Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর দোলাচলে দিনক্ষণ

| প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের দিনক্ষণ জানতে আগ্রহী সবাই। কিন্তু এ নিয়ে দোলাচল কাটেনি। দুদেশের কেউই জানাতে পারছে না সঠিক দিনক্ষণ। ভারতীয় সূত্র জানিয়েছে, সফর হচ্ছে। কিন্তু এখনো দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকার তরফে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ প্রস্তুত।
তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ সফরে বাংলাদেশের প্রধান আগ্রহ তিস্তার পানি বন্টন সমস্যার সমাধান। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে নতুন দিক উন্মোচন করবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ। কারণ তিস্তার পানির হিস্যা আদায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তিস্তার জট খুললেই সফরের দিনক্ষণ নির্ধারণ হবে। তবে ভারতীয় সূত্রের বরাতে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, প্রস্তাবিত সফরের কোনও দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সাধারণত এ ধরনের হাই প্রোফাইল সফরের দিনক্ষণ কয়েক সপ্তাহ আগেই তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে এখনও সেটা হয়নি। তবে ভারতের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, আগামী মাসে শেখ হাসিনার সফর হচ্ছে ধরে নিয়েই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এছাড়া আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ‘ঐতিহাসিক’ ম্যাচটি দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঠে উপস্থিতির জন্য ভারতের পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানোর কথা জানা গেছে।    
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নেতৃত্বের চিন্তা হচ্ছে, তিস্তা নিয়ে মমতাকে রাজি করাতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন। এতে যদি তিনি রাজি না হন বিকল্প হিসেবে নরেন্দ্র মোদি শেষ মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপেক্ষা করেই বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সই করে ফেলতে পারেন। এদিকে, বাংলাদেশে সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিস্তা নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের আশায় আছে বর্তমান সরকার। কারণ তিস্তার পানির হিস্যা আদায়কে নির্বাচনের আগে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।  
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীও কিছুদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে নতুন দিক উন্মোচন করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে প্রস্তুত। এখন বিষয়টি ভারতের ওপরও নির্ভর করছে।
সূত্র মতে, গত ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার ভারত সফরের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তিস্তার চুক্তির বিষয়ে দেশটির পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় সফর বাতিল করা হয়। সেই সময় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর অভিবাসীবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশে আসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সফর নিয়ে কথা বলেন। তিনি তিস্তার বিষয়ে মোদির ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেছিলেন, চুক্তি চূড়ান্ত না হলেও চুক্তির বিষয়টি এগিয়ে রাখা হবে।
ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্কের টানাপোড়েন সম্পর্কে জানতে চাইলে ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সারদা কা- নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে যে তিক্ততার শুরু, ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল এবং রোজভ্যালি প্রসঙ্গকে ঘিরে তা এখন চরম পর্যায়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিস্তা নিয়ে মমতাকে রাজি করানো অনেকটাই কঠিন। কাজেই এ অবস্থায় মমতাকে পাশে নিয়ে মোদির পক্ষে তিস্তা চুক্তি সই করাটা প্রায় অসম্ভব।
ভারতীয় সূত্র জানিয়েছে, আঞ্চলিক জোট গঠনে এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ভারতের পাশে প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে এ সংক্রান্ত যৌথ চুক্তিসহ ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সচিব পর্যায়ের বৈঠক সম্পন্ন করা হয়েছিল। এছাড়া ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পার্ররিকরও ভারতীয় তিন বাহিনীর ডেপুটি চিফদের নিয়ে বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে একটি চুক্তির প্রস্তাব করেন। ভারত শেখ হাসিনার সফরকালেই চুক্তিটি সই করতে চায়। এছাড়া চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে ভারতের প্রস্তাব রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর তিন দফা পেছানো হয়। প্রথমে ৩ ও ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী দিল্লী যাবেন বলে কথা ছিল। তারপর তা পরিবর্তন করে ১০ ও ১১ ডিসেম্বর ঠিক হয়। সর্বশেষ ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর ভারত সফরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাও স্থগিত হয়। তবে স্থগিত হওয়ার কথা বাংলাদেশ ও ভারত কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর ঢাকা সফরের সময়ে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর চরম বিরোধিতার কারণে তখন এ চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশ সফরে এলে তার সফরসঙ্গী হন মমতা। সে সময় এ চুক্তির ব্যাপারে ইতিবাচক কথা শুনিয়েছিলেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রীর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ