পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববাসীকে সমন্বিতভাবে আমাদের কৃষক, জেলে, কারুশিল্পী এবং নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি নিরসনে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার সন্ধ্যায় সুইজারল্যান্ডের ডাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘লিডিং দ্য ফাইট এগেইনস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক প্ল্যানারি সেশনে এ কথা বলেন ।
বাংলাদেশ প্যারিস চুক্তি অনুসমর্থন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে বিশ্ব সম্প্রদায় এবং ব্যবসায়ীদেরও ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষক, জেলে, কারুশিল্পী, নারীরা দিনকে দিন অধিকতর ঝুঁকিতে পড়ছে। তাদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার দিকে আমাদের ভালোভাবে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।
কৃষিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি, দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চাপ সহনশীল জাত উন্নতকরণ ও উদ্ভাবন, পানি সহিষ্ণু ধান উৎপাদন, সৌর বিদ্যুৎ ভিত্তিক সেচ পাম্প চালু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন, শস্য, কৃষি, সম্পদ রক্ষায় সমাধান খুঁজতে গবেষণা ও বিশ্ব বাণিজ্য বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজন অলাভজনক মডেল উদ্ভাবন, অংশীদারিত্বের জন্য এবং আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য।
তৃতীয়ত, বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ হাসিনা বলেন, নবায়নযোগ্য এবং ক্লিন এনার্জি, দক্ষ জ্বালানি প্রযুক্তি, যন্ত্র, নিরাপদ উৎপাদন, নগর সেবায় যেতে হবে।
চতুর্থত, তিনি বলেন, আমরা ‘গ্রিন প্রবৃদ্ধি’ পথের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এই অর্থের অন্তত অর্ধেকটা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর কাছে যেতে হবে।
প্রযুক্তি বিনিময়কে ৫ম বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের নামে বিশ্ব সুখকর অবস্থানে থাকতে পারে না। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘ প্রযুক্তি ব্যাংক রয়েছে। কৃষি-স্বাস্থ্যে আমরা জীবন রক্ষাকারী প্রযুক্তিতে যেতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের অস্তিত্বের বিষয়। বাংলাদেশ সবচেয়ে কম গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে অথচ আমাদেরই সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়। লাখ লাখ মানুষ নীরবে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হচ্ছে।
সমৃদ্ধির জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় দায়িত্ব ভাগ করে নেবে আশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্প আয়ের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে রক্ষা করার জন্য প্যারিস চুক্তিকে অবশ্যই সামনে এগিয়ে নিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে নিজস্ব সম্পদ থেকে আমরা ৪০০ মিলিয়ন ডলারের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি।
তিনি বলেন, আমরা কম কার্বন নিঃসরণ উন্নয়নের দিকে যাই। আমাদের উৎপাদন ক্ষেত্রকে আমরা ‘গ্রিন’ প্রযুক্তিতে রূপান্তর করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিয়েছি। বাংলাদেশে ৪৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়েছে। ১৫ লাখ মানুষ এখন সৌরবিদ্যুৎ পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ২০১৮ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোলার জাতি হিসেবে উঠে আসবে।
শেখ হাসিনা বলেন, কৃষিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত করার চেষ্টা করছি। চাপ সহনশীল জাত উন্নতকরণ ও উদ্ভাবন, পানিসহিষ্ণু ধান উৎপাদন, সৌরবিদ্যুৎ ভিত্তিক সেচ পাম্প চালু করেছি।
সুখী-সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ডাভোসের আলোচনায় রামপাল : আল গোরকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় এক আলোচনায় বাংলাদেশের সুন্দরবনের কাছে বাগেরহাটে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুন্দরবন ও আশপাশের এলাকার পরিবেশ রক্ষা করেই এই কেন্দ্র করা হচ্ছে।
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘লিডিং দ্য ফাইট এগেইনস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক প্ল্যানারি সেশনে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্ট আল গোর।
প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, রামপাল নিয়ে আলোচনা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের প্রান্তসীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এবং বিশ্ব ঐতিহ্য থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে ক্লিন কোল ও আধুনিক প্রযুক্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছি আমরা। সুন্দরবন ও আশপাশের ওই এলাকার পরিবেশ সংরক্ষণে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফর করে রামপালে কি হচ্ছে তা ‘নিজ চোখে’ দেখার প্রস্তাব দেন বলে জানান উপপ্রেস সচিব।
ডাভোসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একটি গোষ্ঠী রামপাল নিয়ে অপ্রয়োজনীয় ইস্যু তৈরি করছে, বলেন নজরুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন ও কি ক্ষতি করবে- এ ধরনের যুক্তিসঙ্গত তথ্য তারা উপস্থাপন করতে পারেনি। তাদেরকে ওখানে পরিদর্শন করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তাতেও তারা সাড়া দেয়নি। তাদের মনে হয়তো অন্য কোনো অভিপ্রায় আছে।
শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করে বলেন, কোনো ধরনের ক্ষতির যদি আশঙ্কা থাকে, তাহলে আমি নিজেই সে ধরনের কোনো প্রকল্পের অনুমতি দেব না।
আলোচনার এক পর্যায়ে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় ‘জনবসতিপূর্ণ ও কৃষিজমি’ এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় দেড় দশকে ওখানে কৃষিরও কোনো ক্ষতি হয়নি। পরিবেশেরও কোনও ক্ষতি হয়নি, ওখানকার মানুষেরও ক্ষতি হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, বড়পুকুরিয়া সাব ক্রিটিক্যাল। আর রামপালে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির। এসময় তিনি দুই প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্যও তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে তারা যখন সরকারে আসেন তখন দেশে বনভূমি ছিল মাত্র সাত শতাংশ। সেটা এখন বেড়ে ১৭ শতাংশ করা হয়েছে। লক্ষ্য রয়েছে ২৫ শতাংশ করার। এই সেশনে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইরনা সোলবার্গ, এইচএসবিসি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী স্টুয়ার্ট গালিভার, কফকো এগ্রির প্রধান নির্বাহী জিঙতাও চি প্রমুখ অংশ নেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।