার্চ কমিটির নিজস্ব একটা কর্মপদ্ধতি আছে। কারা কমিশনে যাবে বা না যাবেÑ সেই নাম প্রস্তাব করার দায়িত্ব সার্চ কমিটির। আমাদের সাথে তাদের মতবিনিময় ছিল মানুষ কোন ধরনের ব্যক্তিদের কমিশনে দেখতে চায় সে বিষয়ে।
সার্চ কমিটি নিয়ে একটি দলের আস্থার সঙ্কটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, কিছু মানুষের আস্থার সঙ্কট আছে, কিছু মানুষের নেই। শুধু আস্থার সঙ্কটের ওপর দাঁড়িয়ে থেকে সামনে এগোনো যাবে না। আমি মনে করি, তারা অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। দীর্ঘদিন ধরে তারা যোগ্যতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আস্থা আনাটা জনগণেরও নৈতিক দায়িত্ব। সার্চ কমিটি কিন্তু নির্বাচন ভ-ুল করে না; নির্বাচন যদি অস্বচ্ছ হয় তার জন্য দায়ী থাকে রাজনৈতিক দলগুলো।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, সার্চ কমিটি প্রথমবারের মত কিছু নাগরিকের সঙ্গে বসেছে, সেখনে প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতামত তুলে ধরেছে। আমরা কিন্তু আগে আলোচনা করে একমত হইনি। কেউ কেউ লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, সার্চ কমিটিকে যেটা সুপারিশ করেছে সেটা হচ্ছে একটা ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে উনারা সিলেকশন করবেন, আরেকটা হচ্ছে সিলেকশন যেটা করছেন তার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখুন, তাতে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়বে।
সিলেকশনের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মাপকাঠিগুলো তারা বসে চিন্তা করবেন, আমরা কিছু চিন্তার খোরাক দিয়েছি। আজ যে জিনিসগুলো দেয়া হয়েছে, তারা অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। তারা নিজেরা বসে এগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করে কিছু একটা দাঁড় করাবেন।
এ নিয়ে গণশুনানির পরামর্শ দিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ইসি গঠনে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা উচিত। সময় লাগলেও আইন করে নতুন ইসি নিয়োগ দেয়া উচিত হবে।
অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকও একই ধরনের সুপারিশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও এসএমএ ফায়েজ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি।
নতুন কমিশন গঠনের জন্য প্রেসিডেন্ট সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঁচটি করে নাম চেয়েছে সার্চ কমিটি। আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এই তালিকা দিতে হবে। দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া নাম যাচাই-বাছাই করে সার্চ কমিটি ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দেবে। তাদের সুপারিশ থেকেই অনধিক পাঁচ সদস্যের ইসি নিয়োগ দেবেন প্রেসিডেন্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।