মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে এক কাতারে ফেলতে চাইবেন না অনেকেই। কিন্তু রোহিঙ্গা নির্যাতনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বিবিসির সংবাদদাতা জনাথন ফিশার যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন তাতে তার মনে হয়েছে, দুই জনের মধ্যে আসলে অনেক মিল আছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ হয়েছে এবং চলছে, সে ব্যাপারে সু চি শুরু থেকেই ছিলেন নিশ্চুপ। তার এই নীরবতা সারা বিশ^কে ভাবিয়ে তুলেছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তাকে নোবেল পুরস্কারও ফিরিয়ে দিতে বলেছিলেন। কিন্তু সু চি তার পরও বলেছেন, এটি তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। অনেকে দাবি করছেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেখানে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে। কারও দাবি সেখানে গণহত্যা চলছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং অং সান সুচি অবশ্য এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করছেন। তারা বলছেন, সেখানে পুলিশের ওপর রোহিঙ্গা জঙ্গীরা যে হামলা চালিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চলছে।
বিবিসি সংবাদদাতা ফিশার বলেছেন, আপনি যা ভাবছেন, তার চেয়েও আসলে অনেক বেশি মিল ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আং সান সুচির মধ্যে। দু’জনেরই বয়স ৭০-এর বেশি। দু’জনের মাথার চুল নিয়েই বেশ আলোচনা হয় এবং দু’জনেই সাংবাদিকদের প্রচ- অপছন্দ করেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অশান্ত সম্পর্ক খুবই আলোচিত। কিন্তু অং সান সুচির সঙ্গে গণমাধ্যমের সম্পর্ক যে অনেকটা একই রকম সেটা জানলে অবাক হবেন অনেকে। অং সান সুচি অনেকের কাছেই পরিচিত ‘দ্য লেডি’ নামে। ১৯৯০-এর দশকে তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে। অথচ রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের ব্যাপারে তিনি বরাবরই নীরব রইলেন।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় দশ লাখ। দশকের পর দশক ধরে তারা মিয়ানমারে বৈষম্যের শিকার। গত সাড়ে তিন মাস ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলছে সামরিক বাহিনীর নির্মম অভিযান। সেখানে কী ঘটছে তার উত্তর নির্ভর করছে আপনি কাকে বিশ্বাস করবেন তার ওপর। কারণ কেউ যে স্বাধীনভাবে সেখানে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানবেন, তার সব পথ বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার। এমনকি রাখাইন রাজ্যে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছে মিয়ানমার সরকার।
প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করা কঠিন। কারণ লোকজন সেখান থেকে পালাচ্ছে এবং পুরো এলাকার একটা সার্বিক চিত্র তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে না। কিন্তু যেসব ভিডিও বিবিসি’র কাছে এসেছে সেগুলোকে সেখানকার ঘটনাবলীর খ-চিত্র বলা যেতে পারে। কোন সন্দেহ নেই যে সেখানে ভয়ংকর কিছু ঘটছে। এসব ঘটনার ব্যাপারে অং সান সুচি এবং তার কর্মকর্তরা যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তা হুবহু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মিলে যায়। রোহিঙ্গা মুসলিমরা দাবি করে তারা বহু বছর ধরে রাখাইনে বাস করছে। প্রায় প্রতিদিনই মিয়ানমারের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্রে ছাপা হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে আক্রমণ করে লেখা নিবন্ধ। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরার কারণেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই হামলার লক্ষ্যবস্তু।
সু চিকে যখন মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা ইয়াঙ্গুনে গৃহবন্দি করে রেখেছিল, তখন তার সঙ্গে কথা বলার জন্য, তার সাহসী প্রতিরোধের কাহিনী তুলে ধরার জন্য অনেক সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। তবে অং সান সুচি ক্ষমতায় যাওয়ার পর সবকিছু যেন বদলে গেছে। মিয়ানমারের সরকারে তিনি নিজের জন্য তৈরি করেছেন এক ক্ষমতাধর পদ। প্রেসিডেন্টেরও ঊর্ধ্বে এই ‘স্টেট কাউন্সিলর’ বা ‘রাষ্ট্রীয় পরামর্শক’-এর পদটি। বাস্তবে তিনি আসলে সবার ধরা ছোঁয়ার উপরে। তাকে জবাবদিহি করার কেউ নেই।
রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন-নিপীড়নের ব্যাপক তথ্য-প্রমাণ রয়েছে সেটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের লোকজনের কৌশলই বেছে নিয়েছে। গণমাধ্যমে একবার-দু’বার হয়তো ভুল বা মিথ্যে তথ্য প্রচার হয়েছে, সেগুলোকেই তারা ফলাও করে দেখাচ্ছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে উস্কানিমূলক প্রচারণা চলছে, সেটা অন্তত সুচি বন্ধ করতে পারেন। সুচি সেসব মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করেন, তার অধীনে কাজ করেন যেসব কর্মকর্তা, তারা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের খবরকে প্রতিদিন বানোয়াট বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। আর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যেসব কথা বলছে, সেগুলোকেই সত্য বলে প্রচার করছেন। আর এই সেনাবাহিনীই কিন্তু মিয়ানমারের আরও অনেক জাতিগত সংখ্যালঘুদের গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অং সান সুচি কথিত নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে এই কমিশন রিপোর্ট দেবে বলে কথা রয়েছে। কিন্তু এই কমিশনের প্রধান হচ্ছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়িন্ট সোয়ে, যিনি একজন সাবেক জেনারেল। এই রিপোর্টটি হোয়াইট ওয়াশ ছাড়া আর কিছু হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।