Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাটকাঠিতে লাভবান চাষি ব্যবসায়ীদের ঘুরছে ভাগ্যের চাকা

প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী ) উপজেলা সংবাদদাতা : একটা সময় ছিল যখন পাটকাঠির তেমন কোন মূল্য ছিল না। তবে সে দিন এখন অতিত। এখন পাঠকাঠিও একটা মূল্যবান উপকরণ। দামও চড়া। যে কারণে রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা ওই পাঠকাঠি মজুদ রাখার পর বর্তমানে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহে জেলা সদরের মৌলভীর ঘাট থেকে ট্রলার যোগে পার্টেক্স ও হার্ডবোর্ড তৈরির কারখানাগুলোতে পাঠানো হচ্ছে হাজার হাজার মণ পাটকাঠি। আর মৌসুমী এ ব্যবসা করে অনেকেই ঘুচিয়েছেন তার ভাগ্যের চাকা। জেলা শহরের মৌলভীর ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শত শত মণ পাটকাঠি সেখানে মজুদ করা হয়েছে। একই সাথে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নছিমন-করিমনসহ নানা ধরনের যানবাহণে প্রতিনিয়িত আসছে শুধুই পাটকাঠি। সেখানে পাটকাঠি নিয়ে আসা কৃষক আবু তাহের বলেন, কয়েক বছর আগেও তারা পাটকাঠি ফেলে দিতেন। তবে এখন তা আর ফেলতে হয় না। জেলা শহরের মৌলভীর ঘাটে পাটকাঠির হাট বসায় তা তারা অন্যসব কৃষি ফসলের মতই আগলে রাখেন। পাট উৎপাদকালীন সময়ে পাটকাঠির দাম থাকে অনেক কম। ফলে এখন বেশিরভাগ কৃষক ওই পাটকাঠি আর বিক্রি করেন না। তারা রাস্তার পাশে, জমির আইলে অথবা বাড়ির পালনে হাজার হাজার আটি (এক মুঠা) দাঁড় করিয়ে রাখেন। মাঝে মাঝে উইপুকা ও ইঁদুর তাড়াতে ওষুধ প্রয়োগ করেন। যাতে পাটকাঠিগুলো নষ্ট না হয়। আর সময় সুযোগ বুঝে উচ্চ দরে ওই কাঠি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। অপর চাষি আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, মৌসুমের সময় পাটকাটির একশত আটি তারা দুইশত থেকে আড়াইশত টাকায় বিক্রি করে থাকেন। তবে কিছু দিনের জন্য ওই কাঠি মজুদ রাখতে পারলে তারা প্রায় ডাবল দামে বিক্রি করতে পারে। বর্তমানে মজুদ রাখা কাঠি তারা প্রতি শত সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকায় বিক্রি করছেন।
নছিমন চালক আবুল হোসেন বলেন, অনেক কৃষকই এ ঘাটে সরাসরি আসতে চান না। ফলে তারা ওই সুযোগটি নেন এবং কিছুটা লাভ বেশি দিয়ে তারা পাটকাঠি কেনেন এবং তা এ ঘাটে এনে কাঠি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। ফলে খরচ বাদ দিয়ে দিন শেষে তারা লাভের হিসেবে কষতে পারেন। ওই ঘাটের ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিন সরদার বলেন, রাজবাড়ীর দাদশী, পাঁচুরিয়া, খানখানাপুর, আলীপুর, শহীদওহাবপুর, মূলঘর, বসন্তপুর, সুলতানপুর, মাশালিয়া, জামালপুর, বহরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় উন্নতমানের পাট ও পাটকাঠির উৎপাদন হয়। এ ঘাটে থাকা ব্যবসায়ীরা শীত মৌসুম শুরুর আগে থেকেই ওই সব এলাকার পাটকাঠি মজুদ ও সংগ্রহের জন্য তৎপড় হয়ে ওঠেন। তারা মূলত ওই সব পাটকাঠি নারায়ণগঞ্জের পার্টেক্স, সুপার বোর্ড ও হার্ডবোর্ড মিলগুলোতে মণ হিসেবে সরবরাহ করে থাকেন। ৫০ আঁটিতে হয় এক মণ। প্রতিমণ কাঠি তারা ২৫০ টাকা দরে সেখানে তারা বিক্রি করেন। তারা প্রায় প্রতি সাপ্তাহে ট্রলার বোঝাই করেই পদ্মা নদী দিয়ে ওই সব পাটকাঠিগুলো গন্তব্যে নেন। প্রতিটি ট্রলাতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা মূল্যের কাঠি তারা বোঝাই করেন। অপর ব্যবসায়ী মিন্টু প্রমাণিক বলেন, মৌসুমের মাত্র পাঁচ মাস এ ব্যবসা তারা করেন। এ সময়ের মধ্যেই তারা কাঠি বিক্রি শেষ করেন। তবে তিনি দাবি করেন, পাটকাঠির ব্যবসা আর আগের মত নেই। কোম্পানিগুলো অনেক বেশি হিসেবে হয়ে গেছে। তাছাড়া ব্যবসায়ী বেশি থাকায় এবার দরপতন হয়েছে। বিগত বছর প্রতিমণ কাঠি তারা তিন শত টাকা বিক্রি করেছিল। তবে এবার ওই রেটে তারা আর বিক্রি করতে পারছেন না। তাদের দাবি কোম্পানিগুলো রেট বেশি দিলে কৃষকরাও রেট বেশি পেত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাটকাঠিতে লাভবান চাষি ব্যবসায়ীদের ঘুরছে ভাগ্যের চাকা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ