Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

জঙ্গি দমনে শক্তিশালী করা হচ্ছে সিটিটিসিকে

| প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সারা দেশে নতুন ইউনিট গড়ার সিদ্ধান্ত আসছে
উমর ফারুক আলহাদী : দেশে জঙ্গি নির্মূলে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স-ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে  (সিটিটিসি) আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে। সারা দেশে নতুন ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত আসছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ইউনিট জঙ্গি দমনে সফলতা অর্জন করেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করছেন। তাঁরা বলছেন, এত কম সময়ে জঙ্গি দমনে ব্যাপক আশার আরো ছড়াতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি। সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে উত্থানের শুরুতেই নতুন জেএমবির নেটওয়ার্ক ভেঙে দিয়েছে সিটিসি। এ ধারা অব্যাহত রাখতে সংস্থাটির পরিধি আরো বাড়ানো এখন সময়ের দাবি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বেড়ে যাওয়ায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। একজন অতিরিক্ত আইজিপির নেতৃত্বে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কার্যক্রম সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার কার্যক্রম চলছে। শিগগির পুলিশের বিশেষ এ সংস্থাটির পরিধি বাড়বে বলে জানান একজন কর্মকর্তা।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, জঙ্গি নির্মূলের লক্ষ্যেই এ ইউনিটকে আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে। এ নিয়ে বেশ আগে থেকে কাজ চলছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজও চলছে। তবে অন্য বাহিনী থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বৈশিষ্ট্য কী হবে তা নিয়ে এখন আলোচনা পর্যালোচনা চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্তকর্তা বলেন, দেশজুড়ে জঙ্গি দমনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সম্প্রসারণ চায় পুলিশ। সিটিটিসি গত বছরের শুরুতে রাজধানীসহ বেশকিছু অঞ্চলে জঙ্গি দমনে একাধিক সফল অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে পুলিশ সদস্যরা প্রশংসিত হয়েছিল। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সিটিটিসি এবার আইনি কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে একক ইউনিট হিসেবে সারা দেশে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। জেলা পর্যায়ে সিটিটিসি ইউনিট চালু করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ওই কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলে সারা দেশে কাউন্টার টেরোরিজম ক্রাইম ইউনিট গড়ার প্রয়োজন। একটি-দুটি জঙ্গি মেরে জঙ্গিবাদের মতো বৈশ্বিক সমস্যা সমাধান করা যাবে না।
তিনি বলেন, ডিএমপির বিশেষ শাখা হিসেবে বর্তমানে ‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স-ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট’ কাজ করছে। এরই বর্ধিত রূপ দেয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ডিএমপির একটি ইউনিট হয়েছে ছোট্ট আকারে। কিন্তু আজকে যে বৈশ্বিক সমস্যা জঙ্গিবাদ, এটাকে সমাধান করতে গেলে আমাদের একটি ন্যাশনাল কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অবশ্যই করতে হবে। ছোট ইউনিট দিয়ে দেশজুড়ে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয় জানিয়ে এর পরিধি ও কর্মক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন কমিশনার আছাদুজ্জামান। তিনি অতিথিদের উদ্দেশে বলেন, তা যদি না করি স্যার, তাহলে দুই-একটি জঙ্গি মেরে, দুটি অভিযান চালিয়ে এই জঙ্গিবাদকে দমন করতে পারব না।  তিনি বলেন, আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবেÑ আমরা কীভাবে জনগণের জীবন রক্ষা করব, কীভাবে বিশ্বকে শান্তিপূর্ণ রাখব।
২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষ শাখা হিসেবে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স-ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট গঠিত হয়। এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। নতুন এ সংস্থাটি কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ, সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ, ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগেÑ এই চার ভাগে  কাজ করছে।
১০০ সদস্যের এই ইউনিটে একজন ডিআইজি, একজন অতিরিক্ত ডিআইজি,  চারজন উপ-কমিশনার (ডিসি), ১০ জন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি), ২০ জন সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এবং ৪০ জন ইন্সপেক্টর নিয়ে যাত্রা হয়।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স-ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের মূল কাজ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির একজন কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন, সন্ত্রাসবাদে সহায়ক অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা এ ইউনিটের মূল উদ্দেশ্য। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, অভিযান পরিচালনা, মামলা রুজু, মামলা তদন্ত এবং তদন্ত-উত্তর সন্ত্রাসীদের পর্যবেক্ষণে রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এ ইউনিটের কার্যক্রমে।
গত বছরের ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন ৫ নম্বর সড়কের জাহাজ বিল্ডিং নামের একটি বাসায় ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে নয়জন ‘জঙ্গি’ নিহত হয়।
২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া বড় কবরস্থানের একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। এসময় গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরীসহ তিনজন নিহত হয়। তামিম চৌধুরীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য এর আগে পুলিশ ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
১০ সেপ্টেম্বর জঙ্গি আস্তানায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে তানভীর কাদেরি ওরফে শমসেদ ওরফে আবদুল করিম নিহত হয়। তার স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা, তাদের ছেলে তাহরীন কাদির রাসেল, আফরিন ওরফে প্রিয়তী ও শায়লা আফরিন আহত হয়। তবে তানভীর অভিযানের সময় নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে জানিয়েছিলেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক।
৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার একটি জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ নিহত হয়। সে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলাকারীদের প্রশিক্ষক এবং নিহত জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরীর সেকেন্ড ইন কমান্ড (ডান হাত) ছিল।
৮ অক্টোবর গাজীপুরের নোয়াগাঁও পাতারটেক এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নব্য জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার জঙ্গি ফরিদুল ইসলাম আকাশসহ সাত জঙ্গি নিহত হয়।
গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযান দুইজন নিহত, একজন আহত ও চারজন আত্মসমর্পণ করেন।
২০১১ সালের এপ্রিলে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক সেমিনারে তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) ও বর্তমান আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক জঙ্গি ও চরমপন্থী দমনে ন্যাশনাল পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট নামে একটি ইউনিট চালু করার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব করেছিলেন। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত বছরের  ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অধীনে ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রা শুরু করে বিশেষায়িত এ ইউনিট।
ইউনিট প্রধান  যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রয়োজনেই এ ইউনিটকে আরো শক্তিশালী করার প্রয়োজন। দক্ষ জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব ধরনের সুবিধা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমরা গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযান পরিচালনা করি। জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক এখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে বলেও তিনি দাবি করেন। সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, জঙ্গি দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। এই নীতি বাস্তবায়নে নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন সাহসী পুলিশ সদস্যরা। তাই নবগঠিত ইউনিট হিসেবে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও সিটিটিসি সফলতার সঙ্গে তা অতিক্রম করে চলেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ