Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শপথ আজ

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ (শুক্রবার) শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন রাষ্ট্র নায়ককে বরণ করতে ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। গানের মধ্য দিয়ে শপথ পর্ব শুরু হবে। ‘মবট্যাব কয়ার’ দলের সঙ্গে মার্কিন জাতীয় সঙ্গীত গাইবেন ১৬ বছর বয়সী যুক্তরাষ্ট্রের গট ট্যালেন্টসে’র জ্যাকি ইভানকা। এরই মধ্যে অনুশীলন শেষ করেছেন এই কিশোরী। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দেবেন প্রায় নয় লাখ মানুষ। যাতে সপরিবারে থাকবেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস  প্রেসিডেন্টদের অনেকে। প্রথা অনুযায়ী ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানাবেন বারাক ওবামা ও মিশেল।
বিশাল এই আয়োজন ঘিরে নিরাপত্তায় কোনো কমতি রাখছে না মার্কিন প্রশাসন। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতেই মোতায়েন থাকছে ২৮ হাজার পুলিশসহ নিরাপত্তাকর্মী।
সুদীর্ঘ ছয় দশকের রীতি ভেঙে চার্লি ব্রোটম্যানকে বাদ দিয়ে স্টিভ রে-কে অভিষেক অনুষ্ঠানের ঘোষক বানিয়েছেন ট্রাম্প। প্যারেডে যোগ দিচ্ছে আলাবামার ঐতিহ্যবাহী তালাডেগা কলেজ। পারফর্ম করবেন মর্মন কয়ার, দ্য রকেটস, টর্নেডো ম্যাচিং ব্র্যান্ড, দ্য পিয়ানো গাইস-সহ প্রায় ৪০টি দল।
শপথের পর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন নতুন কমান্ডার ইন চিফ। আর পুরো অনুষ্ঠান তদারকিতে থাকছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস।
চলতি বছর ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ধনকুবের ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই দফা মেয়াদ শেষ হয়েছে। ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন ওবামা। ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বরণ করে নিতে ইতোমধ্যেই হোয়াইট হাউসে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
ট্রাম্পের শপথ এবং ক্ষমতা গ্রহণের সেই মুহূর্ত দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে পুরো বিশ্ব। গত বছরের নভেম্বরের ৮ তারিখে মার্কিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় শপথ নেবেন ট্রাম্প। শপথ অনুষ্ঠান তদারকি করবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। শপথ নেয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ট্রাম্প। বারাক ওবামাসহ সাবেক বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্ট এবং তাদের পরিবারের লোকজন ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তবে অনুষ্ঠান বর্জনের তালিকাও কম দীর্ঘ নয়। ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতা তো আছেনই, বেশ কয়েকজন রিপাবলিকানও ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সংখ্যাটা ৬০ জনের। আর রিচার্ড নিক্সনের শপথ অনুষ্ঠান বর্জনকারী কংগ্রেসম্যানদের সংখ্যা ছিল ৮০। শপথের দিনে বিক্ষোভে রাজপথেও নামবেন ট্রাম্প বিরোধীরা। যাতে নাম লিখিয়েছেন, হলিউড তারকা, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার হাজারো মানুষ। শপথ চলাকালে দেশের বিভিন্ন শহরে মানবাধিকার কর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন। এ জন্য প্রচার-প্রচারণাও চলছে যুক্তরাষ্ট্রের সেসব শহরে। যাকে নজিরবিহীন বলছেন মার্কিনিরা। এছাড়া, সবচেয়ে কম জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিচ্ছেন ট্রাম্প।
‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের থেকে অন্যান্য জনগোষ্ঠীকে পৃথক করে বিভক্তির সূত্রকে সামনে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। হতে পেরেছিলেন প্রেসিডেন্ট। তার সেই ‘বিভক্তি’র শপথের বিরুদ্ধেই ঐক্যবদ্ধ আমেরিকার পক্ষে নামবেন প্রতিবাদীরা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের শপথে যতো মানুষ অংশ নেবেন তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ থাকবেন ট্রামবিরোধী প্রতিবাদে। ‘বিভক্তি আমেরিকার শপথ’ কে ঐক্যবদ্ধ আমেরিকার প্রতিবাদ দিয়ে রুখে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তারা। মার্কিন শিল্পী সমাজের একটা বড় অংশ প্রত্যাখ্যান করেছেন ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠান। সংবাদমাধ্যমের আভাস অনুযায়ী ওবামার শপথ অনুষ্ঠানে যেখানে ১ কোটিরও বেশি মানুষের জমায়েত ছিল, ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আজ যোগ দিতে পারেন ৮ থেকে ৯ লাখ মানুষ। সবমিলে ট্রাম্পের শপথের দিনটি অতীতের মার্কিন প্রেসিডেন্টদের শপথ অনুষ্ঠানের মতো হচ্ছে না। জমায়েতের সীমাবদ্ধতা  আর প্রতিবাদের ব্যপ্তীর কারণেই তা স্বতন্ত্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত জন লুইসকে নিয়ে করা ট্রাম্পের এক মন্তব্যের পর আরও জোরালো হয় তার বিরোধিতা। নির্বাচনে ‘রুশ হস্তক্ষেপের’ কথা উল্লেখ করে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ‘বৈধতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন লুইস। মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসি নিউজ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডেমোক্র্যাট নেতা জন লুইস বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত এই ব্যক্তিকে আমি যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ প্রেসিডেন্ট বলে মনে করি না।’  জন লুইস বলেন, ‘যাকে ভুল বলে মনে করেন, এমন কারও সঙ্গে আপনি এক ঘরে থাকতে পারেন না।’ তিনি ‘এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে’ উল্লেখ করে, ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকারও ঘোষণা দেন।
লুইস ছিলেন মার্কিন অধিকার আন্দোলনের ‘আইকন’ মার্টিন লুথার কিং-এর অন্যতম সহযোগী। ১৯৬৫ সালে অ্যালাবামার সেলমায় যে সমাবেশে কিং পুলিশি হামলার শিকার হন, সেখানে বক্তব্য রাখা একমাত্র জীবিত ব্যক্তি তিনি। লুইসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় টুইটারে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘কংগ্রেস সদস্য জন লুইসের উচিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অভিযোগ না করে তার নিজ নির্বাচনি এলাকার দিকে নজর দেওয়া। শুধু কথা, কথা, কথা - না কোনও পদক্ষেপ, না ফলাফল। দুঃখজনক!’ এই বিতর্কিত প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে ট্রাম্পকে।
বিভিন্ন জনমত জরিপ বলছে, মার্কিনিদের কাছে ট্রাম্পের গ্রহনযোগ্যতা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গ্রহণযোগ্যতার চেয়ে অর্ধেকেরও কম। সিএনএন এবং ওয়াশিংটন পোস্টের আলাদা আলাদা জরিপে ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ জরিপগুলোতে বলা হয়েছে, জনগণের কাছে ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতা মাত্র ৪০ শতাংশ যেখানে ২০০৯ সালে বারাক ওবামার গ্রহণযোগ্যতা ৮৪ শতাংশ ছিল। মনমাউথের জরিপের ফলাফল আরও ভয়াবহ। এ জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতা মাত্র ৩৪ শতাংশ।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম হেরাল্ড জানিয়েছে, আজ ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পার্কিং এর জন্য প্রতি একটি বাসের নিবন্ধনের বিপরীতে আগামীকালের বিক্ষোভ কর্মসূচির জন্য নিবন্ধিত হয়েছে চারটিরও বেশি বাস। ট্রাম্পবিরোধী ওই সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের যোগদানের কথা রয়েছে। বাস পার্কিং-এর হিসেব অনুযায়ী, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য নিবন্ধন করেছে ৪০০টি বাস আর বিক্ষোভের দিনের জন্য নিবন্ধন করেছে ১৮০০টি বাস। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের অনুমতি চেয়েছে ৩০টিরও বেশি সংগঠন।
ওয়াশিংটন হোটেলগুলোতে আগে যারা ন্যুনতম চার রাতের জন্য বুকিং দিয়েছিলেন তা কমিয়ে দুই রাত করা হয়েছে। অনেকগুলো হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তাদের হোটেলগুলোর মাত্র অর্ধেকের বুকিং হয়েছে। এমনকি কয়েকজন সেলিব্রিটি যাদের মূলত তিন দিন ধরে শপথগ্রহণজনিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশনার কথা ছিল, সেগুলো বাতিল করা হচ্ছে। এলটন জন, সেলিন ডিওন এবং রক ব্যান্ড কিস জানিয়েছে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ওয়েলস এর শিল্পী শার্লট্টে চার্চ মঙ্গলবার ট্রাম্পের প্রতি করা এক টুইটে বলেন, ‘আমাকে আপনার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিন্তু ইন্টারনেটে সামান্য একটা সার্চই বলে দিচ্ছে আপনি অত্যাচারী।’
ব্রিটিশ পারফর্মার রেবেকা ফার্গুসনও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি এক্ষেত্রে একটি শর্ত বেঁধে দিয়েছেন। বলেছেন, বর্ণবাদবিরোধী এবং আফ্রিকান আমেরিকানদের নির্যাতনবিরোধী ‘বিলি হলিডে’স স্ট্রেঞ্জ ফ্রুট’ শিরোনামের প্রতিবাদী গানটি যদি তাকে গাইতে দেওয়া হয় তবেই কেবল তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র তিন দিনের উৎসব উদযাপনের জন্য ট্রাম্প রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ৯০ মিলিয়ন ইউএস ডলার কর্পোরেট অনুদান পেয়েছেন। তার পূর্বসূরীরা ৫ দিনের জন্য এমন অনুদান পেয়েছিলেন। সূত্র : ওয়েবসাইট



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২০ জানুয়ারি, ২০১৭, ৭:১৩ এএম says : 0
    আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শফতের মধ্যমে হতে যাচ্ছেন ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারের শুরুতেই মুসলিম বিদ্বেষী এবং একজন কট্টর বর্নবাদী হিসাবে নিজেকে পরিচিতি করিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। আমি বিশ্বাস করি এটা ছিল তার নির্বাচন জয়ের একটা চাল কিন্তু সে একজন বিজ্ঞ ব্যাবসায়ি তিনি জানেন কি করলে এবং কোন ধরনের চালবাজি করে পয়সা উপার্জন করা যায়। তিনি ব্যবসায়ী হিসাবে সবসময়ই বিজয়ী হয়েছেন তাই তিনি দেখিয়েদিলেন একজন ব্যবসায়ী চাইলে কিনা করতে পারে। যাইহোক বিশ্বের কল্যাণের জন্য এখন আমাদের উচিৎ ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য মহান আল্লাহ্‌তালার নিকট প্রার্থনা করা আল্লাহ্‌ যেন ট্রাম্পকে সুবুদ্ধি দান করেন এবং বিশ্ববাসীর মঙ্গলের চিন্তা করেন। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্রের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ