Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা না থাকায় খোলাবাজারে খুলনার গলদা চিংড়ি

| প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের গলদার চাহিদা না থাকায় খুলনা অঞ্চলের খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে রপ্তানিযোগ্য গলদা চিংড়ি। এতে নিরুৎসাহী হচ্ছেন বৃহত্তর খুলনার ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি চাষিরা। চাষের খরচ না উঠার দুশ্চিন্তায় তারা। এ সঙ্কট-সমস্যা উত্তরণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন বাজার সৃষ্টিতে সরকারি উদ্যোগের আহ্বান রফতানিকারকদের।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামীম হায়দার জানান, ‘এ বছর খুলনায় ২২ হাজার ২৫৯ হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৩ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন গলদা উৎপাদিত হয়েছিল। এ বছরও সমপরিমাণ উৎপাদিত হতে পারে। তবে বিশ্ববাজারে চাহিদা কম থাকায় লোকসানের মুখে পড়ছে গলদা চাষিরা। বাধ্য হয়ে স্থানীয় খোলা বাজারে কমমূল্যে বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।’ খুলনায় ৫১ হাজার ৬১৪জন চিংড়ি চাষি রয়েছেন। জেলায় চিংড়ি চাষি সমিতি রয়েছে আটটি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম সরদার বলেন, সাতক্ষীরার ৯ হাজার ৩৮৮ হেক্টর জমিতে গলদা চাষ হয়েছে। গেল বছর ৬ হাজার ৭৯০ মেট্রিকটন গলদা উৎপাদিত হয়েছে সাতক্ষীরায়। দাম রেকর্ড পরিমাণ কম হওয়ায় চাষিরা মার খাচ্ছে।
বাগেরহাট জেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, এ বছর বাগেরহাটের নয়টি উপজেলায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে। বন্যায় ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ঘেরে চিংড়ির উৎপাদন কমেছে। আবার বাজারদর পড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চিংড়ি বেচ-কেনার সর্ববৃহৎ আড়ত বাগেরহাটের ফকিরহাটের ফলতিতা মৎস্য আড়ত সূত্র জানান, প্রতিদিনে এ আড়তে পাঁচ হাজার মেট্রিক টনের মতো সাদা মাছ ও চিংড়ি বেচা-কেনা হয়। খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার চিংড়ি চাষি ও ব্যবসায়ীরা এ আড়তে কেনা-বেচা করেন। মাছের উৎপাদন ও দাম কমে যাওয়ায় বর্তমানে বেচা-কেনা তিন ভাগের এক ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০টির প্রতি কেজি গলদার দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ২০ থেকে ২৫টির প্রতি কেজির দাম ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা ও ১০টির প্রতি কেজির দাম ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। গত বছর ৩০ থেকে ৪০টির প্রতি কেজি গলদার দাম ছিল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, ২০ থেকে ২৫টির প্রতি কেজির দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা ও ১০টির প্রতি কেজির দাম এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০টাকা।
বাগেরহাটের চিতলমারীর চরবানিয়ারী ইউনিয়নের শ্যামপাড়ার চিংড়ি চাষি দিজেন গাইন, স্বপন মাল, সুমন মীর, সদর ইউনিয়নের রায়গ্রামের বিনয় সিংহ, পাড় ডুমুরিয়ার মো: লতিফ শেখ, কবির শেখ, হেমায়েত সরদারসহ অনেকে হতাশা ব্যক্ত করে জানান, এ উপজেলার অধিকাংশ পরিবার মৎস্য ঘেরে চিংড়ি চাষের উপর নির্ভরশীল। গলদা চিংড়ির দরপতনে এলাকার প্রায় ৭ হাজার চিংড়ি চাষির মুখে হাসি নেই। এখানকার অধিকাংশ চাষি বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদে কারবারীদের কাছ থেকে অধিক মুনাফায় টাকা এনে বেশি দামে মাছের পোনা ও মাছের খাদ্য ক্রয় করে চাষাবাদে ব্যয় করেছেন। এ পরিস্থিতিতে চিংড়ির বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় তারা খরচের টাকাও ঘরে তুলতে পারছেন না। দেনার দায়ে তারা জর্জারিত।
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা গ্রামের বীরেন্দ্রনাথ গোলদার জানান, আট বিঘা জমির ঘেরে তিনি গলদা চাষ করেছেন তিনি। চিংড়ির দাম গত বছরের তুলনায় অস্বাভাবিক কম। তাই মৌসুম শেষ হতে চললেও খরচের টাকার অর্ধেকও হাতে পাননি। চিংড়ি চাষেই তাদের সুদিন ফিরেছিল; আর দাম না থাকায় এখন আবার পথে বসার অবস্থা হচ্ছে তাদের।
চিংড়িশিল্পের সাথে সম্পৃক্ত মৎস্য চাষি, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা উৎপাদন ও মাছের দাম কমে যাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে অস্বাভাবিকভাবে কমেছে গলদা চিংড়ির দাম। মাছের দাম কমে যাওয়া, ঋণের চাপসহ না প্রতিকূলতায় গলদা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।
গলদা চিংড়ি রফতানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশের গলদা চিংড়ির সবচেয়ে বড় বাজার গ্রেট ব্রিটেন (ইউকে)। তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের অর্থনীতির ওপর চাপ পড়েছে। এর ফলে তারা একদমই গলদা চিংড়ি কিনছে না। ইতোমধ্যে সেখানকার অনেক আমদানিকারক দেউলিয়া হয়ে গেছেন। জাপানসহ নতুন কয়েকটি দেশ এ বছর স্বল্প পরিমাণে গলদা কিনছে। এসব নতুন বাজারে খুলনাঞ্চলের কোম্পানির গলদা বিক্রির তেমন নেটওয়ার্ক নেই। তাই কোম্পানিগুলো স্থানীয়ভাবে গলদা কিনছে না। এ বছর খুলনার মাত্র চারটি কোম্পানি গলদা কিনছে। গেল বছর খুলনার অন্তত ৩৫টি কোম্পানি গলদা চিংড়ি রফতানি করেছিল।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) পরিচালক মো. তরিকুল ইসলাম জহির বলেন, বিশ্ববাজারে চাহিদা বা দাম না থাকায় গলদা চিংড়ি কিনছে হিমায়িত চিংড়ি রফতানিকারকরা। আন্তর্জাতিক আমদানিকারকরা এ বছর গলদা কিনছেই না। কবে নাগাদ এ সঙ্কট উত্তরণ সম্ভব; তা বলা মুশকিল। গলদা চিংড়ির জন্য নতুন বাজার খুঁজতে হবে। সরকারকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে।



 

Show all comments
  • Tapas Sasmal ১১ আগস্ট, ২০১৮, ৩:৩২ এএম says : 0
    এর জন্য আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবসায়ী দাই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিংড়ি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ