Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্চশিক্ষার হালচাল ব্যবসায় মন্ত্রী-এমপিরা

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

৫ বছরে অনুমোদন পেয়েছে ৪১ : নতুন হচ্ছে আরও ১৭ : মন্ত্রী-এমপিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক : রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেলে শিক্ষার মান কখনই বাড়বে না -শিক্ষাবিদগণ
ফারুক হোসাইন : দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু সে শিক্ষা হওয়া চাই মানসম্পন্ন। দেশে প্রতি বছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন-পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ না থাকায় ‘শিক্ষা ব্যবস্থা’ নিয়েই উঠেছে হাজারো প্রশ্ন। হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাইনবোর্ডসর্বস্ব ‘সার্টিফিকেট বিক্রির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত হয়েছে। দেশে ২০১১ সাল পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৪৪টি। গত ৫ বছরে নতুন প্রায় ৪১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আরো ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে অনুমোদনের অপেক্ষায়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশেরই নামে-বেনামে মালিক সরকারের মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের হুইপ, সাবেক ও বর্তমান এমপিরা। মন্ত্রী-এমপিদের ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার’ দিকে মনোনিবেশ করায় শিক্ষাবিদরা বলতে শুরু করেছেন রাজনীতিকরা জনসেবার বদলে ‘শিক্ষা বাণিজ্যের’ দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদগণ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘শিক্ষার মান’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা?
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক কিংবা গলি পথে কয়েকটি রুম ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম। এসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে। নিজস্ব জমি নেই, নেই পূর্ণকালীন শিক্ষক (প্রফেসর, সহযোগী অধ্যাপক), পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি ও গবেষণা খাতে ব্যয়। যেখানে আগে অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরই বেহলা দশা সেখানে প্রতি বছরই নতুন করে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ এই ৫ বছরেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৪১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন বছরের শুরুতেই অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও ১৭টি। এর মধ্যে প্রকাশ্যে পিএইচডি ডিগ্রির সার্টিফিকেট বিক্রিকারী একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়ায় ৯৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে নতুন ১৭টি অনুমোদন পেলে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১১২টিতে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, যেভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে তাতে এক সময় হয়তো বাড়ি বাড়িই বিশ্ববিদ্যালয় দেখা যাবে। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ¯œাতকদের শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত নয় বলে স্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত কারিকুলাম প্রণয়ন, আধুনিক গবেষণাগার, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, লিখিত ও মৌখিকভাবে নিজস্ব চিন্তা উপস্থাপন এবং তথ্য-প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জনের জন্য কারিকুলামে প্রয়োজনীয় উপাদান সংযোজন করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।     
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতির জন্য অবশ্যই অনূর্ধ্ব ২১ এবং অন্যূন ৯ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করতে হবে। প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগ, প্রোগ্রাম ও কোর্সের জন্য কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। ২৫ হাজার বর্গফুট নিজস্ব অথবা ভাড়া ভবনে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, সেমিনার, অফিস, শিক্ষার্থীদের পৃথক কমন রুম এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কক্ষের জন্য পর্যাপ্ত স্থান ও অবকাঠামো থাকবে। অস্থায়ী ভবনে বা ভাড়াকৃত ভবনে স্থাপিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিষ্ঠার তারিখ হতে সাত বছরের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এক একর এবং অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে দুই একর জমিতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো স্থায়ীভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাস স্থাপন করতে হবে। ১৯৯২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ২০ বছরে যেখানে ৪৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়, সেখানে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল এই ৫ বছরেই অনুমোদন দেয়া হয় ৪১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে ২০১২ সালে অনুমোদন দেয়া হয় ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৩ সালে পায় ১০টি, ২০১৪ সালে ২টি, ২০১৫ সালে ৩টি, ২০১৬ সালে ১০টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পায়।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান যাই হোক না কেন প্রতি বছরই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ছে। তবে ব্যয়ের হিসাব বিপুল পরিমাণ দেখানো হলেও শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়ন, ভৌত কাঠামো, লাইব্রেরি ও
ল্যাবরেটরির উন্নয়ন এবং গবেষণা খাতে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যয় করছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ আছে, আয়ের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে। বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাধ্যবাধকতা না মেনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর স্থায়ী ক্যাম্পাস ও নিজস্ব জমির বাধ্যবাধকতা থাকলেও মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, ১৮টি আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে, ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ফাউন্ডেশনের জমিতে পরিচালনার করছে। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো ভাড়া ভবনে। সাত বছরের শর্ত থাকলেও প্রতিষ্ঠার অন্তত ১২ বছর অতিক্রম হয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশই শর্ত পূরণ করেনি। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সিটি ইউনিভার্সিটির নিজস্ব জমির পরিমাণ ৫৭৭ শতাংশ, শান্তা-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির জমি ৫৬৬ শতাংশ, স্টেট ইউনিভার্সিটির ৮ কাঠা, উত্তরা ইউনিভার্সিটির ১৩৯ শতাংশ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ৩৩ শতাংশ, পিপলস ইউনিভার্সিটির ৫০ হাজার বর্গফুট, অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ১০০ শতাংশ, প্রাইম ইউনিভার্সিটির ৫৭ শতাংশ, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির ২ বিঘা জমির হিসাব দিয়েছে মঞ্জুরি কমিশনে। এছাড়া ২০১১ সালের পর প্রতিষ্ঠা পাওয়া বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এখনো নিজস্ব জমিই দেখাতে পারেনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত পূর্ণকালীন শিক্ষকের কথা বলা হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষকের চেয়ে খ-কালীন প্রফেসর ও সহযোগী অধ্যাপকের সংখ্যাই দ্বিগুণ। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন প্রফেসরও পাওয়া যায় না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ তিনটি পদেই ফাঁকা রয়েছে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইউজিসি’র তথ্য অনুযায়ী ৪১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, ৭৪টিতে প্রো-ভিসি ও ৫২টিতে ট্রেজারার নেই। তিনটি পদই ফাঁকা ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের খুশি করার জন্য নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সরকারের উচিত শিক্ষার উপর জরিপ চালিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া। এভাবে অনুমোদন দিতে থাকলে শিক্ষা ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। কিন্তু দেশের শিক্ষার মানের উন্নয়ন হবে না। তিনি আরো বলেন, দেশে যে ১০-১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করছে, সেগুলো বাদে বাকিগুলোর উন্নয়নের জন্য সরকারের কাজ করা উচিত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ বন্ধ না হলে শিক্ষা এমনই থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপ কমানোর জন্য বিএনপির সময় প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে অনুমোদন পেতে থাকে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা বলেছিল নতুন করে আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ানো হবে না। কিন্তু তারাও একইভাবে অনুমোদন দিচ্ছে। এতে শিক্ষার মান বাড়বে না বরং আরো খারাপের দিকে যাবে।
অনুমোদন পাচ্ছে ১৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা নতুন করে আরও ১৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পাচ্ছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে হবে চারটি। বাকিগুলো রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থাপন করা হবে। নতুন করে রাজধানীতে আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন না দিতে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও কয়েক দফায় ইতোমধ্যে ঢাকায় ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা যায়, সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপি ও রাজনৈতিক নেতারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আবেদন করেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনকারীদের নামে নতুন আরও ১৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে আটটির পরিদর্শন প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি। নতুন ১৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মহাখালীতে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি’। এটি প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম মোশাররফ হুসেইনের নামে অনুমোদন পাবে। রাজধানীর বনানীর আই ব্লকে ‘ইউনিভার্সিটি অব মডার্ন টেকনোলজি’র উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী মো. আবু নোমান হাওলাদারকে প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান দেখানো হলেও নেপথ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। ‘ইন্টারন্যাশনাল কালচার ইউনিভার্সিটি’র ঠিকানা কুমিল্লায় দেয়া হলেও পরে ঢাকায় মিরপুর গাবতলীতে পরিবর্তন করা হয়েছে। এটির উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসায়ী সুলতান রাজ্জাকের নাম দেখানো হলেও এর নেপথ্যে ঢাকা-১৪ আসনের এমপি আসলামুল হক আসলাম রয়েছেন। যদিও ইতোমধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ৩ লাখ টাকায় পিএইচডি ও দুই লাখ টাকায় এমফিল ডিগ্রি বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিগ্রি বিক্রির বিষয়ে ইউজিসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেছিলেন, এখন বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে কিছু এলাকায় পিএইচডির নামে ভুয়া ডিগ্রি বিক্রি করছে। এসব তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের অধীনে না তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। ‘সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’, মিরপুর-১০ সেনপাড়া পর্বতায় ঠিকানা দেয়া হয়েছে। এর উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় পার্টির সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাবেক এমপি ও হুইপ এইচ এম গোলাম রেজা। কেরানীগঞ্জে ‘টেগার ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ আটাস’-এর উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে স্থাপিত হবে ‘ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সাইন্স’-এর ব্যবসায়ী জুবাইদুল রহমান। ‘কামাল উদ্দিন আহমেদ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-এর উদ্যোক্তা গুলশান নিকেতনের নিবাসী কামরুন নেসা রতœার নাম থাকলেও মূলত ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারই পাচ্ছেন। পটুয়াখালীর লাউকাঠিতে ‘সাউথ রীজন ইউনিভার্সিটি’র উদ্যোক্তা জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। সিলেটের টিবি গেট এলাকায় স্থাপিত হবে ‘আর টি এম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি’। এটিতে ‘আর টি এম কমপ্লেক্সের’ মালিক আহমদ আল কবির ও যুবলীগ (ঢাকা মহানগর উত্তর) সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল রয়েছেন। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্ঘনায়ক শ্রদ্ধানন্দ মহাথের প্রেসিডেন্ট এইচ এন ভেন পাবেন ‘ইউনিভার্সিটি অব অতীশ দীপঙ্কর’। মুন্সিগঞ্জের বাজরাগজনিতে এর ঠিকানা দেয়া হয়েছে। ‘খুলনা খান বাহাদুর আহসানউল্লা ইউনিভার্সিটি’ হবে খুলনার সোনাডাঙ্গায়। এর উদ্যোক্তা ঢাকা আহছানিয়া মিশন এবং ইউরোপিয়ান কেস স্টাডি সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান। চাঁদপুরে ‘অ্যাপোলো ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র উদ্যোক্তা চাঁদপুর-৪ আসনের এমপি শামসুল হক ভূঁইয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাতশালায় ‘ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র উদ্যোক্তা প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের এমপি আ ম উবাইদুল মোক্তাদির চৌধুরী। রংপুরে জাতীয় পার্টির নেতা মোস্তফা আজাদ চৌধুরী পাচ্ছেন ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যলয়’। রংপুর মিঠাপুকুরে ‘নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি’র উদ্যোক্তা রংপুরের স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আশরাফুল আলম আল-আমিন। ময়মনসিংহের ক্রিস্টাপুরে ‘রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’র উদ্যোক্তা বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের নাম দেয়া হলেও ব্যবসায়ী ও বন্ধ হওয়া দারুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরা ক্যাম্পাসের মালিক আবুল হোসেন প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।
এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুল মান্নান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনার আশায় আমরা ১৭টির মধ্যে আটটির পরিদর্শন কাজ শেষ করেছি। ইতোমধ্যে সেসব প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন ঠিকানা ও নানা ভুল-ভ্রান্তি থাকায় বাকিগুলোর পরিদর্শন কাজ এখনো শেষ করা সম্ভব হয়নি। বিষয়গুলো সংশোধন করে পাঠানো হলে পর্যায়ক্রমে সব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।



 

Show all comments
  • মুরতজা আহমেদ ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৯:১৭ এএম says : 0
    শিক্ষাকে দয়া করে ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত করবেন না।
    Total Reply(0) Reply
  • আবির ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৪:১৪ পিএম says : 0
    শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিক্ষার মানের প্রতি আরো অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Sofiq ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৪:১৫ পিএম says : 0
    ai news ti korar jonno Inqilab & Faruk Hossain ke onek donnobad
    Total Reply(0) Reply
  • Jesmin ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৪:১৭ পিএম says : 0
    বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ বন্ধ না হলে শিক্ষা এমনই থাকবে
    Total Reply(0) Reply
  • লোকমান ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৪:২১ পিএম says : 0
    এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার চেয়ে ব্যবসাটা বেশি দেখা হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • ফারজানা শারমিন ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৪:২৩ পিএম says : 0
    দেশে যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করছে, সেগুলো বাদে বাকিগুলোর উন্নয়নের জন্য সরকারকে কঠোর হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • শাহে আলম ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৪:২৪ পিএম says : 0
    সব ক্ষেত্রে রানৈতিক বিবেচনা না করাটাই মনে হয় দেশের জন্য কল্যাণকর হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Asif ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৪:২৫ পিএম says : 0
    avabe cholte dea konovabe e thik noy.....
    Total Reply(0) Reply
  • তাজুল ইসলাম ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৪:২৬ পিএম says : 0
    আশা করি এই নিউজের পর সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়গুলো আমলে নিবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মাঈনুল ইসলাম ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৪:২৮ পিএম says : 0
    শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত কারিকুলাম প্রণয়ন, আধুনিক গবেষণাগার, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, লিখিত ও মৌখিকভাবে নিজস্ব চিন্তা উপস্থাপন এবং তথ্য-প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জনের জন্য কারিকুলামে প্রয়োজনীয় উপাদান সংযোজন করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাধ্য করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ