বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আশরাফুল ইসলাম নূর,খুলনা থেকে : সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগে আহরণযোগ্য গোলপাতার সম্ভাব্য পরিমাণ প্রধান বন সংরক্ষকের কাছে প্রেরণ করেছে ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা বিভাগ। গতকাল থেকে ৩ দিনের জন্য প্রথম দফায় গোলপাতা আহরণের পাশ-পারমিট দেয়া শুরু করছে বনবিভাগ। ইতিমধ্যে শারণের (মেরামতের) নামে নৌকার পেট কেটে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বৃদ্ধি ও বাড়তি মলম তৈরি করে নিয়েছে নৌকা মালিকরা। পাশ-পারমিটে উল্লেখিত ওজনের কয়েকগুন বেশি গোলপাতা আহরণের সব ফন্দি চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
বনবিভাগের সূত্র জানান, বিগত বছরগুলোতে নভেম্বরে গোলপাতা আহরণ শুরু হলে এবার বন সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই বেশ বিলম্ব করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের শেষদিকে বাওয়ালীদের গোলপাতার বিএলসি চেকিং করে বনবিভাগ। গত ৫ বছর গরানের পাশ পারমিট বন্ধ রয়েছে। চলতি মৌসুমে গোলপাতার পাশ-পারমিট দেবার পূর্বেই বনবিভাগের ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা বিভাগ সুন্দরবনে আহরণযোগ্য গোলপাতার সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ণয়ে জরিপ করেছে। দ্বিতীয় দফায় পাশ পারমিট আগামী ২৮ জানুয়ারি দেয়া হবে।
সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেছেন, সুন্দরবনের দু’টি বিভাগে আহরণযোগ্য গোলপাতার সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ণয় করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেছি। যার মধ্যে পশ্চিম বনবিভাগের তিনটি কুপের সাতক্ষীরা গোলপাতা কুপে ৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, আড়–য়া শিবসা কুপে ৭ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ও শিবসা কুপে ৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন এবং পূর্ব বনবিভাগের তিনটি কুপের শরণখোলা রেঞ্জে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন, চাঁদপাই রেঞ্জে ১৫ হাজার মেট্রিক টন ও শেলা রেঞ্জে ১৭ হাজার মেট্রিক টন গোলপাতা মজুদ রয়েছে। গোলপাতার মজুদ নির্ণয়ে ৮সদস্যের একটি টীম পর্যাপ্ত সময় নিয়ে জরিপ কাজ করে সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ণয় করেছি।
সুন্দরবনের পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সাঈদ আলী বলেন, আমি নিজে রেঞ্জে গিয়ে কয়েকটি নৌকা দেখেছি। বিএলসি পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে পাশ-পারমিট দেয়া শুরু করতে পারবো। বাওয়ালীদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছি-অতিরিক্ত মলম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে। কোন প্রকার অনিয়ম ধরা পড়লেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুন্দরবনের পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে পাশ দেয়া শুরু করবো। ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রেঞ্জ অফিসগুলোতে বিএলসি জমা দিয়ে পাশ সংগ্রহের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বাওয়ালীরা। তবে নৌকার পেট কাটা দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বাড়ানোর নির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি; পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে সুন্দরবন লÐভÐ হলে সরকার ওই বছর থেকে গরানের পারমিট বন্ধ করে। তবে গোলপাতা, মাছ ও মধু আহরণের পারমিট চালু ছিল। সর্বশেষ, গেল অর্থবছরে পশ্চিম বনবিভাগ থেকে ৩৪ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন গোলপাতা আহরণ হয়। যার বিপরীতে সরকার ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৫৩৪ টাকা রাজস্ব আয় করে।
সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সামান্য রাজস্বের বিনিময়ে বিশ্বখ্যাত সুন্দরবন যেন ধ্বংস না হয়, সেটা সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। যদিও সুন্দরবনের সম্পদ আহরণের উপর নির্ভরশীল বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান। পাশ-পারমিট দিয়ে লুটপাট যেনো না হয়, জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং করা জরুরি। তা না হলে জলদাগ আর মলমের জোরে সুন্দরবন উজাড় হতে পারে।
বনজীবী ফেডারেশনের আহবায়ক মো. বাচ্চু মীর বলেন, “নীতিমালা মেনেই দীর্ঘদিন ৬ ইঞ্চি জলদাগ ও ১২ ইঞ্চি মলম ব্যবহার করেছে বাওয়ালীরা। এখন বনবিভাগ যে কঠোরতা দেখাচ্ছে-তাতে বাওয়ালীদের মধ্যে গোলপাতার পাশ সংগ্রহে অনিহা দেখা দিচ্ছে।”
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।