Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নাগরিকত্ব পেলে তারা দ্রুত মিয়ানমারে ফিরতে রাজি

| প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শমসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : জীবনের নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব পেলে দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে  যেতে চান মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলমানরা। গতকাল কফি আনান কমিশনকে এমনই জানিয়েছেন কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গারা।
সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো ক্যাম্প পরিদর্শনে এলে কফি আনান কমিশনকে এসব কথা জানান আরাকান রাজ্যের (রাখাইন  স্টেটের) নিপীড়িত রোহিঙ্গা মুসলমান নারী-পুরুষরা। এ সময় তাদের ভবিষ্যৎ চাওয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে  রোহিঙ্গারা বলেন, মিয়ানমার তাদের নিজের দেশ। কিন্তু সেখান থেকে তাদের বিতাড়ন করা হয়েছে। তারা দেশে ফিরতে চায়। তবে, নাগরিকত্ব নিয়ে স্বাধীনভাবে দেশে ফিরতে চায় তারা। কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নোমান কর্তৃক এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি গঠিত রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশনের সদস্যরা দ্বিতীয় দিনের মতো সোমবার বেলা ১০টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন।
আরাকান রাজ্যে (রাখাইন স্টেটে) মিয়ানমার সেনা-পুলিশের নিপীড়নের শিকার গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত জামবুনিয়ার আমির  হোসেন দুই ছেলে ও মেয়েকে হারিয়ে এখানে আসা মুহাম্মদ জহুর, স্ত্রী ও মেয়ের নির্মম হত্যার দৃশ্য দেখে আসা প্রত্যক্ষদর্শী হোসেন আহমদসহ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৪০ নারী, ১৮ শিশু ও ১২ জন পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন কমিশন সদস্যরা। তাদের কাছ থেকে নিজ দেশে নির্যাতনের বর্ণনা মনোযোগ দিয়ে শোনেন তারা।
ক্যাম্প সূত্রে জানা যায়, রেজিস্ট্রার ক্যাম্প থেকে কমিশন সদস্যরা অনিবন্ধিত বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় তাদের ভবিষ্যৎ চাওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে রোহিঙ্গারা বলেন, আমরা দেশে ফিরতে চাই। তবে নাগরিকত্ব নিয়ে স্বাধীনভাবে দেশে ফিরব।
তাদের দাবি, মিয়ানমারে ১৪৭ জাতের মধ্যে রোহিঙ্গা ছাড়া বাকি সবার নাগরিকত্ব রয়েছে। তাই নিজ জন্মভূমি হলেও পরবাসীর মতোই জীবন কাটাতে হয় রোহিঙ্গা মুসলিমদের। পরিবারের পুরুষ সদস্যদের কাজে লাগিয়ে পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। তাদের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে গেলে নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ ক্যাম্পে দুর্বৃত্ত হামলার সূত্র ধরে  রোহিঙ্গাদের জমি দখল, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, হত্যা-গুম ও নারীদের গণধর্ষণ ও নির্যাতন করা হচ্ছে। তাই জীবন বাঁচাতে তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। আশ্রয়  পেলেও তারা বাংলাদেশে থাকতে চান না। নাগরিক মর্যাদা পেলে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিয়ানমার ফিরে যেতে চান। এটি নিশ্চিত করতে কমিশন সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন রোহিঙ্গারা।
এ সময় ক্যাম্প এলাকায় নানা ফেস্টুনসহ লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন নির্যাতিত রোহিঙ্গারা।      
শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বেলা ২টার দিকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন রাখাইন কমিশনের সদস্যরা। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন তারা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন বলেন, রাখাইন কমিশনের সদস্য মিয়ানমারের নাগরিক উইন ম্রা, আই লুইন এবং  লেবাননের নাগরিক ঘাসান সালামেসহ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন (ইউএনএইচসিআর) ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা  সোমবার সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে ফিরে জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষে বিশেষ সভায় মিলিত হন তারা।
তিনি আরো বলেন, বৈঠকে রাখাইন কমিশন সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন অভিযোগ ও দাবি সম্পর্কে জানতে চান। যুক্তিতে মিয়ানমারের অভিযোগ ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি রাখাইন স্টেটে সংগঠিত ঘটনায় বাংলাদেশী জড়িত বলে মিয়ানমারের দাবিকে কল্পকাহিনী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষরা যারপরনাই কষ্টে দিনাতিপাত করছে। তাদের সাময়িকভাবে খাদ্য, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। তারপরও মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষরা সেই মৌলিক অধিকার থেকে চরমভাবে বঞ্চিত।
রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের নিজস্ব সমস্যা হলেও বারবার তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে আমাদের ওপর বোঝা চাপানো হচ্ছে। তাই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিয়ে সেখানে পুনর্বাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে জোরদার কূটনেতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ