Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাবনায় নদী-সড়ক ও হাটের জমি দখলের প্রতিযোগিতায় প্রভাবশালীরা

| প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পাবনা জেলা সংবাদদাতা : পাবনায় নদীদস্যু, ভূমিদস্যু দখলবাজদের চলছে অবৈধ দখলের মহোৎসব। এদের প্রতিরোধ করে তেমন সাধ্যকার আছে। যারা এই কর্মের সাথে জড়িত তারা ক্ষমতাসীন দলের সাথে যুক্ত আবার অনেকে আছেন যারা আগে যুক্ত ছিলেন অন্যদলে তারাও ভিড়েছে এই দলে। এরা সব ভুলে এখন দখলবাজ মাসতুতো ভাই। দখলবাজদের হাত থেকে নদী, সড়ক-হাট, জমি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে প্রশাসন কার্যত ব্যর্থ। প্রশাসনের উদাসীনতা অথবা নানা প্রভোলভনকেই দায়ী করছেন সচেতন মানুষজন। একে একে সরকারী জমি-জিরাত, নদী বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানায় চলে গেছে সরকারের অনেক জায়গা-জমি। কার গাফিলতি? ঠিক সময় মতো জেলা প্রশাসন থেকে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হয় না। আদালতে যখন জবাব যায় তখন সেটা তামাদি সময় পার করে। বিজ্ঞ আদালত একতরফা রায় ঘোষণা করেন। সরকারি সম্পত্তি বেহাত হয়ে যায় এভাবেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীসমূহকে দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছেন। আবার উচ্চ আদালতও নদী দখলদারদের কবলমুক্ত করার জন্য রায় প্রদান করেছে। এর পরেও চলছে নদী দখল। একই সঙ্গে চলছে সড়ক, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং হাট-বাজারের জমি দখল।
পাবনা জেলা প্রশাসক যখন ইছামতী নদী দখলমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ঠিক সেই সময় নতুন করে ইছামতী নদীতে আরসিসি পিলার করে পাকা ইমারত নির্মাণ কাজ করছে প্রভাবশালী মহল। ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধিগণ এ ব্যাপারে বেশ উদাসীন বা তাদের আচরণে মনে হয় তারা দখলদারদের পক্ষে। তারা প্রশাসনকে কোন সহযোগিতা করছে না যা দখলদারদের অবৈধ দখলে ইন্ধন যোগাচ্ছে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণকল্পে তারা থানায় এফআইআর এবং জিডি করছেন কিন্তু তাতে কোন ফল হচ্ছে না। পুলিশ নিশ্চুপ। প্রশাসনও কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। জেলার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আব্দুর রশিদ জানান, তিনি বারবার প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না। সাঁথিয়া উপজেলা সদরের বোয়াইলমারী মৌজায় ইছামতী নদীতে (আই-৩ প্রধান সেচ খাল) আরসিসি পিলার দিয়ে পাকা নির্মাণ কাজ করছে প্রভাবশালী একটি মহল। একইভাবে আরসিসি পিলার দিয়ে হলুদঘর মৌজায় ইছামতী ব্রিজের পাশে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। বিষয়টি গত ১৭ জানুয়ারি সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর এফআইআর করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাঁথিয়াস্থ উপ-সহকারী প্রকৌশলী। তারপরও নির্মাণ কাজ অব্যাহত আছে। পুলিশ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি কোন অভিযোগ পাননি।’ পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’ অবশেষে পাবনার পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে হলুদঘর ব্রিজের নিকটস্থ নির্মাণাধীন অবৈধ স্থাপনাটির নির্মাণ কাজ বন্ধ করেছে পুলিশ বলে এই খবর লেখার সময় জানা গেছে। তবে বোয়াইলমারী বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে নির্মাণাধীন পাকা কাজ এখনও চলছে। এদিকে, হাটের মধ্যে খাস জমি যা হাট ফেরিফেরির জমি বলে পরিচিত সেসব জমিতে প্রভাবশালীরা পাকা ঘর নির্মাণ করে সেগুলো ভাড়া দিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে।
সাঁথিয়া উপজেলা সদরের বোয়াইলমারি হাটের মধ্যে (১নং খাস খতিয়ানভুক্ত) সরকারি খাস জমিতে (আরএস দাগ নং-১১৫৯ ও ১১৬০ সাঁথিয়া পৌর মেয়র মেরাজ উদ্দিন প্রাং পাকা ইমারত তৈরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও তার নিকটবর্তী অপর দুটি প্লটে (আরএস দাগ নং-১১৫০ ও ১১৫১) আরসিসি পিলার করে পাকা ইমারত নির্মাণ করছেন প্রয়াত অসীত কুমার দাসের পুত্র অসীম কুমার দাস। এ ব্যাপারে তাদের দাবি এই জমি তাদের। কিন্তু তথ্য মতে, উক্ত জমি সরকারি খাস সম্পত্তি। এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহাঙ্গীর আলমকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। এসব জমি খাস খতিয়ানভুক্ত। মাপ-ঝোঁক হবে তার পর অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আপাতত যারা নির্মাণ কাজ করছেন তাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি।’
উল্লেখ্য, বোয়াইলমারি বাজারের ১১৬৫ নং দাগের খাস জমি ইতোমধ্যেই বেদখল হয়ে গেছে। সেখানে পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বিরাট পাকা ইমারত। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্দেশ দেয়ার পরও নির্মাণ কাজ অব্যাহত আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাবনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ