Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধিতে শক্তিশালী অসাধু সিন্ডিকেট : রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : আবুল হোসেন পেশায় একজন শ্রমিক। ঢাকার এক সিগারেট বিক্রেতার কাছ থেকে তিনি দশ টাকা দিয়ে ৪টি সিগারেট চাইলে দোকানী আরো দুই টাকা দাবি করেন। এই নিয়ে দোকানি আর আবুল হোসেনের মধ্যে এ নিয়ে তুমুল তর্ক চলে। শেষমেষ তাকে আরো দুই টাকা দিতেই হয়। এমন ঘটনা শুধু আবুল হোসেনের সাথেই নয়। এ চিত্র বর্তমানে সারাদেশেই বিরাজ করছে। রাজধানীর একাধিকস্থান ঘুরে সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধিরও প্রমাণও মিলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মজুদকারীদের জন্য সিগারেটের বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়েছে। কিছু অসাধু পাইকারের অতি মুনাফার লোভ সিগারেটের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। এর ফল ভোগ করছে সাধারণ খুচরা ক্রেতারা। হঠাৎ করে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবন যাত্রার ব্যয়ের ওপরও চাপ সৃষ্টি করছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, পল্টন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, প্যাকেট প্রতি সিগারেটের দাম ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। তবে ভোক্তাদের কাছে অতিরিক্ত দাম নিলেও সরকার এখান থেকে কোনো টাকাই পাচ্ছে না। পুরো অর্থই চলে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের হাতে। এর মাধ্যমে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। উল্টো চলতি অর্থবছরে সরকারি রাজস্ব আদায়ের উধ্বগতির লাগাম টেনে ধরার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতি প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিলো ২০ শতাংশ। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশের কিছু বেশি। এর নেপথ্যে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা বাজারকে অস্থিতিশীল করে এনবিআর’র রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ব্যহত করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই অপতৎপরতা ধূমপান নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন আগেও যেখানে প্রিমিয়াম সেগমেন্টের সিগারেট বিক্রি হতো ১১ টাকা করে সেটা এখন বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা করে। আট টাকার সিগারেট ৯ থেকে ১০ টাকা, আড়াই টাকার সিগারেট তিন টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি সাভার এলাকায় একটি দেশী কোম্পানির প্রতিনিধিরা আনুমানিক সাড়ে ৩ লাখ টাকার ডারবি ব্রান্ডের সিগারেট কিনে মজুদ করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে। স্থানীয় থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলাও করা হয়েছে।
রাজধানীর নিউমার্কেটের খুচরা দোকানী আবু সালেহ বলেন, বাজারে সিগারেট পাওয়া যাচ্ছে না। যদি দশ প্যাকেট চাই তাহলে দেওয়া হচ্ছে দুই প্যাকেট। কারণ জানতে চাইলে একটাই কথা ‘সিগারেট নাই’। আবার যা পাই তাও বেশী দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই বেশী দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চকবাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মো. রিপন বলেন, আমাদেরও কিছু করার নেই। পাইকার সিগারেট মজুদ করে রাখছে। তাই আমরা খুচরা ব্যবসায়ীদেরও চাহিদা অনুযায়ী দিতে পারছিনা। দামের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বেশী দামে ক্রয় করছি, তাই বেশী দামে বিক্রি করছি।
এনবিআর’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছরই দেখা যায় বাজেটের সময় ঘনিয়ে আসলে দেশের বাজারে সিগারেটের দাম বেড়ে যায়। এবার বেশী আগেই একটি সিন্ডিকেট বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, আগামী বাজেটে সিগারেটের দাম নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গুজবের ওপর ভিত্তি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিগারেটের বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে এবং সরকারের রাজস্ব আদায়কে বাধাগ্রস্ত করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিগারেট

২৪ ডিসেম্বর, ২০২১
১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ