পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পঞ্চায়েত হাবিব : প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগে আজ মঙ্গলবার বা আগামীকাল বুধবার পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠনে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সার্চ কমিটি গঠনের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বঙ্গভবন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগের আগে আর মাত্র ১৭ দিন সময় পাচ্ছে বর্তমান কমিশন। নির্বাচন কমিশনারই বা কারা হচ্ছেনÑ এ নিয়ে প্র্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বিএনপিসহ ৩১টি দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছেন। সার্চ কমিটি গঠনের পরে আবার প্রেসিডেন্টের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হচ্ছে না বলে বঙ্গভবন সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ হওয়ার পরে আবারো রাজনীতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নতুন কমিশনের অধীনে।
সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিসহ ৩১টি দলের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্টে মো. আবদুল হামিদের সংলাপ শেষ হয়েছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। কমিশন পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত এক মাসে ৩১টি রাজনৈতিক দলের সাথে বলেছেন প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ। বিএনপির সাথে বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই আলোচনা। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই নিজেদের মতো করে সুপারিশ তুলে ধরে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর জোর দিয়েছে। আলোচনায় উঠে এসেছে স্থায়ী একটি আইনের প্রসঙ্গও। সংলাপ পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ায় যে কোনো দিন সার্চ কমিটি প্রজ্ঞাপন জারি করবেন প্রেসিডেন্ট। ওই কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ করবে।
জানা গেছে, সার্চ কমিটি ৫ সদস্যের হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া তালিকা বিশ্লেষণ করে এবং প্রেসিডেন্টের বিবেচনায় যোগ্য ব্যক্তিরা ওই তালিকায় থাকবেন। ২০১২ সালে ২৪টি রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার পর পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্টে। কিন্তু ওই সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত বর্তমান কাজী রকীব উদ্দিন আহমদ কমিশন পুরো মেয়াদেই তাদের কার্যক্রমে বিএনপির আস্থা অর্জন করতে পারেনি। বহু বিতর্কিত নির্বাচন উপহার দেয়া সমাজের প্রায় সব স্তরেই ক্ষোভ রয়েছে এই কমিশন নিয়ে। এর ফলে নতুন ইসি গঠনকে সামনে রেখে সবাই সোচ্চার হয়েছেন। সংলাপে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদকে দেশের বিভিন্ন রাজনীতিক দল নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নিবাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে। আসলে সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে রাজনীতিক দলগুলোর মধ্যে।
গতকাল (সোমবার) প্র্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, ইসি পুনর্গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্র্রেসিডেন্টের সংলাপ শেষ হয়েছে। দ্রুত সার্চ কমিটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে কবে সার্চ কমিটি হচ্ছে তা বলা যাবে না। তিনি বলেন, সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নাম প্র্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ করবে। সংবিধানে যেভাবে রয়েছে সার্চ কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেসব মতামত ও প্রস্তাব দিয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করে প্রেসিডেন্ট পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ সংলাপে পাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও প্রস্তাব বিবেচনা করে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন। সংলাপের শেষ দিনে প্রেসিডেন্ট এই আশাবাদ ব্যক্ত করলেও কী প্রক্রিয়ায় নতুন ইসি গঠন হবে, তা অবশ্য তিনি জানাননি। তবে সংলাপে প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে সংলাপ করার আহ্বান জানান। জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার গুরুত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর পরমতসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি চর্চার ওপর জোর দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলগুলোর সহযোগিতা চেয়েছেন।
এদিকে প্রেসিডেন্টের সাথে সংলাপে বেশিরভাগ দল সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে। তা না হওয়া পর্যন্ত সার্চ কমিটির মত দিয়েছে বেশিরভাগ দল। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা করে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছে বিএনপি। তবে ইসি গঠনে ‘এখনই’ আইন করতে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল রাজি হলেও তাতে সায় নেই বিএনপির। তাছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ই-ভোটিং চাইলেও বিএনপি তাতেও আপত্তি জানিয়েছে। যদিও সার্চ কমিটিতে সব দলের প্রতিনিধিত্ব চায় জাকের পার্টি, ইসির আর্থিক স্বাধীনতা চায় ইসলামী ফ্রন্ট, নারী কমিশনার চায় মুসলিম লীগ। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন, ইসি গঠনে সার্চ কমিটি এবং দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি গঠনসহ বিভিন্ন পরামর্শ এসেছে দলগুলোর পক্ষ থেকে।
মরহুম প্র্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে ২৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পর চার সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ এবং চার কমিশনার মোঃ শাহ নেওয়াজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোঃ জাবেদ আলী, মোহাম্মদ আবু হাফিজ এবং মোহাম্মদ আবদুল মোবারাক ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে আরও একজন যুক্ত হন। সংবিধান অনুযায়ী কমিশনের মেয়াদ পাঁচ বছর। এ হিসাবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমাও ঘনিয়ে আসছে। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ২০১৯ সালে। সঙ্গতকারণে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নতুন কমিশনের অধীনে।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে এই নির্বাচন কমিশন হবে। এ বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট কমিশন নিয়োগ দেবেন। কিন্তু সংবিধানের আলোকে ওই আইন সাড়ে চার দশকেও না হওয়ায় প্রতিবারই নির্বাচন কমিশন গঠনে জটিলতা দেখা দেয়।
গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সাথে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু করেন প্রেসিডেন্ট। এরপর গত এক মাসে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ৩১টি দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে বসেছেন প্রেসিডেন্ট। এরপর পর্যায়ক্রমে সংলাপে অংশ নেয়া অন্য দলগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ লিবারেল ডেমোক্র্যাটি পার্টি (এলডিপি), কৃষক-শমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), সাম্যবাদী দল, বিকল্প ধারা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাসদ (আম্বিয়া), বাসদ, ইসলামী আন্দোলন, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, গণফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ও জাকের পার্টি।
বর্তমান কমিশনের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক আছে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, এবার দলের পক্ষ থেকে ‘ক্লিন ইমেজের কাউকে নির্বাচন কমিশনে আনার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বেশ ক’জনের নামও আলোচনায় চলে এসেছে। সবার নাম এখনো জানা না গেলেও পরবর্তী কমিশনারের তালিকায় বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদ, অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও বিচারপতির নাম রয়েছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।