Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসি গঠনে সার্চ কমিটি

| প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি করছেন প্রেসিডেন্ট। নিয়মানুযায়ী সার্চ কমিটির সদস্যদের দেয়া নামগুলো থেকে প্রেসিডেন্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এই সার্চ কমিটিকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি গঠনের লক্ষ্যে এই সার্চ কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্টের কাছে নাম প্রস্তাবকারী এই সার্চ কমিটির প্রধান করা হয়েছে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে। বর্তমান ইসি গঠনে গতবারও একই দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। গতবারের মতো এবারও সার্চ কমিটিতে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি থাকছেন। এবার এই দায়িত্ব পেলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
গতবারের মতোই সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ও কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) পদধারী ব্যক্তিরা থাকছেন। তারা হলেন, পিএসসির এবারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এবং সিএজি মাসুদ আহমেদ। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি শিরীন আখতারকে সার্চ কমিটিতে নেয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের বিচারপতি মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে গতবার সার্চ কমিটিতে ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান, পিএসপির তৎকালীন চেয়ারম্যান এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী ও তৎকালীন সিএজি আতাউল হাকিম।
গতবার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান চারজনের সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন; এবার সদস্য সংখ্যা দু’জন বাড়িয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে এতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন আবদুল হামিদ।
মরহুম প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মতোই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মাসব্যাপী সংলাপের পর বুধবার সার্চ কমিটি গঠন করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ।
গতকাল সকালে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে চিঠি পাওয়ার পর সার-সংক্ষেপ তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেখান থেকে ফাইল ফেরত আসার পর সন্ধ্যায় ছয় সদস্যের সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নবগঠিত সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে সরকারি এই দপ্তর। সার্চ কমিটি গঠন সংক্রান্ত গেজেট আজকালের মধ্যেই হবে বলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে।
নতুন কমিশন গঠন নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ মোট ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আলোচনা করেন।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে সার্চ কমিটি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। ওই সূত্র আরও জানায়, সময়ের অভাবে এবার নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন বা অধ্যাদেশ জারি করছেন না প্রেসিডেন্ট। একজন কমিশনার বাদে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি।
এবার সার্চ কমিটি যে ছয় সদস্যের হচ্ছে, প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদিন সকালেই তা নিশ্চিত করেন। তবে প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত নাম প্রকাশে রাজি হননি তিনি। সকালে বঙ্গভবনের চিঠি পাওয়ার পর দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে দেখা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। পরে তারা দু’জনে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন : ছয় বছর ধরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ১৯৮১ সালে জেলা আদালতের আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। হাইকোর্টে আসেন তার দুই বছর পর। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এর দুই বছর পর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হওয়া মাহমুদ হোসেন আপিল বিভাগে উন্নীত হন ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি।
ওবায়দুল হাসান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং আইন বিভাগ থেকে এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে ওবায়দুল হাসান জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন ১৯৮৬ সালের মার্চে। তার দুই বছর পর হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০০৫ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। ২০০৯ সালের জুনে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসাবে নিয়োগ পান। ২০১১ সালের জুনে স্থায়ী হন সেখানে। ২০১২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের দায়িত্বে আছেন তিনি।
মোহাম্মদ সাদিক :  ১৯৮২ সালের নিয়মিত বিসিএস ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ সাদিক নির্বাচন কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকার সময় ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর পিএসসি সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। গত বছরের ২৫ এপ্রিল পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
মাসুদ আহমেদ : ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পান মাসুদ আহমেদ। ’৮১ ব্যাচের এ কর্মকর্তা হিসাব ও নিরীক্ষা ক্যাডারে সরকারি চাকরি শুরু করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম অধ্যাপনার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ সমানভাবে লিখে যাচ্ছেন। বাংলা একাডেমি, কাগজ সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য তিনি।
শিরীন আখতার : বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শিরীন আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী উপ-উপাচার্য হিসেবে গত বছরের ২৮ মার্চ কাজ শুরু করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির অষ্টম উপ-উপাচার্য। ১৯৮৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়া শিরীন আখতার ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারি বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিইএচডি ডিগ্রি নেন তিনি।
সূত্র জানায়, সার্চ কমিটি প্রেসিডেন্টের কাজ সহজ করতে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য কয়েকটি নাম প্রস্তাব করবে। তার মধ্য থেকে অনধিক পাঁচজনকে নির্বাচন পরিচালনাকারী সাংবিধানিক সংস্থার দায়িত্বভার অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপ্রধান। এর  মধ্যে একজন হবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, বাকিরা নির্বাচন কমিশনার।
গতবার অর্থাৎ ২০১২ সালেও ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ জমা দিতে সার্চ কমিটিকে বলা হয়েছিল। তারা সিইসি পদের জন্য দু’জন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও আলী ইমাম মজুমদারের নাম প্রস্তাব করে। তার মধ্য থেকে প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান সাবেক সচিব কাজী রকিবকে সিইসি করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনারের চারটি পদে আটজনের নাম সুপারিশ করেছিল গতবারের সার্চ কমিটি; তার মধ্য থেকে চারজন কমিশনার পদে নিয়োগ পান।
সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে সার্চ কমিটি। সিদ্ধান্তের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Maruf ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:১০ পিএম says : 0
    Dekha jak tara ki koren
    Total Reply(0) Reply
  • Mirazul Islam ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ২:৩৫ পিএম says : 0
    তাদের কাছ থেকে একটা ভালো কিছু প্রত্যাশা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ২:৩৮ পিএম says : 0
    এখনকার ইসির মত আবার নতুন কেউ আসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ruhan ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ২:৩৮ পিএম says : 0
    ate ki somossar somadhan hobe
    Total Reply(0) Reply
  • জান্নাত ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ২:৩৯ পিএম says : 0
    যা ই করা হোক না কেন ফলাফল হবে একই...........................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ